আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: বিএনপির এমপিদের পদত্যাগে শূন্য হওয়া জাতীয় সংসদের ছয়টি আসনের উপনির্বাচনে দুইটি আসন ১৪ দলের শরিকদের ছেড়ে দিয়েছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে কেন্দ্র থেকে জোট প্রার্থীদের সমর্থন দেওয়া হলেও মাঠের চিত্র ছিল ভিন্ন।
ভোটের মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ‘নির্লিপ্ততার’ অভিযোগ আনা হচ্ছে শরিকদের পক্ষ থেকে। তাদের অভিযোগ, শরিকদের আস্থায় নিতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয়ভাবে যে উদ্যোগ নিয়েছিল, তৃণমূলের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার কারণে সেটি সফল হয়নি। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ১৪ দলের পারস্পরিক ঘাটতির বিষয়টিও নতুন করে সামনে এসেছে।
গত বুধবার ওই ছয় আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ-রানীশংকৈল আংশিক) আসনে ১৪ দলের প্রার্থী ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ইয়াসিন আলী। শুধু পরাজিত নয়, বরং নির্বাচনে জামানত হারিয়েছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টিতে নানা ধরনের আলোচনা হচ্ছে।
তবে আগামী নির্বাচনের কথা বিবেচনায় বিষয়টি নিয়ে এখনই প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চান না দলটির নেতারা। অন্যদিকে শরিক দল জাসদকে ছেড়ে দেওয়া বগুড়া-৪ আসনের ফলাফলও খুব একটা আশানুরূপ নয়। হিরো আলমের মতো একজন প্রার্থীর কাছে সামান্য ব্যবধানে জিতেছেন জাসদের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন।
মাত্র ৮৩৪ ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন হিরো আলম। একতারা প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৫৭১ ভোট। আর দলীয় মশাল প্রতীক নিয়ে ২০ হাজার ৪০৫ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন রেজাউল করিম তানসেন। নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ২৩ দশমিক ৯২ শতাংশ।
১৪ দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জোটে আওয়ামী লীগের পর বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। জোটগত কোনো বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার ক্ষেত্রে অধিকাংশ শরিকরা এই দুই দলের শীর্ষ নেতাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন।
সর্বশেষ ছয় আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছে জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি ছাড়া ১৪ দলের অন্য কোনো দল আসন চায়নি। অন্যদিকে জাতীয় পার্টিও অনানুষ্ঠানিকভাবে আসন চায়। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তিনটি আসনে প্রার্থী দিয়ে দুটি আসন শরিকদের দেওয়া হয়েছে। অন্যটি উন্মুক্ত রাখা হয়েছে রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে।
সেই সময় অনেকেই এটাকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শরিকদের খুশি রাখার কৌশল হিসেবে মূল্যায়ন করেছিল। কিন্তু নির্বাচনের আগে তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়ে সন্তুষ্ট ছিল না শরিক দলের প্রার্থী ও নেতারা। এ নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করতে দেখা গেছে তাদের।
শরিকদের দুই আসনে নির্বাচন, এর ফলাফল এবং এমন ফলাফলের কারণ বিশ্লেষণ করে ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর কাছে উপস্থাপনের পরিকল্পনা করছে ওয়ার্কার্স পার্টি। এ ছাড়া ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করে আগামী নির্বাচনের আগে তা সমাধানে কাজ করার উদ্যোগ নিতেও প্রস্তাব করা হতে পারে।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, নির্বাচনের ফলাফল মূল্যায়নের জন্য এরই মধ্যে জেলা কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের শুক্রবারের মধ্যে কেন্দ্রে রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে। সেটি আসার পরে নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে আমাদের অবস্থান তুলে ধরব।
ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাফিজউদ্দীন আহম্মেদ ৮৪ হাজার ৪৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী গোপাল চন্দ্র রায় পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩০৯টি ভোট।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই আসটিতে আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান থাকার পরেও শুধু জোটের রাজনীতির কারণে এটি বারবার শরিকদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এবার ১৪ দলের ইয়াসিন আলীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর আগের নির্বাচনগুলোতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাফিজউদ্দীন আহম্মেদকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দেওয়া হয়েছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, হাতুড়ি মার্কা প্রার্থীকে জেতানোর দায়িত্ব কী আমাদের। যেহেতু আমাদের দলের পক্ষ থেকে ওয়ার্কার্স পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তাই জিতে আসার দায়িত্ব তাদের। কেন্দ্র থেকে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চিঠি দিয়ে সবাইকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা চাপা ক্ষোভ আগে থেকেই বিরাজ করছিল। এজন্য নেতাকর্মীরা ভোটের মাঠে সেভাবে ছিল না।
১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হন। তাই অনেকেই মনে করেন পুরোনো সব ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ এবারের নির্বাচনে ঘটিয়েছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ পীরগঞ্জ শাখার সভাপতি গোপাল চন্দ্র রায়। তিনি এই নির্বাচনে ৫০ হাজার ৩০৯ ভোট পেয়েছেন।
এটিকে ১৪ দলের আরেকটি সমস্যা বলে মত দিয়েছেন শরিক দল ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আওয়ামী লীগ আসনটি ওয়ার্কার্স পার্টিকে ছেড়েছে না কি ১৪ দলকে ছেড়েছে সেটা আগে বুঝতে হবে। কারণ মনোনয়ন দেওয়ার আগে বা পরে এই বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সিরিয়াসলি মাঠে নেমেছিল এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাসদের একজন নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নির্লিপ্ত ছিল। স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেকেই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছে। কেন্দ্র থেকে বলার পরেও অনেকেই নীরব ছিল। যার প্রভাব ভোটের মাঠে পড়েছে। জাসদের প্রার্থীকে পরাজিত করতে আনকোরা এক প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছে অনেকে।
-এটি