আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: মাহে রমাযান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি এক বিশেষ নিয়ামত। এ মাসে ইবাদতের ময়দানে মাসব্যাপী নেকীর বিশাল অফার চলতে থাকে। প্রতিটি ইবাদতেই নেকী এবং নেকী।
নফল ফরযের সমতুল্য হয়ে যায় এমাসে,ফরয ইবাদতে একাধিক ফরযের নেকী পাওয়া যায়,এর সাথে শবে ক্বদর এবং প্রতি দশকে রয়েছে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের স্পেশাল অফার।।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এ মাসে বান্দার জন্য নেকী অর্জনের অসংখ্য সুযোগ ও ব্যবস্থা করে রেখেছেন, আমাদের করণীয় হলো, সেসব সু্যোগ তালাশ করে তার সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা। তবেই মাহে রমাযানে আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতের যথাযোগ্য ফায়দা হাসিল করা সম্ভব হবে।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযানের আগমন উপলক্ষে সাহাবায়ে কেরামকে উৎসাহ প্রদান ও রমাযানের জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।
হাদীসে এসেছে:
১-
عَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ رَجَبٌ قَالَ: «اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ وَشَعْبَانَ وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ»
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাস আসলে এ দু‘আ পড়তেন, ‘‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে রজব ও শা’বান মাসের বরকত দান করুন এবং আমাদেরকে রমাযান মাসে পৌছে দিন। (তাবারানী-৩৯৩৯, বাইহাকী -৩৮১৫ )
২-
حديث أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قَالَ : لَمَّا حَضَرَ رَمَضَانُ ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُبَشِّرُ أَصْحَابَهُ : أَتَاكُمْ رَمَضَانُ ، شَهْرٌ مُبَارَكٌ ، فَرَضَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ ، تُفْتَحُ فِيهِ أَبْوَابُ السَّمَاءِ ، وَتُغْلَقُ فِيهِ أَبْوَابُ الْجَحِيمِ ، وَتُغَلُّ فِيهِ مَرَدَةُ الشَّيَاطِينِ ، لِلَّهِ فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ ، مَنْ حُرِمَ خَيْرَهَا فَقَدْ حُرِمَ. (النسائي في "سننه" (2106) ، وأحمد في "مسنده" (7148) ، وعبد بن حميد في "مسنده" (1429) ، وابن أبي شيبة في "مصنفه" (886
অনুবাদ: বিশর ইবনে হিলাল (রাহঃ) ... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন যে, তোমাদের নিকট রমযান উপস্থিত হয়েছে, যা একটি বরকতময় মাস। তোমাদের উপরে আল্লাহ তা’আলা অত্র মাসের রোযা ফরয করেছেন। এ মাস আগমনে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়, আর আল্লাহর অবাধ্য শয়তানদের গলায় লোহার বেড়ী পরানো হয়। এ মাসে একটি রাত রয়েছে যা এক হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। যে ব্যক্তি সে রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল সে প্রকৃত বঞ্চিত রয়ে গেল। (নাসাঈ)
এবার আসি সেসব সু্যোগ কীভাবে তালাশ করতে হবে এবং তা কীভাবে কাজে লাগাতে হবে তার আলোচনায়...
