শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের বিকল্প নেই: তারেক রহমান জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হলেন শায়খ মাওলানা আবদুর রহীম ইসলামাবাদী কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন আগামীকাল মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে চরমোনাই পীরের শোক প্রকাশ জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী রহ.-এর বর্ণাঢ্য জীবন কওমি সনদকে কার্যকরী করতে ছাত্রদল ভূমিকা রাখবে: নাছির বড় ব্যবধানে জিতে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে যাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা আইফোনে ‘টাইপ টু সিরি’ ফিচার যেভাবে ব্যবহার করবেন  স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা আল্লাহকে পেতে হলে রাসূলের অনুসরণ অপরিহার্য: কবি রুহুল আমিন খান

জুমার দিনের বিশেষ আমল সমূহ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ফাইল ছবি

জুমার দিন শ্রেষ্ঠ দিন। সপ্তাহের ঈদের দিন। ইসলামে এ দিনের মর্যাদা রয়েছে। সব দিনের মধ্যে জুমাবারকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। কুরআন ও হাদিসে এ দিনের বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার কথা বলা হয়েছে।

হজরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা আগের জাতিগুলোর কাছে জুমার মর্যাদা অজ্ঞাত রাখেন। তাই ইহুদিরা শনিবার নির্ধারণ করে। আর খ্রিস্টানরা রবিবার নির্ধারণ করে। অতঃপর আমরা আসি। আমাদের কাছে তিনি জুমার দিনের মর্যাদা প্রকাশ করেন।’ (মুসলিম, হাদিস ৮৫৬)

জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল
 

জুমার নামাজ
হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান মধ্যবর্তী সময়ের পাপ মোচন করে; যদি সেই ব্যক্তি সব ধরনের কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে।’ (মুসলিম হাদিস ২৩৩)

হজরত সালমান ফারসি রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্র হলো, তেল ব্যবহার করল, ঘর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করল, অতঃপর মসজিদে এলো, সেখানে দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে এগিয়ে যায় না, নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ল, অতঃপর ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকল; তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করবেন।’ (বোখারি, হাদিস ৮৮৩)
 
জুমার দিন গোসল করা
জুমার দিন গোসল করার অনেক ফজিলত রয়েছে। গোসল করে সবার আগে মসজিদে যাওয়া সওয়াবের। হজরদ আউস বিন আউস সাকাফি রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ভালো করে গোসল করল, দ্রুততর সময়ে মসজিদে গেল ও (ইমামের) কাছাকাছি বসে মনোযোগসহ (খুতবা) শুনল, তার জন্য প্রতি কদমের বদলে এক বছরের রোজা ও নামাজের সওয়াব থাকবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস ৩৪৫)
 
সবার আগে মসজিদে যাওয়া
শুক্রবারে জুমার নামাজের জন্য মসজিদে আগে প্রবেশ করার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। রাসুল সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে প্রথমে মসজিদে গেল সে যেন একটি উট কোরবানি করল। যে এরপর মসজিদে গেল, সে যেন একটি গরু কোরবানি করল। আর যে এরপর ঢুকল, সে যেন ছাগল কোরবানি করল, এরপর যে ঢুকল সে যেন মুরগি কোরবানি করল, আর যে এরপর ঢুকল সে ডিম সদকা করল। অতঃপর ইমাম খুতবার জন্য এলে ফেরেশতারা আলোচনা শোনা শুরু করে।’ (বোখারি, হাদিস ৮৪১)
 
জুমার দিন দোয়া কবুল হয়
জুমার দিন একটি সময় আছে, যখন মানুষ আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। হজরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেন, ‘জুমার দিন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে ভালো কিছুর দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তা দেন। তোমরা সময়টি আছরের পর অনুসন্ধান কোরো।’ (আবু দাউদ ১০৪৮)
 
হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত অন্য আরেকটি হাদিসে রাসুল সা. বলেছেন, ‘জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোনো মুসলিম এ সময় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে দান করেন। এই মুহূর্তটি তোমরা আছরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান কোরো। (আবু দাউদ  ১০৪৮)
 
