|| কাউসার লাবীব ||
টানা ভারীবর্ষণ এবং ভারত থেকে আসা পানিতে দেশের ১৩টি জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে লাখ লাখ মানুষের বাড়িঘর-ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি ও ক্ষতির মুখে পড়েছেন ৩৬ লাখ মানুষ। এখন পর্যন্ত ৪ জেলায় ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে ৯ নদীর পানি।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) পর্যন্ত সব মিলিয়ে এখন দেশের ১৩টি জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এসব জেলা হলো ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাঙ্গামাটি ও সিলেট।
দেশের এই পরিস্থিতিতে বন্যার্তদের সহায়তায় জীবন বাজি রেখে কাজ করছে দেশের আলেম সমাজ। বিশেষ করে বিশ্বস্ত সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ‘আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন’র চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ দিনরাত এক করে বানবাসীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। ৫০০ টন ত্রাণ বিতরণ করছেন।
ইসলামিক স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ’র মহতি এই উদ্যোগে এবার শরিক হয়েছেন হিন্দুধর্মালম্বীরাও। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ২৭ নং ওয়ার্ড এর দিয়াপাড়ায় অবস্থিত ‘স্বর্গীয় দক্ষিণা রঞ্জন চক্রবর্তী স্মৃতি দূর্গা মন্দির’ কর্তৃপক্ষ তাদের পুজোর ফান্ডের একটি নির্দিষ্ট অংশের টাকা ‘আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনে’ ডোনেট করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক অয়ন চক্রবর্তী বলেন, আমাদের বাংলাদেশে আজকে বন্যার কারণে যে দুরাবস্থা দেখা দিয়েছে এটা কিন্তু যে অঞ্চলগুলো বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে শুধু তাদের সমস্যা না, এটা সারা দেশের সব মানুষের সমস্যা। এই সমস্যার সমাধার সবাই মিলে করতে হবে।
তিনি জানান, যেহেতু দুর্গাপূজার আর মাত্র ৪৫ দিনের মতো বাকি তো এখন প্রত্যেকটা মন্দিরই তাদের বাজেট নিরূপণ করতে তাদের দান বাক্স খুলে দেখা হচ্ছে। কত টাকা কোথায় খরচ করবে সে হিসেব করছে। সবারই কিন্তু পূজোকে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য আর্থিক বিষয়টি প্রয়োজন। কিন্তু এসবের মাঝে আমার মন্দিরের পক্ষ থেকে আমি মনে করেছি যে, আমাদের পূজার যে আলোকসজ্জার খরচের অংশটা; যেটা আমরা আনন্দ প্রকাশের জন্য করে থাকি সেটি বন্যার্তদের জন্য ব্যয় করবো। সেজন্যই ‘আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন’সহ কয়েকটি ফাউন্ডেশনে আমরা দিয়ে দিয়েছি।
‘আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনকে আমার কাছে বিশ্বস্ত মনে হয়েছে, তাই সেখানে দেওয়া। আর এটা মোটেও দান না, এটা বন্যার্ত মানুষের অধিকার।’ –যোগ করেন তিনি
অয়ন চক্রবর্তী বলেন, আমার কাছে যেটা মনে হয় যে, আমাদের পবিত্র সংবিধানের ৬ নং অনুচ্ছেদে যে কথা বলা হয়েছে যে- এই দেশের প্রত্যেকটা মানুষ জাতি হিসেবে বাঙালি এবং নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশী। সুতরাং প্রত্যেকটা মানুষের পরিচয় হচ্ছে বাংলাদেশী। আমরা কোনো মানুষের ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে কাউকে চিহ্নিত না করা উচিৎ।
তিনি জানান, এই যে দেখেন কিছুদিন আগে অপ্রত্যাশিতভাবে দেশের বেশকয়েকটি মন্দিরে হামলা হয়েছে। এটা সবাই বললে এটা কিন্তু বলে না যে মাদরাসার ভাইয়েরা, মুসলিম ভাইয়েরা কীভাবে মন্দির পাহারা দিয়েছে।
‘আমি দেখেছি, আমার বাসার পাশে বরিশালের অন্যতম বড় মন্দির ‘কালী মন্দির’ সারা রাত জেগে থেকে মাদরাসার ভাইয়েরা পাহারা দিয়েছে। সকালে নামাজ পড়ে নিজেদের কাজে গিয়েছে। সারাদিন তাদের কাজ করে আবার রাতে এসে মন্দির পাহারা দিয়েছে। এটাই তো আমাদের বাংলাদেশ। এমন দেশই তো আমরা চাই। যেখানে থাকবে সম্প্রীতি।’ –যোগ করেন স্বর্গীয় দক্ষিণা রঞ্জন চক্রবর্তী স্মৃতি দূর্গা মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক অয়ন চক্রবর্তী
সবশেষে তিনি বলেন, প্রত্যেক দুর্গোৎসব আয়োজন কমিটির প্রতি অনুরোধ রইল– যে যেখানে পারেন, যে ফাউন্ডেশন বা বিশ্বস্ত ব্যক্তির কাছে পারেন, পুজোর বাজেটের একটি অংশ পৌঁছে দিন। প্লাবিত মানুষের জন্য ব্যয় করুন।
কেএল/