প্রথমত: নেকী অর্জনের সাধারণ সুযোগ।
কুরআন ও সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মোতাবেক এ মাস অতিবাহিত করতে পারলে একজন মুমিনের নেকী অর্জনের সাধারণ সুযোগ হাতছাড়া হতেই পারে না।
হাদীসের কিতাবের রমাযান অধ্যায় এবং ফাযাঈলে রমাযান জাতীয় কিতাব এজন্য দেখা যেতে পারে।
দ্বিতীয়ত: নেকী অর্জনের স্পেশাল সুযোগ।
এটা আমরা জানতে পারবো আকাবিরে উম্মাহ আমাদের সালাফ উলামায়ে কেরামের জীবনী থেকে...কীভাবে ওনারা মাহে রমাযানের প্রতি মুহূর্ত কাটিয়েছেন এবং আল্লাহ তাআলার বিগাইরী হিছাব খাজানা থেকে জিতে নিয়েছেন দারুন সব অফুরন্ত অফার।।
একটি উদাহরণ দিলে সহজে বুঝে আসবে।
অনলাইনে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে অফারে কেনাকাটা সকলেই কমবেশি করে থাকে।কিন্তু ধামাকা কিছু অফার সবার সাধ্যে থাকেনা, কিছু বিশেষ ব্যাক্তি তাঁর অনলাইন এক্টিভিটি এবং স্পেশালিটির সুযোগ নিয়ে জিতে যায় ওসব ধামাকা অফার।। আমরা অনেকেই এরকম ভাইদের শরনাপন্ন হয়ে থাকি ঐসব স্পেশাল অফার পাবার আকাংখায়।
ঠিক তদ্রুপ আল্লাহ তাআলার বিগাইরী হিছাব খাজানার স্পেশাল অফার জানার জন্য সেসব সু্যোগ্য বান্দার শরনাপন্ন আমাদের হতে হবে যাদের সোহবতে থেকে আমি হাসিল করতে পারবো ঐসব স্পেশাল অফার এবং রমাযানের পূর্ণ বারাকাহ হাসিল করা আমার জন্য সহজ হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন আমীন।
এ জন্য আমাদের নিজেদের আকাবীর উলামায়ে কেরামের জীবনী মুতালা করার খুব প্রয়োজন।
সালাফে সালিহীনের জীবনীর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, তাঁরা কারও বুযুর্গির ব্যাপারে আলোচনা করলে জিজ্ঞেস করতেন তিনি জীবনে কয়টি রমাযান অতিবাহিত করেছেন? তাঁদের কাছে বুযুর্গির একটি মাপকাঠি ছিল রমাযান পাওয়া। কারণ,রমাযানের যে বরকত ও সওয়াব হাসিল হয়, তা অন্য কোনো মাসে সম্ভব না।
এ পর্যায়ে আমি আমাদের আকাবীর উলামায়ে কেরাম কীভাবে মাহে রমাযান কাটাতেন তার কিছুটা বিবরণ উল্লেখ করবো ইনশাআল্লাহ। যেগুলো শুনলে বাহ্যত আমাদের কল্পনা মনে হতে পারে, কিন্ত আসলে এটাই ছিল রমাযানে তাদের আমলের বাস্তবতা ও আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত জাযা’ হাসিলের জন্য ব্যকুলতা।
আমরা আজকাল রমাযানে ইবাদতের মধ্য দিয়ে কাটানোর থেকে ব্যস্ততায় লিপ্ত হয়ে যাই। অথচ আমাদের আকাবিরদের জীবনের দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পাই, তারা আল্লাহর রঙে রঙ্গীন হতেন এ মহিমাময় মাসে।
হযরত হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ.
হাজী সাহেব রাহমাতুল্লাহি আলাইহি রমাযান মাসে রাতের বেলা ঘুমোতেন না। রাতভর নিজে কুরআন মাজিদ তেলাওয়াত করে বা হাফেজদের তিলাওয়াত শুনে কাটিয়ে দিতেন।
এমদাদুল মুশতাক কিতাবে হযরত থানভী রহ. হযরত হাজী সাহেবের রমাযানের মামুলাত সম্পর্কে লিখেন, হযরত হাজী সাহেব বলেছেন, এই ফকির যুবক বয়স থেকেই অধিকাংশ রাত বিনিদ্র থেকেছি। বিশেষত রমাযান মাসে রাত্রিবেলা বিছানায় পিঠ লাগাই নি।
