রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ ।। ৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :

মুমিনের সফল জীবন‌

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| নাজমুল হুদা মজনু ||

মানুষের জীবনের সফলতার মানদণ্ড কী; এ কথার উত্তরে ৯৯ শতাংশ হয়তোবা বলবেন প্রাচুর্যের কথা। তাই সম্পদ অর্জনে চলে মানুষের হরদম হা হুতাশ। আর এ জন্য নিরন্তর দৌড়ঝাঁপে অস্থির হয়ে ক্লান্তি-শ্রান্তি অতঃপর বিস্বাদ বিষণ্ণতা। সুখের অন্বেষণে অসুখের আগমনে অনেকের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার অমানিশা। উল্লিখিত সবধরনের সমস্যা-সঙ্কট  থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে অব্যর্থ ওষুধ হলো মহীয়ান-গরিয়ান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পাঠানো বাণী আল কুরআন। আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারিমে বলেন, যে ব্যক্তি (হেদায়াতের আলোকে নিজের জীবন) পরিশুদ্ধ করে নিয়েছে, সে অবশ্যই সফলকাম হয়েছে,
সে নিজের মালিকের নাম স্মরণ করলো অতঃপর নামাজ আদায় করলো। (আল-আলা : ১৪-১৫)

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন-
নিঃসন্দেহে মানুষের মধ্যে সে-ই সফলকাম যে তাকে পরিশুদ্ধ করেছে,
আর যে তাকে কলুষিত  করেছে সে ব্যর্থ হয়েছে,(আশ-শামস : ৯-১০)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার মহা নিদর্শন মহাবিশ্বে মানুষের জন্য দিন এবং রাত সৃষ্টি করেছেন যেন তারা এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে।

আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারিমে মানুষের  চিন্তাচেতনার বিকাশের মাধ্যমে শিক্ষা দেন যে,
এরা কি দেখেনি, আমি রাতকে এ জন্যই তৈরি করেছি যেন তারা তাতে বিশ্রাম করতে পারে, (অপর দিকে জীবিকার প্রয়ােজনে) দিনকে বানিয়েছি আলােকোজ্জ্বল; অবশ্যই এর (দিবারাত্রির পার্থক্যের) মাঝে তাদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে, যা দ্বারা আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান আনে। (আন্‌-নামল : ৮৬)
সাধারণ মানুষ তো বটেই এমনকি আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত নবী-রাসূলরাও দুনিয়ার জমিনে বিভিন্ন রকমের পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন। ক্ষুধা তৃষ্ণা সমস্যা সংকট বিপদ মুসিবত দিয়ে তাদের ঈমানকে মজবুতি দান করেছেন আল্লাহ জাল্লা শানুহু।
আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবন চরিত কমবেশি সবাই জানি। তার ৬৩  বছরের জিন্দেগির আদ্যোপান্ত ইতিহাস আমাদের চলার পথের মূ্ল্যবান পাথেয়।

তার ওপর ঈমান আনা  অত্যাবশ্যক। পাশাপাশি আল্লাহ তায়ালা প্রেরিত অন্যান্য নবীর প্রতি ঈমান আনাও মুমিনের কর্তব্য। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পরম সত্তার সাথে বাক্যবিনিময়কারী নবী মূসা কালিমুল্লাহর একটি কাহিনী কুরআন মাজিদে বর্ণিত হয়েছে। বানি ইসরাইলের নবী মূসা আলাইহিস সালাম অত্যাচারী ফের‌আউনের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য মাদইয়ানের দিকে রওনা হলেন। এর পরের ঘটনা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন মাজিদে বর্ণনা করেছেন।
(এর কিছুক্ষণ পরই) এক ব্যক্তি নগরীর (আরেক) প্রান্ত থেকে দৌড়ে এসে বললো, হে মূসা (আমি এই মাত্র শুনে এলাম), ফেরাউনের দরবারিরা তােমাকে হত্যা করার ব্যাপারে পরামর্শ করছে, অতএব তুমি এক্ষুণি (শহর থেকে) বের হয়ে যাও, আমি হচ্ছি তোমার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী (বন্ধু)!(আল-ক্বাসাস : ২০)

