জেসমিন প্রামানিক, চাটমোহর (পাবনা)
প্রায় দুই মাস আগে অনেকটা ঢাকঢোল পিটিয়ে চাটমোহর থেকে হামকুড়িয়া সড়কের কাজ শুরু করেন ঠিকাদারের লোকজন। দীর্ঘদিন ধরে চলনবিলের বুক চিড়ে চলে যাওয়া সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) এই রাস্তার ছিল বেহাল দশা। খানাখন্দে ভরপুর এই রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের শেষ ছিল না। কিন্তু নতুন করে সংস্কার কাজ শুরু হওয়ায় আশায় বুক বেঁধেছিলেন এলাকার মানুষ। রাস্তার কাজও অনেকটাই দ্রুত গতিতে এগোচ্ছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কাজ ফেলে রেখেই লাপাত্তা হয়েছেন ঠিকাদার ও তার লোকজন।
এখন এই সড়ক নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই- পথ চলতি হাজারো মানুষ থেকে শুরু করে যানবাহন চালকদের। শুধু কী তাই, সড়কের দুই পাশের দোকানপাট ও বাসাবাড়ি ধূলোর আস্তরণে ঢাকা পড়েছে। সীমাহীন জনদুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সবাই। আর যাদের দেখভাল করার কথা সেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরেরও কোনো মাথা ব্যথা নেই সাধারণ মানুষের ভোগান্তি নিয়ে!
সরেজমিনে দেখা যায়, চাটমোহর পৌর শহরের জারদিস মোড় থেকে শুরু করে ক্যুঁজোর মোড় পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে অসংখ্য খানাখন্দ। ছোট ছোট পাথরের কুচির ওপর দিয়ে ছোট ছোট যানবাহন চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন চালকরা। সড়কের দুই পাশের ঘরবাড়ি এবং দোকানপাট ধূলোর আস্তরণে ঢাকা পড়েছে। শুধু তাই-ই নয়, সামান্য বৃষ্টিতেই এই রাস্তা ভংঙ্কর হয়ে ওঠে। বৃষ্টির পানিতে কাদা জমে গাড়ির চাকা দেবে যাওয়া থেকে শুরু করে নানা ভোগান্তির শিকার হন যানবাহন চালকরা। মাঝে মধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। একবার ওই রাস্তায় কোনো গাড়ি গেলে মুহূর্তেই চারপাশ ধুলোয় অন্ধকার হয়ে যায়। অথচ জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি দিয়ে হাটিকুমরুল (মান্নাননগর) সড়ক হয়ে দেশের যে কোনো প্রান্তে অনায়াসেই যাতায়াত করা সহজ হয় সাধারণ মানুষের। পাশাপাশি কৃষি প্রধান এলাকা হওয়ায় সবচেয়ে বেশি কৃষি পণ্য উৎপাদিত হয় এই এলাকায়। কিন্তু অতি গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে সময় মতো পাঠাতে পারছেন না।
জানা গেছে, চাটমোহর থেকে হামকুড়িয়া সড়কের হান্ডিয়াল পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারের কাজটি পায় সিরাজগঞ্জের ‘তুলনা এন্টারপ্রাইজ’। সংস্কার কাজের ব্যয় বাবদ ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রায় দুই মাস আগে জারদিস মোড় থেকে সড়ক ও জনপদ বিভাগের এই সড়কটি সংস্কার কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রায় ৫ কিলোমিটার ক্যুঁজোর মোড় পর্যন্ত রাস্তার পুরাতন কার্পেটিং উঠিয়ে ফেলা হয়। সেই সাথে সড়কের দুই পাশে বেজ ওয়াল তৈরি করা হয়। এরপর রাস্তায় ফেলা হয় বালু ও পাথর। এরপর থেকেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এখন এই সড়কটি গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে।
উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের সমাজ গ্রামের ব্যাটারিচালিত বোরাকচালক আমিন উদ্দিন বলেন, সকালে বের হয়ে রাতে যখন বাসায় ফিরি তখন বউ (স্ত্রী) আর চিনতে পারে না। কারণ পুরো শরীর ধুলোয় ঢাকা পড়ে থাকে। রাস্তা সংস্কার না করাই ভালো ছিল। আগে ভাঙ্গাচোরা রাস্তা থাকলেও কোনো মতো চলা যেত। কিন্তু এখন চলাচল করাই মুশকিল হয়ে পড়েছে।
দোদারিয়া মোড়ের মুদি ব্যবসায়ী আলমাস সরকার বলেন, ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে খুব অসুবিধা হতো। নতুন করে রাস্তা সংস্কার করা দেখে খুব খুশি হয়েছিলাম। কাজও এগোচ্ছিল ভালো। কিন্তু কী এমন হলো যে কাজই বন্ধ হয়ে গেল! রাস্তা দিয়ে গাড়ি যাওয়ার পর অনেক ধূলা ওড়ে। দোকানের মালমাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি ঘরবাড়িতেও বসবাস করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। ভোগান্তি কমাতে গিয়ে রাস্তাটা এখন আমাদের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।
জানতে চেয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তুলনা এন্টারপ্রাইজের মালিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুর বলেন, আমি চেষ্টা করছি ঠিকাদারকে ডেকে এনে কাজ শেষ করানোর জন্য।