সুরা কাহাফ এর ফজিলত
জুমার অন্যতম আমল সুরা কাহাফ পাঠ করা। হজরত আবু সাইদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে তা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলোকিত হয়ে থাকবে। আর যে ব্যক্তি এই সুরার শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে অতঃপর দাজ্জাল বের হলে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। যে ব্যক্তি অজুর পর এই দোয়া পড়বে তার নাম একটি চিঠিতে লেখা হবে। অতঃপর তাতে সিল দেওয়া হবে, যা কিয়ামত পর্যন্ত আর ভাঙা হবে না।’ (তারগিব ১৪৭৩, আল মুসতাদরাক ২/৩৯৯)

দরুদ শরিফের ফজিলত
জুমার দিন রাসুল সা.-এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা অনেক অনেক সাওয়াব। হজরত আউস বিন আবি আউস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেছেন, ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনে আদম আ.-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন।

এই দিনে শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে এবং এই দিনে সবাইকে বেহুঁশ করা হবে। অতএব, তোমরা এই দিনে আমার ওপর বেশি পরিমাণ দরুদ পড়ো। কারণ জুমার দিনে তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়।’ সাহাবারা বললেন, আমাদের দরুদ আপনার কাছে কিভাবে পেশ করা হবে, অথচ আপনার দেহ একসময় নিঃশেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ জমিনের জন্য আমার দেহের ভক্ষণ নিষিদ্ধ করেছেন।’ (আবু দাউদ ১০৪৭)


জুমার দিনের আমল
হাদিসগুলো পর্যালোচনা করলে বুঝা যায়, জুমার দিনের কিছু কাজে সাওয়াব মিলে। যেমন, নখ কাটা, গায়ের অবাঞ্চিত লোম পরিস্কার করা, উত্তম রূপে গোসল করা, উত্তম পোশাক পরিধান করা, সুগন্ধি ব্যবহার করবে, যদি তার নিকট থাকে। তারপর জুমার নামাজে আসে এবং অন্য মুসল্লিদের গায়ের ওপর দিয়ে টপকে সামনের দিকে না যায়। নির্ধারিত নামাজ আদায় করে। তারপর ইমাম খুতবার জন্য বের হওয়ার পর থেকে সালাম পর্যন্ত চুপ করে থাকে। তাহলে তার এই আমল পূর্ববর্তী জুমার দিন থেকে পরের জুমা পর্যন্ত সব সগিরা গুনাহের জন্য কাফ্ফারা হবে (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৩)।

মহিলাদের শুক্রবারের আমল
 শুক্রবার জুমার দিন। ফজিলতের দিন। এ দিনে পুরুষের মত করে মহিলাদেরও বিশেষ কিছু আমল রয়েছে। আমলগুলো করার মাধ্যমে নারী-পুরুষ উভয়ে সমান ফজিলত লাভ করবেন। তবে, যে আমলগুলো মসজিদে যাওয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, সেগুলো মূলত পুরুষদের জন্য। বাকি আমলগুলো রয়েছে তার সবগুলোই নারী পুরুষ সকলেই করতে পারেন। গোসল করা, বেশি বেশি দরুদ পাঠ, সুরা কাহাফ তিলাওয়াত, নখ কাটা ইত্যাদি।
 
 এছাড়া নারীরা জুমার নামাজের পরিবর্তে ঘরে জোহরের নামাজ আদায় করবেন। হজরত উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘নারীদের ঘরে নামাজ পড়া বাইরে নামাজ পড়ার চেয়ে উত্তম’ (আল মু’জামুল আওসাত ৯১০১)। হাদিসে আরও এসেছে, ‘নারীদের নামাজের উত্তম জায়গা হলো তাদের ঘরের নির্জন কোণ।’ (মুসনাদে আহমদ  ২৬৫৪২) 
 
নারীরা জুমার দিনে পুরুষদের সাওয়াব অর্জনে সহায়তা করবে। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি সৎপথের দিকে ডাকবে, সে তার অনুসারীর সমান সওয়াব পাবে। অথচ অনুসরণকারীর সওয়াব কমানো হবে না। অন্যদিকে যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে ডাকবে, সে তার অনুসারীর সমান পাপে জর্জরিত হবে। তার অনুসারীর পাপ মোটেও কমানো হবে না। (আবু দাউদ ৪৬০৯)

আল্লাহ তায়ালা আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।

এনএ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