চলার পথে ঘটনাচক্রে নিয়ামতপ্রাপ্তির এক‌ আলামতের দেখা মিলল।  অবশেষে যখন সে মাদইয়ানের (একটি) পানির (কূপের) কাছে পৌঁছলাে, তখন দেখলাে তার পাশে অনেক মানুষ, তারা (পশুদের) পানি পান করাচ্ছে এবং তাদের অদূরে সে দু'জন রমণীকে দেখতে পেলাে, যারা (নিজ নিজ পশুদের) আগলে রাখছে, সে (তাদের) জিজ্ঞেস করলাে, তােমাদের কী হলাে (তােমরা পশুদের পানি খাওয়াচ্ছাে না)? তারা বললো, আমরা (পশুদের) পানি খাওয়াতে পারবাে না, যতক্ষণ না এ রাখালরা (তাদের পশুদের) সরিয়ে না নিয়ে যায় এবং আমাদের পিতা একজন বৃদ্ধ মানুষ বলে আমরা পশুদের পানি খাওয়াতে নিয়ে এসেছি।

(এ কথা শােনার পর) সে ওদের (পশুগুলোকে) পানি খাইয়ে দিলাে, তারপর (সরে) একটি (গাছের) ছায়ার দিকে গেল এবং (আল্লাহকে) বললো, হে আমার মালিক, (এ মুহূর্তে) তুমি (নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে) যে নেয়ামতই আমার ওপর নাজিল করবে, আমি একান্তভাবে তারই মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবো।
(আল্লাহ তায়ালার নেয়ামত আসতে দেরি হলো না, মূসা দেখতে পেলাে) সেই দুই রমণীর একজন লজ্জা জড়ানাে অবস্থায় তার কাছে এলাে এবং বললাে, আমার পিতা তােমাকে তার কাছে ডেকেছেন, তুমি যে আমাদের (পশুগুলােকে) পানি খাইয়ে দিয়েছিলে তার জন্য তিনি তােমাকে কিছু পারিশ্রমিক দিতে চান; অতঃপর সে তার কথামতাে তার (পিতার) কাছে এলাে এবং (নিজের) কাহিনী তার কাছে বর্ণনা করলাে, (সব শুনে) সে (মূসাকে) বললাে, তুমি কোনাে ভয় করাে না। (এখন) তুমি জালেমদের কাছ থেকে বেঁচে গেছো।

সে দু'জন (রমণীর) একজন তার (পিতাকে) বললাে, হে (আমার) পিতা একে বরং তুমি (তোমার) কাজে নিয়ােগ করাে, কেননা তােমার মজুর হিসেবে সে (ব্যক্তিই) উত্তম (বলে প্রমাণিত) হবে, যে হবে (শারীরিক দিক থেকে) শক্তিশালী এবং (চরিত্রের দিক থেকে) বিশ্বস্ত।
(এরপর রমণীদের) পিতা (তাকে) বললাে, আমি আমার এ দুই মেয়ের একজনকে তােমার সাথে বিয়ে দিতে চাই, (তবে তা হবে) এ কথার ওপর, তুমি আট বছর আমার কাজ করবে, যদি তুমি (আট বছরের জায়গায়) দশ বছর পুরাে করতে চাও, তবে তা হবে একান্ত তোমার ব্যাপার, আমি তােমার ওপর কোনাে কষ্টের (শর্ত) আরােপ করতে চাই না; আল্লাহ তায়ালা চাইলে তুমি আমাকে সদাচারী ব্যক্তি হিসেবেই দেখতে পাবে।

