আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: গ্রামীণ এলাকার ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের প্রায় ৩৩ শতাংশ শিশুই ইন্টারনেট ব্যবহার করে। একইসঙ্গে তাদের মাঝে কমপক্ষে একটি, দুটি বা তিনটি সাইবার অপরাধের প্রবণতা ছিল যথাক্রমে ৫৯ শতাংশ, ৩৮ শতাংশ এবং ২৬ শতাংশ।
আজ বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব শিশু দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘অনলাইনে শিশু নির্যাতন’ শীর্ষক এই গবেষণা উপস্থাপন করেন বিশ্ব বিদ্যালয়ের চিকিৎসক ডা. মুহাম্মদ ইব্রাহীম ইবনে তৌহিদ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গ্রাম এলাকার ৪৬০ জন শিশুর ওপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা বেশি শিকার হয় এমন বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধের মধ্যে ছিল উৎপীড়ন, উপহাস, গুজব কিংবা অপমান (৩৫ শতাংশ), অসৎ উদ্দেশ্যে বেনামে যোগাযোগ (২৯ শতাংশ), যৌন-নিপীড়নমূলক বার্তা কিংবা মন্তব্য (১১ শতাংশ) এবং যৌনতাপূর্ণ ছবি বা ভিডিও (১৭ শতাংশ)।
ডা. মুহাম্মদ ইব্রাহীম জানান, সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সরকারের নীতির কারণে, ইন্টারনেট ব্যবহারের হার অনেক বেড়েছে। ইন্টারনেট সম্পর্কে কম জ্ঞান এবং সঠিকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারার কারণে, অপরাধীরা ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইমো এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শিশুদেরকে নির্যাতন করতে সক্ষম হয়।
২০২১ সালে বাংলাদেশের শহর ও গ্রামের ৪৫৬ জন শিক্ষার্থীর (নবম ও দশম শ্রেণি) ওপর পরিচালিত আরেকটি গবেষণা থেকে পাওয়া যায়, ৫৬ শতাংশ কিশোর এবং ৬৪ শতাংশ কিশোরী ইন্টারনেট মাধ্যমে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। শহরে শিশুদের মধ্যে ইন্টারনেটে যৌন নিপীড়নের ঘটনা গ্রামীণ শিশুদের চেয়ে দেড় গুণেরও বেশি।
গবেষণাটিতে উল্লেখ করা হয়, যেসব শিশু ফেসবুক, টিকটক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং চ্যাটরুম ব্যবহার করে তাদের ইন্টারনেট মাধ্যমে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
এছাড়াও ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সী ২৪ জন শিশুর ওপর পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, শিশু নির্যাতন সামাজিকভাবে স্বীকৃত একটি গতানুগতিক এবং কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতা যার মারাত্মক শারীরিক এবং মানসিক প্রতিক্রিয়া আছে। বিশেষত কমবয়সী শিশু, মেয়ে-শিশু এবং গরীব শিশু তুলনামূলক বেশি ঝুঁকিতে থাকে। পরিবার, খোলা এবং কর্মক্ষেত্রে তারা নিম্নস্তরে এবং নিম্ন অবস্থানে থাকায় তাদের কথায় গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
ডা. মুহাম্মদ ইব্রাহীম আরও বলেন, শিশুর ১৮ বছর বয়সের আগে ঘটে যাওয়া আঘাতমূলক এবং পীড়াদায়ক ঘটনা যা শিশুর উপর মানসিক, শারীরিক এবং যৌন নির্যাতন, মানসিক এবং শারীরিক অবহেলা, পিতামাতার বিচ্ছেদ, মায়ের প্রতি সহিংসতা, বাড়িতে মাদকের ব্যবহার, পরিবারে মানসিক রোগী থাকা এবং পরিবারের সদস্যদের কারাবাস- এ বিষয়গুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত।
এ সময় বক্তারা বলেন, শিশু নির্যাতন একটি নিত্যনৈমিত্তিক এবং বেদনাদায়ক ঘটনা যা বাংলাদেশি সমাজে সর্বজন স্বীকৃত। কমবয়সী শিশু, মেয়ে এবং দরিদ্র শিশুরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়। শিশুদের সবসময় ছোট এবং বাবা-মার অধীনস্থ মনে করা হয়, তাই পরিবার, স্কুল এবং কর্মক্ষেত্রে কোথাও তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
আরও বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন বাংলাদেশি পিতা-মাতারা অর্থনৈতিক, শারীরিক এবং মানসিক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন যা তাদের অনেক বেশি উদ্বিগ্ন করে তুলেছে, এবং শিশু নির্যাতনের সম্ভাবনাকেও বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের শিশুদের সামাজিক ও পারিবারিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের অধিকার খুবই সামান্য; বস্তি এলাকায় বসবাসকারী মাত্র ৭ শতাংশ ছেলে শিশু এবং ৪ শতাংশ মেয়ে শিশু তার নিজ এলাকার কার্যক্রমে অংশগ্রহণের অধিকার আছে। মাত্র ০.৫ শতাংশ শিশুর নিজস্ব টয়লেট রয়েছে, যা বস্তি এলাকায় মৌলিক চাহিদা মেটানোর অধিকার বিঘ্নিত হওয়ার ঘটনাকে চিত্রিত করে।
-এসআর