প্রতিশ্রুতিশীল লেখক, অনুবাদক ও জামিয়া কাসেম নানুতবির মুহাদ্দিস মুফতি আবুল ফাতাহ কাসেমীর নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। আজ থেকে দেশের বিভিন্ন লাইব্রেরিতে পাওয়া যাচ্ছে বইটি। বাংলাবাজারের মাকতাবাতুল খিদমাহ এ গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে। একুশে বইমেলা উপলক্ষে অর্থ নীতি বিষয়ক এ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে।
বইটির অনুবাদক মুফতি আবুল ফাতাহ কাসেমী বলেন, বক্ষমান গ্রন্থটি ‘ইসলামী নেযামে মায়িশাত কে চান্দ উসূল’ কিতাবের অনুবাদ। বাংলা নাম ইসলামী অর্থনীতির মৌলিক ধারণা। এটি প্রথম ১৯৭০ সালে প্রকাশিত হয়। ১৩৮৯ হিজরিতে উপমহাদেশের প্রখ্যাত ফকিহ মুফতি শফি রহ. কর্তৃক এ কিতাবের কয়েকটি অংশ পূর্ণ নিরক্ষণের পর মাসিক আল বালাগ পত্রিকার সফর ও রবিউল আউয়াল ১৩৮৯ হিজরি সংখ্যায় দুই কিস্তিতে ছাপা হয়। এর লেখক মাওলানা নুর মুহাম্মদ আজমী রহ.। সত্তরের দশকের প্রখ্যাত আলেম গবেষক লেখক।
ইসলামী অর্থনীতির মূল থিম ও দর্শনকে প্রাঞ্জল ও সাবলীল ভাষায় উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে এ বইটিতে। বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেম সদর সাহেব খ্যাত হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরি রহ. কর্তৃক ১৯৬৭ সালে জামেয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ মাদরাসার অধীনে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম স্বতন্ত্র ব্যতিক্রমধর্মী গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'ইদারাতুল মায়ারিফ' থেকে ১৯৭০ সালে এ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। ইসলামের অর্থ দর্শন ও বন্টন ব্যবস্থা, ভূমি ব্যবস্থাপনা, ট্যাক্স, যাকাত ও আনুষাঙ্গিক বিষয় নিয়ে প্রায় এক চল্লিশটি শিরোনামে সংক্ষিপ্তাকারে এ গ্রন্থ লেখা হয়েছে।
অর্থনীতির ছাত্র না হলেও একজন মুসলিম হিসেবে ইসলামের অর্থনীতির এ মৌলিক বিষয়গুলো সবার জানা থাকা দরকার। প্রায় শ' খানেক পৃষ্ঠার এ ছোট্ট গ্রন্থটি ১৯৭০ সালে ইদারাতুল মায়ারিফ ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটির ভূমিকা ও উর্দু অনুবাদ করেছেন জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার মহাপরিচালক মাওলানা হারুন ইসলামাবাদী রহ.।
গ্রন্থটির উপকারিতা ও গুরুত্ব বিবেচনা করে বাংলাদেশের আঞ্চলিক কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড আনজুমানে ইত্তিহাদুল মাদারিসিল কাওমিয়্যাহ এর কর্তৃপক্ষ তাদের অধিনে পরিচালিত মাদরাসাগুলোতে হিদায়া জামাতের পাঠ্য তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন মাদরাসায় অঘোষিতভাবে এ গ্রন্থটি পাঠ্য তালিকায় রয়েছে।
