শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

এক মসজিদে ৫০ বছর খতমে তারাবির ইমামতি করছেন হাফেজ মাহফুজ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

যেকোনো পেশা বা কাজে অর্ধশত বৎসর অতিক্রান্ত করা বিশেষ কিছু! এ মহেন্দ্রক্ষণকে উদযাপন করা হয় জাকজমকভাবে। তবে একই মসজিদে টানা অর্ধশত বৎসর খতমে তারাবি পড়ানোর এক ব্যতিক্রম ও অনন্য নজির গড়েছেন হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার একতিয়ারপুর গ্রামের হাফেজ মো: মাহফুজুর রহমান। আর এ মহেন্দ্রক্ষণকে তিনি উদযাপন করছেন আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের মাধ্যমে তাহাজ্জুদের নামাজে ১০ খতম কোরআন তেলাওয়াতের উদ্যোগ নিয়ে।

ব্যতিক্রম ঘটনাটি ঘটেছে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজীবাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র মসজিদে।

হাফেজ মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমি সাত-আট বছর বয়সেই হাফেজ হই। মাধবপুর উপজেলার হরষপুর মাদরাসার হাফেজ নুরুজ্জামানের কাছে মাত্র দুই বছরে হিফজ শেষ করি। ওই সময় আমার মতো এত কম বয়সে কেউ হাফেজ হতে পারেননি। ৫০ বছর আগে শাহজিবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা খতমে তারাবি পড়ানোর জন্য হাফেজ নিয়োগের জন্য আমার মাদরাসায় আসেন। তখন আমিও সেখানে আবেদন করি। পরে প্রতিযোগিতা হলে আমার তেলাওয়াত শুনে সবাই আমাকে মনোনয়ন করেন তারাবি পড়ানোর জন্য।’

তিনি আরো বলেন, ‘ওই সময় খুব বেশি হাফেজ পাওয়া যেত না বলে মাত্র নয় বছর বয়সে খতমে তারাবি পড়ানোর জন্য চলে আসি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড মসজিদে। তখন জেলা শহরের কয়েকটি মসজিদেই শুধু খতমে তারাবি হতো। হাফেজের সংখ্যা খুব বেশি না থাকায় অনেক উপজেলা সদরেও খতমে তারাবি হতো না। সেখানে বিচ্ছিন্ন এক এলাকায় খতমে তারাবি পড়ানো হবে শুনে আশপাশের শাহজিবাজার গ্যাস ফিল্ড, রাবার বাগান, বনবিভাগ ও লাল চান্দ চা বাগানের কর্মকর্তারাও ছুটে আসেন এই মসজিদে। টিনের তৈরি মসজিদে মুসল্লিদের তিল ধারণের ঠাঁই থাকত না। এখন সেখানে হয়েছে পাকা বিল্ডিং। এসিরও ব্যবস্থা আছে। আমি যে বয়সে খতমে তারাবি পড়ানো শুরু করি, তখন বয়স কম থাকায় নিয়মিত রোজা রাখাও সম্ভব হতো না। প্রথম বছর আমার তেলাওয়াত শুনে সবাই মুগ্ধ হন। পরে আর আমাকে কোনো ইন্টারভিউ দিতে হয়নি। অন্য অনেক মসজিদ থেকে আমন্ত্রণ এলেও এ মসজিদের সাথে যারাই জড়িত ছিলেন তারা আমাকে অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ দিতেন না। অনেক কর্মকর্তা আর কর্মচারীরা বদলি হয়েছেন। কিন্তু আমাকে কেউ পরিবর্তন করার কথা চিন্তা করেননি। বরং এক বছর তারাবি শেষ হওয়ার সাথে সাথেই পরের বছরের জন্য নিশ্চিত করা হতো আমাকে।’

