আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: গত এপ্রিলে সংসদে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবে ক্ষমতা হারানোর পর থেকেই ইমরান খান অভিযোগ করে আসছিলেন তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পেছনে পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের হাতও রয়েছে। তার অভিযোগ, বিরোধীরা, যুক্তরাষ্ট্র এবং সেনাবাহিনী মিলে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার এই ষড়যন্ত্র করেছে। এবার ইমরান খান সেনাবহিনীর বিরুদ্ধে তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুললেন।
ইমরান খান তার ওপর হামলার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহর পাশাপাশি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ে কর্মরত শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ফয়সাল নাসিরকেও দায়ী করেছেন। ইমরান খানের অভিযোগ তাকে হত্যাচেষ্টার পেছনে এই শীর্ষ সেনা কর্মকর্তার হাতও রয়েছে। ইমরানের এই অভিযোগে চটেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী।
ইমরান খানের বক্তব্য ‘ভিত্তিহীন ও অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ (আইএসপিআর) পরিদপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, সামরিক বাহিনী এবং বিশেষ করে একজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পিটিআই চেয়ারম্যানের ভিত্তিহীন ও দায়িত্বজ্ঞানহীন অভিযোগ একেবারেই অগ্রহণযোগ্য ও অযাচিত।
এতে বলা হয়, ‘কিন্তু স্বার্থান্বেষীমহল যদি ভিত্তিহীন অভিযোগের মাধ্যমে বাহিনীর কোনো সাধারণ সদস্যেরও সম্মান, নিরাপত্তা ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে, তাহলে যেকোনো কিছুর বিনিময়ে প্রতিষ্ঠান তার কর্মকর্তা ও সেনাদের জন্য ঢাল হয়ে দাঁড়াবে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, আজকে সামরিক বাহিনী ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং খুবই নিন্দনীয়। সামরিক বাহিনী কিংবা কোনো সেনার মানহানি করে কাউকে পার পেয়ে যেতে দেওয়া হবে না।
এতে আরও বলা হয়, ‘বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে ঘটনাটি তদন্তের জন্য এবং কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই বাহিনী ও এর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানহানি ও মিথ্যা অভিযোগের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, সপ্তাহখানেকে আগে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গেও ইমরানের বচসা হয়। ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছিলেন পাকিস্তানের সামরিক গুপ্তচর শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম আহমেদ অঞ্জুম। তিনি দাবি করেন, ইমরান খান সেনাবাহিনীর সমালোচনা করছেন, কারণ সেনাবাহিনী তার কথা মতো অসাংবিধানিক কাজ করতে সম্মত হয়নি। শুধু তাই নয়, আইএসআই প্রধান আরও অভিযোগ করেন, নিজের সরকার টিকিয়ে রাখতে সহায়তার বিনিময়ে সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়াকে একটি ‘লোভনীয়’ প্রস্তাবও দিয়েছিলেন ইমরান।
এরপর গত ২৮ অক্টোবর লাহোরে এক সভায় আইএসআইকে পালটা জবাব দিয়ে ইমরান বলেন, ‘আমি দেশের মঙ্গলের জন্য ইতিবাচক সমালোচনা করি। অন্যথায় আমার কাছে বলার মতো অনেক কথা আছে। চাইলে আইএসআইয়ের মুখোশ খুলে দিতে পারতাম। কিন্তু দেশের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এই কাজ করিনি।’
এবার ইমরান খান আইএসআইয়ের একজন মেজর জেনারেলের বিরুদ্ধেই সরাসরি তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুললেন। ক্ষমতা হারানোর আগে ইমরান খান আইএসআইয়ের প্রধান কে হবেন তা নিয়েও সেনা প্রধানের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছিলেন। আর সেনাবাহিনীর সঙ্গে ওই বিবাদের জেরেই ইমরান খান ক্ষমতা হারান বলে ধারণা করা হয়।
কথিত আছে যে, পাকিস্তানের রাজনীতির প্রধান তিন নিয়ন্ত্রণকর্তা হলো- ধর্ম, সেনাবাহিনী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সিদ্ধান্ত থেকে শুরু করে দলত্যাগ, সবকিছুই এই তিন নিয়ন্ত্রণকর্তার মর্জি মাফিক হয়ে থাকে।
-এটি