এ গ্রন্থটির মৌলিকত্ব হলো, এ গ্রন্থ যখন লেখা হয়েছে তখন বাংলায় এ বিষয়ক বই ছিল অপ্রতুল। লেখক সরাসরি কুরআন হাদিস ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট মূল উৎস থেকে এর রেফারেন্স সংগ্রহ করেছেন। লেখক সরাসরি শাইখুল ইসলাম মাওলানা যফর আহমদ উসমানি ও মুফতিয়ে আজম মুফতি শফী রহ. কে এ গ্রন্থের নির্বাচিত অংশ পড়ে শুনিয়েছেন।
মাওলানা যফর আহমদ উসমানি বলেছেন— আমি বইটির মালিকানা সীমাবদ্ধতা ও ইসলাম অংশটি সরাসরি লেখক থেকে শুনেছি। মাশাল্লাহ শরিয়তের মেজায ও উসুল ঠিক রেখে লেখা হয়েছে। আমি গ্রন্থটির পূর্ণ সাত্যায়ন করছি। —বান্দা যফর আহমদ উসমানি ১৭ শাওয়াল ১৩৮৯ হিজরি।
২০১৯-২০ সালে চার বছরের মাদরাসা শিক্ষকতার বিরতি টেনে দুই বছরের জন্য দেশের প্রাচীন বিদ্যাপীঠ জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদে ইফতায় ভর্তিও সুযোগ হয়। ইফতা পড়াকালীন সময়ে আমাদের জামেয়ার গবেষণা কক্ষে বিদগ্ধ মনীষী আলেম মাওলানা নুর মুহাম্মদ আজমি রহ. এর ছোট তবে গুরুত্বপূর্ণ এ কিতাবটি আমার হস্তগত হয়। ফরিদাবাদ মাদরাসার ভিজিটিং উস্তাদ মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদবী হাফি.কে এ কিতাবটি দেখালে তিনি এ কিতাবটির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে অনুবাদে উৎসাহিত করেন। দারুল ইফতায় বসে তখনই অনুবাদ শেষ করে ফেলি। তারপর দীর্ঘ প্রায় চার বছরের অধিক সময় ধরে এটি ল্যাপটপবন্ধি ছিল।
কয়েকদিন পূর্বে আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব ইসলামী অর্থনীতিবীদ জামিয়া শরইয়্যাহ মালিবাগের সহকারী মুফতি মুহতারাম মাওলানা আব্দুল্লাহ মাসুম হাফি. এর সাথে কথা প্রসঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ করলে তিনি বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে টিকা টিপ্পনিসহ এটি ছাপাতে বলেন। ফেকাহর সাথে সংশ্লিষ্টতার সূত্র ধরে আমি আধুনিক অর্থনীতি বিষয়ে তার আইএফএ কনসালটেন্সিতে ছয় মাসের কোর্স সম্পন্ন করি।
অনুবাদক কাসেমী আরো বলেন, কিতাবটি যেহেতু ১৩৯০ হিজরি মোতাবেক ১৯৭০ সালে প্রকাশিত তাই তখনকার রীতি অনুযায়ী রেফারেন্সের প্রতি ততটা গুরুত্বারোপ করা হয়নি। তাই আমি বর্তমান রীতি অনুযায়ী কিতাবে দেয়া প্রত্যেকটি হাওয়ালা পুনরায় উৎসগ্রন্থের সাথে মিলিয়ে দেখি এবং বিভিন্ন স্থানে ভুল পরিলক্ষিত হওয়ায় তা শুধরে নেই। হাদীসের তাখরিজ তথা উৎসগ্রন্থ ও হাদীস নাম্বার যুক্ত করি। কোথাও কোথাও লেখকের আলোচনার ঢং সহজবোধ্য না হওয়ায় সাবলীলতা রক্ষা করতে গিয়ে নিজের মতো করে লেখকের ভাব ব্যক্ত করতে হয়েছে। তাই অনেক ক্ষেত্রে মূলগ্রন্থের সাথে অনুবাদের মিল নাও থাকতে পারে। অর্থনীতির আধুনিক পরিভাষাগুলো যুক্ত করাসহ প্রয়োজনীয় টিকা টিপ্পনি সামনে নিয়ে আসি। ফলে অনেকের মতে এটি এখন স্বতন্ত্র পুস্তিকার রূপ লাভ করেছে।
বইটি পেতে যোগাযোগ করুন 01744450421 এই নাম্বারে বা মাকতাবাতুল খিদমাহর ফেইসবুক পেইজে।
হাআমা/