রমাযানে মাগরিবের পর আমার নাবালেগ দুই ভাতিজা, হাফেজ ইউসুফ ও হাফেজ আহমাদ হোসাইন দুজন আলাদাভাবে ইশা পর্যন্ত কুরআন শুনাত। তারপর ইশার নামাযের পর আরো দুইজন হাফেজের পেছনে তারাবিতে কুরআন শুনতেন। ওদের পর আরেকজন হাফেজ অর্ধরাত পর্যন্ত কুরআন শুনাত।
তারপর তাহাজ্জুদে দাঁড়াতেন। দুইজন হাফেজ তাহাজ্জুদে কুরআন পড়ত। রমাযানের রাতগুলো এভাবেই অতিবাহিত হয়েছে। (এমদাদুল মুশতাক)
হযরত গাঙ্গুহীর দিনরাত:
কুতুবে আলম হযরত রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী রহ. মাগরিবের পর আউয়াবিন নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন। ছয় রাকাত নামায কোনোদিন বিশ রাকাতে গিয়ে শেষ হতো। দিনভর রোযা রেখে ইফতারের পর যখন শরীর দুমড়ে মুচড়ে আসে, ক্লান্তি চেপে ধরে, একটু আরাম করতে মন চায়, সেই তখন সব অলসতাকে পেছনে ফেলে তিনি জায়নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন। একাগ্রতার সঙ্গে নামায পড়তেন।
ছোটো সূরা দিয়ে পড়তেন না। দুই আড়াই পারা তেলাওয়াত করে ফেলতেন। রুকু-সিজদাগুলো হতো অত্যন্ত দীর্ঘ। এভাবে আউয়াবিন শেষ হতো।
আউয়াবিনের পর খাবার খেতে ঘরে যেতেন। যাওয়া-আসার মাঝেও তেলাওয়াত চলত। কখনও এক পারার বেশি তেলাওয়াত করে ফেলতেন! তারপর ইশার নামায এবং তারাবীর সময় হয়ে যেত। আবার দীর্ঘ সময় লাগিয়ে তারতিলের সাথে তারাবি পড়তেন। তারাবির পর ঘুমোতে যেতেন। কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে আবার উঠে যেতেন। তাহাজ্জুদে দাঁড়াতেন। আবার মাঝেমধ্যে সাহরির সময় কমে এলে কোনো খাদেম যদি ডাকতে যেতো, তাকে নামাযরত অবস্থায়ই দাঁড়ানো পেত। সাহরির পর ফজর পড়ে আর শুতে যেতেন না। ইশরাক পর্যন্ত তাসবিহ, বিভিন্ন অজিফা এবং মোরাকাবায় মগ্ন থাকতেন। তারপর ইশরাকের নামায পড়ে বের হতেন। বাসায় গিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করতেন।
বেলা হলে হযরত গাঙ্গুহী রহ. চিঠির জবাব লিখতে বসতেন। এই সময়টায় তাসনীফ ও ফতোয়ার কাজে নিমগ্ন থাকতেন। তারপর চাশতের নামায পড়ে আবার কিছুক্ষণ কায়লুলা করতেন। এই করে জোহরের সময় হয়ে যেত।
জোহরের পর ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে আছর পর্যন্ত তেলাওয়াতে মগ্ন থাকতেন। রমাযানে সাধারণত প্রতিটি ইবাদত বৃদ্ধি পেত; কিন্তু অধিকহারে বৃদ্ধি পেতো কালামুল্লাহ শরীফের তেলাওয়াত। এতো অধিক পরিমাণে পড়তেন, ঘরে আসা-যাওয়া এবং নামায ও নামাযের বাইরে সবমিলিয়ে প্রতিদিন অর্ধেক কুরআনের বেশি পড়া হয়ে যেত।
দিনভর ইবাদত করে যখন কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়তেন, তখন খাদেম বিনয়ের সঙ্গে বলতো, ‘হুজুর আজকের তারাবীটা বসে পড়লে ভালো হবে।’ খাদেমদের এই কথা শুনে তিনি বলতেন, ‘নেহি জি, তা হয় না; এটি কম হিম্মতের কথা। তারপরো যদি কিছু বলা হতো, তিনি বলতেন : أفلا أكون عبدا شكورا আমি কি শোকরগুজার বান্দা হবো না? এই কথার পর আর উত্তর থাকে না।
তাযকিরাতুর রাশীদে হাকিম ইসহাক রহ. লিখেন, হযরত গাঙ্গুহী রহ. রমাযানে খুব কম ঘুমোতেন। কম কথা বলতেন। অধিকাংশ সময় তেলাওয়াত, নফল নামায এবং জিকির-আজকারে ব্যয় করতেন।
