বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ ২০২৫ ।। ২১ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ৬ রমজান ১৪৪৬


৬ষ্ঠ তারাবির নামাজে তিলাওয়াতের সারমর্ম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| তাওহীদ আদনান ইয়াকুব ||

(সূরা আরাফ ১২-২০৬ ও সূরা আনফাল ১-৪০ পর্যন্ত)

পবিত্র কুরআন শুধুমাত্র ইবাদতের গ্রন্থ নয়, এটি মানবজীবনের পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা। এতে রয়েছে ইতিহাসের শিক্ষাপ্রদ ঘটনা, ঈমান ও তাকওয়ার মূলনীতি, এবং সত্য-মিথ্যার চিরন্তন লড়াইয়ের বিবরণ। ষষ্ঠ তারাবির তেলাওয়াতে সূরা আল-আরাফ ও সূরা আল-আনফালের এক বিস্তৃত অংশ তেলাওয়াত করা হবে, যেখানে আদম (আ.) ও ইবলিসের প্রথম সংঘাত থেকে শুরু করে নবীদের সংগ্রাম, অতীত জাতিদের ধ্বংস এবং বদর যুদ্ধের বিশদ বিবরণ রয়েছে।

এই আয়াতগুলো আমাদের সতর্ক করে দেয় শয়তানের ধোঁকাবাজি থেকে বাঁচতে, একইসঙ্গে আল্লাহর বিধান মেনে চলতে এবং ইসলামের পথে দৃঢ় থাকতে। বদর যুদ্ধের আলোচনার মাধ্যমে মুসলমানদের আত্মবিশ্বাস ও ঈমানের শক্তি কীভাবে আল্লাহর সাহায্যের দরজা খুলে দেয়, তা বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কুরআনের শিক্ষাগুলো অনুধাবন করে আমাদের জীবনে বাস্তবায়নের তাওফিক দান করুন—আমিন!

১. সূরা আল-আরাফের মধ্যাংশ (১২-২০৬) আদম (আ.)-এর সৃষ্টি, নবীদের সংগ্রাম ও সত্য-মিথ্যার লড়াই

ইবলিসের অহংকার ও মানবজাতির পরীক্ষা (১২-২৫)

  • আল্লাহ আদম (আ.)-কে সিজদা করার আদেশ দিলে ইবলিস অহংকার করে অমান্য করে।
  • ইবলিস নিজেকে উত্তম মনে করে এবং আদম (আ.)-কে পথভ্রষ্ট করার শপথ নেয়।
  • আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-কে জান্নাত থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় এবং মানবজাতিকে সতর্ক করা হয়, যেন তারা শয়তানের ধোঁকায় না পড়ে।

সত্য-মিথ্যার লড়াই ও বিভিন্ন জাতির পরিণতি (২৬-১৬২)

  • মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে শয়তানের ফাঁদ থেকে দূরে থাকার জন্য।
  • বিভিন্ন নবী-রাসূলদের (যেমন, নূহ, হুদ, সালিহ, লুত, শু’ayব - عليهم السلام) জাতির কথা তুলে ধরা হয়েছে।
  • সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের কঠোর পরিণতি ও ধ্বংসের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।
  • মুসা (আ.) ও ফিরআউনের ঘটনা বিশদভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে ফিরআউনের দম্ভ, মুসার দাওয়াত ও বনী ইসরাইলের মুক্তির কাহিনি বর্ণিত হয়েছে।

আল্লাহর অনুগ্রহ ও নির্দেশনা (১৬৩-২০৬)

  • মদিনার ইহুদিদের প্রসঙ্গ এসেছে, যারা আল্লাহর আদেশ লঙ্ঘন করায় শাস্তি পেয়েছে।
  • যারা আল্লাহর পথে দৃঢ়ভাবে থাকবে, তাদের জন্য রয়েছে রহমত ও পুরস্কার।
  • সূরার শেষে আল্লাহর গুণাবলি, তাসবিহ ও কুরআনের প্রতি দৃঢ়তা রাখার আদেশ দেওয়া হয়েছে।

২. সূরা আনফালের প্রথম অংশ (১-৪০) বদর যুদ্ধ, ঈমানদারদের পরীক্ষা ও বিজয়ের পথ

যুদ্ধের বিধান ও ইসলামের বিজয়ের নীতি (১-১৯)

  • বদর যুদ্ধের সম্পদ বণ্টন নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে আলোচনা হয়, এবং আল্লাহ তাদের একতা বজায় রাখার নির্দেশ দেন।
  • মুসলমানদের নির্দেশ দেওয়া হয়, তারা যেন সবসময় আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে এবং তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করে।
  • বদর যুদ্ধের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে, সংখ্যায় কম হলেও ঈমান ও তাকওয়ার শক্তি থাকলে বিজয় আসবেই।

মুনাফিকদের ষড়যন্ত্র ও আল্লাহর সাহায্য (২০-৪০)

  • মুনাফিকদের নানান কৌশল ও তাদের ঈমানহীনতার বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
  • মুসলমানদেরকে সতর্ক করা হয়েছে, যেন তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য না করে।
  • কাফিরদের বিরুদ্ধে শক্তভাবে অবস্থান নিতে বলা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মূল শিক্ষা ও বার্তা:

  • শয়তানের ধোঁকা ও অহংকারের ধ্বংসাত্মক পরিণতি।
  • নবীদের জাতির ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সত্যের পথে দৃঢ় থাকা।
  • ইসলামের বিজয়ের জন্য ত্যাগ, তাকওয়া ও আল্লাহর ওপর ভরসার গুরুত্ব।
  • বদর যুদ্ধের শিক্ষাসংখ্যা নয়, বরং ঈমানই প্রকৃত শক্তি।
  • সত্যের পথে চলতে হলে ধৈর্য, আত্মত্যাগ ও আল্লাহর সাহায্য অপরিহার্য।

উপসংহার:

এই অংশে ঈমানদারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে—একদিকে শয়তানের ধোঁকাবাজি থেকে বেঁচে থাকার তাগিদ, অন্যদিকে নবীদের সংগ্রাম ও মুসলমানদের বিজয়ের জন্য দৃঢ়তা বজায় রাখার আহ্বান। বদর যুদ্ধের ঘটনাগুলো আমাদের শেখায় যে, আল্লাহর সাহায্য যার সঙ্গে থাকে, সে-ই প্রকৃত বিজয়ী। আমরা যেন এই শিক্ষা থেকে উপকৃত হয়ে আমাদের জীবন আল্লাহর বিধান অনুযায়ী পরিচালিত করতে পারি। আমিন।

লেখক : ফাযেলে দারুল উলুম দেওবন্দ ও নদওয়াতুল উলামা লাখনৌ,
মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া আহলিয়া নশাসন, শরীয়তপুর

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