আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ভোক্তাদের আপত্তি উপেক্ষা করে বিদ্যুতের পাইকারি দর বৃদ্ধির পথ ধরেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। পাইকারি দর বাড়ানোর প্রস্তাব নাকচ করে বাহবা নেওয়ার ১ মাস ৮ দিনের মাথায় নিজের অবস্থান থেকে সরে আসলো বিইআরসি।
সোমবার (২১ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুতের নতুন পাইকারি দর ঘোষণার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। বিইআরসি সুত্র জানিয়েছে, প্রায় ২০ শতাংশ দাম বাড়তে পারে। আরেকটি সুত্র জানিয়েছে ১৯.৯১ শতাংশ বাড়ানোর কথা। এই দাম বৃদ্ধির ঘোষণায় গ্রাহক পর্যায়ে কোন প্রভাব পড়বে না। তবে পাইকারি দাম বৃদ্ধি হলে কোম্পানিগুলো তাদের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে হাজির হবে। ইতোমধ্যেই যার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) পাইকারি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের উপর গত ১৮ মে গণশুনানি গ্রহণ করে বিইআরসি। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) বর্তমান দর ইউনিট প্রতি ৫.১৭ টাকা থেকে ৬৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৮.৫৮ টাকা করার আবেদন করে। বিপিডিবির এই প্রস্তাব গ্যাসের আগের দর ইউনিট প্রতি ৪.৪৫ টাকা বিবেচনায়।
ওই প্রস্তাবের পর ইউনিট প্রতি গ্যাসের দাম বৃদ্ধি হয়েছে ৫৭ পয়সা করে। বিইআরসি টেকনিক্যাল কমিটি ভর্তুকি ছাড়া ৮.১৬ টাকা করার মতামত দেয়। অতীতে কখনও এতো বেশি পরিমাণে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়ার নজির নেই। ২০ শতাংশ দাম বৃদ্ধি হলেও তাও হবে নজির বিহীন। সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের পাইকারি দর ইউনিট প্রতি ৫.১৭ টাকা নির্ধারণ করে।
বিপিডিবির পাইকারি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চাহিদা মতো গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে খরচ বেড়ে গেছে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বিদ্যুতে গড় উৎপাদন খরচ ছিল ২.১৩ টাকা, ২০২০-২১ অর্থ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.১৬ টাকায়। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, কয়লার মুসক বৃদ্ধির কারণে ২০২২ সালে ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচ দাঁড়াবে ৪.২৪ টাকায়। পাইকারি দাম না বাড়লে ২০২২ সালে ৩০ হাজার ২৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকা লোকসান হবে।
১৮ মে শুনানিতে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, ভোক্তার প্রতিনিধিরা এই মুহুর্তে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির জোন বিরোধিতা করে। তাদের বক্তব্য ছিল, দ্রব্যমূল্য উর্ধগতির কারণে ভোক্তারা এমনিতেই চাপে রয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়লে আরেক দফায় সবকিছুর দাম বেড়ে যাবে।
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কোন যৌক্তিকতা দেখছেন না ক্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল আলম। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, ব্যয়বহুল বলে ডিজেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে, একই কারণে স্পর্ট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ। এখনতো বিদ্যুতের দাম কমানো উচিত।
পাইকারি দাম বৃদ্ধিকে কোম্পানিগুলো ঘুটি হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। সাধারণত সরবরাহকৃত বিদ্যুতের পরিমাণকে বিবেচনায় নিয়ে বিতরণ কোম্পানির রাজস্ব নির্ধারণ করা হয়। সরবরাহকৃত বিদ্যুতের দামের সঙ্গে বিতরণ কোম্পানির পরিচালন ব্যয় যোগ-বিয়োগ করে খুচরা দাম নির্ধারণ করা হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দেওয়ায় বিতরণ কোম্পানিগুলো রাজস্ব কমে গেছে।
পাইকারি দাম বৃদ্ধি পেলে সেই সুযোগে কম উৎপাদনকে সামনে এনে বেশি করে দাম বৃদ্ধির চাইবে। যা কৌশলগতভাবে উপেক্ষা করার সুযোগ থাকবে না।
বিইআরসির সদস্য মোহাম্মদ আবু ফারুক বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, ৩টি কারণে বিদ্যুতের পাইকারি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব বাতিল করেছিলাম। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ব্যাখ্যাসহ রিভিউয়ের আবেদন করেছে। কমিশন বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্তে এসেছে। সোমবার এ বিষয়ে আদেশ দেবে বিইআরসি।
-এটি