তারাবির বিশ রাকাতের প্রথম অর্ধেক তিনি নিজে পড়াতেন। আর শেষ দশ রাকাত সাহেবজাদা মৌলভী হাফেজ হাকিম মাসউদ আহমাদ সাহেবের পেছনে পড়তেন। বিতরের নামাযের পর দুই রাকাত নামায পড়তেন। এই দুই রাকাত কখনো বসে পড়তেন, কখনো দাঁড়িয়ে পড়তেন। নামাযের কিয়াম দীর্ঘ সময় হতো। তারপর কেবলামুখী হয়েই সূরা মুলক সূরা সিজদাহ এবং সূরা দুখান তেলাওয়াত করতেন।
মাওলানা খলিল আহমাদ সাহারানপুরি রহ. এর রমাযানের মামুলাত:
মাওলানা জাকারিয়া কান্ধলবি রহ. বলেন, আমি স্বয়ং আমার শায়েখ আল্লামা খলিল আহমাদ সাহারানপুরি রহ. কে দেখেছি, তিনি বার্ধক্যের কারণে অতি দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও রমাযান মাসে মাগরিবের পর নফল নামাযে সোয়া পারা পড়িতেন। তারপর আধা ঘণ্টা খানাপিনায় ব্যয় হতো। তারপর এশা ও তারাবির নামায পড়তেন অনেক দীর্ঘ সময় ধরে।
তারপর কিছু সময় আরাম করে তাহাজ্জুদে দীর্ঘ সময় তেলাওয়াত করতেন। সুবহে সাদিকের আধা ঘণ্টা পূর্বে সাহরি খেয়ে ফজর পর্যন্ত তেলাওয়াতে মগ্ন থাকতেন।
ফজর নামায পড়ে ইশরাক পর্যন্ত মোরাকাবায় আত্নমগ্ন থাকতেন। এশরাকের পর ঘন্টা খানেক আরাম করে দ্বিপ্রহর পর্যন্ত সুনানে আবু দাউদের বিখ্যাত শরাহ ‘বজলুল মাজহুদ ফি হল্লি আবি দাউদ’ গ্রন্থটি লিখতেন এবং চিঠিপত্রের উত্তর লিখতেন। জোহরের পর থেকে আছর পর্যন্ত তেলাওয়াত এরপর মাগরিব পর্যন্ত তাছবীহাত ও জিকিরে মগ্ন হতেন। নফল নামায সারা বছর আদায় করতেন তবে রমাযানে লম্বা রাকাআতে আদায় করতেন।
এখানে আকাবিরে দেওবন্দের মাহে রমাযান থেকে উপকৃত হওয়ার কিছু চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, বিস্তারিত রেফারেন্স গ্রন্থাবলীতে পাওয়া যাবে।
হায়!! কুরআনের প্রতি আমাদের অবহেলা মাহে রমাযানেও:
রমাযান মাস কুরআন নাজিলের মাস। এ মাসে কুরআনে কারীমের সঙ্গে প্রতিটি মুমিনের সর্বাধিক সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন।
কুরআন বিশুদ্ধভাবে শেখা, কুরআনের তিলাওয়াত, তরজমা, তাফসির ও কুরআন পাকের মর্মবাণী অনুধাবন ইত্যাদির মাধ্যমে কুরআনি জীবন গঠনের দাবি ছিল অপরিহার্য।
অন্তত কুরআনে কারিম তিলাওয়াতের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জন এবং আল্লাহ তাআ’লার সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের এটাই সুবর্ণ সুযোগ।
হাদীসে এসেছেঃ
حَدَّثَنَا عَبْدَانُ، قَالَ أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ، قَالَ أَخْبَرَنَا يُونُسُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، ح وَحَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ مُحَمَّدٍ، قَالَ أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ، قَالَ أَخْبَرَنَا يُونُسُ، وَمَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، نَحْوَهُ قَالَ أَخْبَرَنِي عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَجْوَدَ النَّاسِ، وَكَانَ أَجْوَدُ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ حِينَ يَلْقَاهُ جِبْرِيلُ، وَكَانَ يَلْقَاهُ فِي كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْ رَمَضَانَ فَيُدَارِسُهُ الْقُرْآنَ، فَلَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَجْوَدُ بِالْخَيْرِ مِنَ الرِّيحِ الْمُرْسَلَةِ.