সে (এতেই রাজি হলাে এবং) বললাে (ঠিক আছে), আমার এবং আপনার মাঝে এ চুক্তিই (পাকা হয়ে) থাকলাে; আপনার দেয়া দু'টি মেয়াদের যেকোনাে একটি যদি আমি পূরণ করি, তাহলে (আপনার পক্ষ থেকে) আমার ওপর কোনাে বাড়াবাড়ি করা হবে না (এ নিশ্চয়তাটুকু আমি চাই); আমাদের এ কাজের ওপর আল্লাহ তায়ালাই সাক্ষী (হয়ে থাকলেন)।
অতঃপর মূসা যখন (তার চুক্তিবদ্ধ) মেয়াদ পূর্ণ করে নিলাে, তখন সপরিবারে (নিজ দেশের দিকে রওনা করলাে, যখন সে তুর পাহাড়ের পাশে আগুন দেখতে পেলো, তখন সে তার পরিবারের লােকদের বললাে, তােমরা (এখানেই) অপেক্ষা করো, আমি আগুন দেখতে পেয়েছি, সম্ভবত আমি সেখান থেকে (রাস্তাঘাট সম্পর্কিত) কোনাে খোঁজখবর নিয়ে আসতে পারবাে, আর তা না হলে (কমপক্ষে) জ্বলন্ত আগুনের কিছু টুকরাে তাে নিয়ে আসতেই পারি, যাতে তােমরা আগুন পােহাতে পারবে।

যখন সে আগুনের কাছে পৌঁছালাে, তখন উপত্যকার ডান পাশের পবিত্র ভূমিস্থিত একটি গাছ থেকে (গায়বি) আওয়াজ এলো, হে মূসা, আমিই আল্লাহ সৃষ্টিকুলের একমাত্র মালিক,
(তাকে আরাে বলা হলাে,) তুমি তােমার হাতের লাঠিটি জমিনে নিক্ষেপ করো; যখন সে তাকে দেখলাে, তা (জীবন্ত) সাপের মতােই ছোটাছুটি করছে, তখন সে উল্টো দিকে ছুটতে লাগলো, পেছনের দিকে
তাকিয়েও দেখলাে না; (তার প্রতি তখন আদেশ করা হলো, হে মূসা, তুমি এগিয়ে এসাে, ভয় পেয়াে না। তুমি হচ্ছো নিরাপদ মানুষেরই একজন।
তুমি তােমার হাত তােমার (বুক) পকেটের ভেতরে রাখাে (দেখবে), কোনাে রকম অসুস্থতা ছাড়াই তা উজ্জ্বল হয়ে বেরিয়ে আসছে, (মন থেকে) ভয় (দূরীভূত) করার জন্য তােমার হাতের বাজু তােমার (বুকের) সাথে মিলিয়ে রাখো, এ হচ্ছে ফেরাউন ও তার দলীয় প্রধানদের কাছে তােমার মালিকের পক্ষ থেকে (নবুওতের) দুটো প্রমাণ; সত্যিই তারা এক গুনাহগার জাতি। (আল-ক্বাসাস : ২৩-৩২)

নবী-রাসূলদের বর্ণাঢ্য হায়াতকালে হাজারো নেয়ামতে পরিপূর্ণ সময় যেমন অতিবাহিত হয়েছে তেমনি দুঃখ-কষ্ট আর অবিরাম অগণিত পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন তারা। তাই যেকোনো প্রতিকূল অবস্থায় ধৈর্য ধারণ করা মুমিনের বড় বৈশিষ্ট্য। একটি প্রবাদ আছে— শেষ ভালো যার সব ভালো তার। তাই তো আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআনুল কারিমে  আশার বাণী বর্ণনা করে বলেন, অবশ্যই তোমার পরবর্তীকাল আগের চেয়ে উত্তম। (আদ-দুহা : ৪)

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি অবতীর্ণ বিশ্ববাসীর হেদায়াতের সনদ কুর‌আন মাজিদে দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরো বলেন, (এই) সেই (মহা) গ্রন্থ (আল কুরআন), তাতে (কোনো) সন্দেহ নেই, যারা (আল্লাহ তায়ালাকে) ভয় করে, (এই কেতাব কেবল) তাদের জন্যই পথপ্রদর্শক,
যারা না দেখে (আল্লাহ তায়ালাকে) বিশ্বাস করে, যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, তাদের আমি যা কিছু দান করেছি তারা তা থেকে (আমারই নিদের্শিত পথে) ব্যয় করে,
(সত্যিকার অর্থে) এ লোকগুলোই তাদের মালিকের (দেখানো) সঠিক পথের ওপর রয়েছে এবং এরাই হচ্ছে সফলকাম। (আল-বাকারাহ :২-৫)

লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক

এনএ/

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