হাফেজ মাহফুজ বলেন, ‘টানা ৫০ বছর সুস্থ থেকে তারাবি পড়ানো আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত। এই সময়ে আমাকে নিয়ে কেউ কোনো কথাও বলেনি। একবার এক মুসল্লি আমার বদলে অন্য হাফেজ নিয়োগের কথা বললে সেখানে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। পরে ওই মুসল্লিকে এখান থেকে বদলী করা হয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘একটানা ৪৮ বছর আমি একাই নামাজ পড়িয়েছি। এখনো একাই নামাজ পড়াতে সক্ষম। দু’বছর যাবত আমার সাথে আমার এক ছাত্রও নামাজ পড়াচ্ছেন। টানা ৫০তম খতমে তারাবি পড়াতে গিয়ে অনেক মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে। অনেক বড় বড় কর্মকর্তা এখানে নামাজ পড়েছেন। আমাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করে, এই মসজিদে আমি তিন প্রজন্মকে তিলাওয়াত শুনাতে পেড়েছি। তাজুল ইসলাম নামে এক মুসল্লি শুরুর দিকে এখানে তারাবি পড়তেন। পরে তার ছেলে নজরুল ইসলামও এখানে নিয়মিত তারাবি পড়েন। এখন নজরুল ইসলামের ছেলে ফুয়াদও আসে তারাবিতে। তিন প্রজন্মকে মুসল্লি পাওয়া অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয়। এখানকার মানুষ ও মুসল্লিরা আমাকে অনেক সম্মান করে। তাই আমি বার বার এখানে চলে আসি তারাবির নামাজ পড়ানোর জন্য। যত দিন তারা আমাকে বলবে, আল্লাহ আমাকে সুস্থ রাখলে এই মসজিদেই তারাবি পড়াব। অনেক বড় বড় মসজিদে আমাকে তারাবি পড়ানোর জন্য আমন্ত্রণ জানালেও এই মসজিদে প্রতি যে মায়া তার জন্য আমি সকল আমন্ত্রণ বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করি। করোনার মহামারিতেও খতমে তারাবি অক্ষুন্ন রাখতে পাড়ায় আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’


হাফেজ মাহফুজুর রহমান হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার একতিয়ারপুর গ্রামের মরহুম মকসুদ আলী মোল্লার ছেলে। তার চার ছেলে ও দুই মেয়ে। সবাই লেখাপড়া করছেন। তিনি ১৯৮২ সালে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সিলেট অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ হাফেজ হন। ১৯৮৩ সালে জাতীয় পর্যায়েও পুরস্কৃত হন। যে মাদরাসা থেকে তিনি হাফেজ হয়েছেন সেই হরষপুর মাদরাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর মৌলভীবাজারের জামেয়া দ্বীনিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। পরে ঢাকার মনিপুরী পাড়া, নিকুঞ্জ ও যাত্রাবাড়ীতে বিভিন্ন মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। বর্তমানে তিনি ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নবীগনর দারুছুন্নাহ মাদরাসায় হিফজ বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।

হাফেজ মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘রমজান মাসে শুধু খতমে তারাবি পড়াই না। ৫০ বছর ধরে তাহাজ্জুদের নামাজে আরো তিন খতম করে খতম দিয়ে আসছি। এবার ৫০ বছরের শুকরিয়া আদায়ের জন্য তাহাজ্জুদে ১০ খতম দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে চার খতম শেষ হয়েছে। আল্লাহর রহমতে আমি কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই যেকোনো মুহূর্তে এক বসায় নির্ভুলভাবে ৩০ পাড়া কুরআন মুখস্ত বলতে পারি। গত বছর রমজানের আগে আটজন হাফেজের সামনে এক বসায় ৩০ পাড়া পড়েছি। কেউ কোনো লুকমা দিতে পারেনি। বাংলাদেশে আমিই একমাত্র হাফেজ যে ওস্তাদের কাছে কুরআন শরীফের প্রথম আয়াত থেকে শেষ আয়াত শুনানোর পাশাপাশি শেষ আয়াত থেকে শুরু করে প্রথম আয়াত শুনাতে পেরেছি। যেকোনো দিক থেকেই আমি কুরআন খতম করতে পারি। আমি হাফেজ হওয়ার পর শিক্ষকতায় এসে শতাধিক হাফেজ সৃষ্টি করতে পেরেছি। আমার হাত দিয়ে সৃষ্টি হওয়া অনেক হাফেজ আজ দেশ বিদেশে সুনামের সাথে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। কোরআনের খেদমতের মাধ্যমেই বাকি জীবন অতিবাহিত করতে চাই।’

সূত্র : বাসস


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