قال الحافظ بن رجب رحمة الله عليه: ودل الحديث أيضا على استحباب دراسة القرآن في رمضان والاجتماع على مدارسته و وعرض القران على من هو أحفظ له , وفيه دليل على إستحباب الاكثار من تلاوة القرىن في شهر رمضان.
অনুবাদঃ ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। রমযানে তিনি আরো বেশী দানশীল হতেন, যখন জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) তাঁর সাথে সাক্ষাত করতেন। আর রমযানের প্রতি রাতেই জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) তাঁর সাথে সাক্ষাত করতেন এবং তাঁরা পরস্পর কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রহমতের বাতাস থেকেও অধিক দানশীল ছিলেন। (বুখারী-৪)
فكانت عائشة رضي الله عنها تقرأ في المصحف أول النهار في شهر رمضان فاذا طلعت الشمس نامت
আম্মাজান আয়িশা রাযিঃ সারাদিন তিলাওয়াত করতেন।
وكان الاسود يقرأ القرىن في رمضان في كل ليلتين وكان النخعي يفعل ذالك في العشر الاواخر منه خاصة وفي البقية الشهر في ثلاث
আসওয়াদ রহঃ রমযানের প্রতি দুরাত্রে খতম করতেন।
وكان قتادة يختم في كل سبع دائما وفي رمضان في كل ثلاث. وفي العشر الاواخر كل ليلة وكان قتادة يدرس القرآن في شهر رمضان
কাতাদা রহঃ রমযানের প্রতি তিন রাত্রে খতম করতেন।
অনুরূপভাবে রমাযান এলে হাদীসের দরস থেকে তিলাওয়াতকে প্রধান্য দিতেন মুহাদ্দিসীনে কিরাম।
وكان الزهري إذا دخل رمضان قال: فانما هو تلاوة القرآن وإطعام الطعام)
وقال ابن عبد الحكم كان مالك إذا دخل رمضان يفر من قراءة الحديث ومجالس أهل العلم , وأقبل على تلاوة القرآن من المصحف
وقال عبد الرزاق كان سفيان الثوري إذا دخل رمضان ترك جميع العبادة وأقبل على تلاوة القرآن
وكان بعض السلف يختم القرآن في كل ثلاث ليال , وكان بعضهم في كل سبع منهم قتادة , وبعضهم في كل عشر , ومنهم أبو رجاء العطاردي وكان السلف يتلون القرآن في شهر رمضان في الصلاة وغيرها
وكان للشافعي في رمضان ستون ختمة يقرأها في غير الصلاة وعن أبي حنيفة نحوه
ইমাম আজম আবু হানিফা রহ.-এর কথা প্রসিদ্ধ আছে তিনি রমাযান মাসে ৬১ খতম তিলাওয়াত করতেন। ইমাম শাফেঈ সম্পর্কেও অনুরুপ বর্ণিত আছে।
ওনারা তো তাবেঈযুগের ইমাম ছিলেন, আমরা দেওবন্দের আকাবীরদের দিকে তাকালেও একই চিত্র দেখতে পাই।
কুতুবে আলম হজরত রশিদ আহমদ গাঙ্গোহী রহ. বাদ মাগরিব আওয়াবিনে দু’ পারা ও তাহাজ্জুদসহ দৈনিক অর্ধ খতম কুরআন তিলাওয়াত করতেন।
আল্লামা কাসিম নানুতুবী রহ. ১২৭৭ হিজরিতে মক্কা-মদিনা সফরকালে রমাযান মাসে কুরআন পাক মুখস্থ করেছিলেন। এরপর থেকে তিনি বেশি বেশি তিলাওয়াত করতেন। একবার তিনি এক রাকাতে সাতাশ পারা তিলাওয়াত করেছিলেন।
হাজী এমদাদুল্লাহ মক্কি রহ. সারা রাত বিভিন্ন হাফেজদের থেকে পালাক্রমে নামাযে তিলাওয়াত শুনতেন।
হযরত শাহ আবদুর রহিম রায়পুরী রহ. হাফেজে কুরআন ছিলেন। প্রায় সারারাত কুরআন তিলাওয়াত করতেন। চব্বিশ ঘণ্টায় তিনি শুধু এক ঘণ্টা ঘুমাতেন।
শায়খুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান দেওবন্দি রহ. হাফেজ ডেকে নামাযে সারারাত কুরআন শরিফ শুনতেন। তারাবিতে কখনও ছয় পারা, কখনও দশ পারা পড়া হতো।
শায়খুল ইসলাম হযরত হুসাইন আহমদ মাদানি রহ. বাদ আসর দারুল উলূম দেওবন্দের শিক্ষক হাফেজ-মাওলানা আবদুল জলিল রহ.-এর সেঙ্গ শোয়া পারা দাওর করতেন অর্থাৎ পরস্পর শোনাতেন।
হজরত খলিল আহমদ সাহারানপুরী রহ. বাদ মাগরিব নফলে শোয়া পারা তিলাওয়াত করতেন। আর তাহাজ্জুদে করতেন সাধারণত দু’ পারা। তারাবি তো আমৃত্যু তিনি নিজেই পড়াতেন।
হযরত শায়খুল হাদিস যাকারিয়া রহ. তারাবিতে সোয়া পারা শোনাতেন, সাহরি পর্যন্ত তরজমাসহ তা পড়তেন চার-পাঁচ বার। সে অংশটুকু তাহাজ্জুদের সময় শোনাতেন দু’বার। সাহরি খাওয়ার পর ফজরের নামাযের আগে এবং পরে ঘুমানোর আগে সে অংশটুকু একবার তিলাওয়াত করতেন।
সকাল দশটার দিকে ঘুম থেকে ওঠে শীতের দিনে চাশতের নামাযে একবার এবং গরমের দিনে দু’বার তিলাওয়াত করতেন। জোহরের নামাযের পনের মিনিট আগে দেখে দেখে দু’বার তিলাওয়াত করতেন। জোহরের নামাযের ফরজের আগে সুন্নতে দু’বার, পরের সুন্নতে একবার তিলাওয়াত করতেন। জোহরের নামাযের পর বন্ধুদের কাউকে একবার শোনাতেন।
আসরের নামাযের আগে দু’ বা একবার পড়তেন। আসরের পর বয়স্ক কাউকে একবার শোনাতেন। মাগরিবের নামাযের পর নফল নামাযে সে শোয়া পারা আরেক বার তিলাওয়াত করতেন।
প্রতিদিনের আমল ছিল এভাবে। ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ত্রিশবারে ত্রিশ পারা তিলাওয়াতে জোর দিতেন। (শায়খ যাকারিয়্যা রহ. এ আত্মজীবনী 'আপবীতি' হতে সংগৃহীত)
পরিশেষে,আকাবীর উলামায়ে কেরামের মাহে রমাযানের মামুলাত সম্পর্কে মুতালা তথা জানার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ কিতাবের উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি, আগ্রহী পাঠক অবশ্যই তা থেকে উপকৃত হবেন আশা করি।
১-আকাবির কা রমাযান লেখক: শায়খুল হাদীস মাওঃ যাকারিয়া রহ.
২-ফাযায়েলে রমযান লেখক: হযরত মাওলানা মোহাম্মাদ যাকারিয়া রহ.
৩-কিভাবে কাটাবেন মাহে রমাজান
লেখক: শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তাকী উসমানী
৪- জালিসুকা ফি রামাযান।
৫-সিয়াম ও রমযান ফায়ায়েল ও মাসায়েল মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা
৬-রমযান বিষয়ক ৪০টি খুতবার সংকলন এবং তোহফায়ে রমযান: আত্মশুদ্ধির তিরিশ পাঠ লেখক: ড. আয়েয আল-কারনী।
টিএ/