আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনীতিতে। দল গুছিয়ে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
অন্য সময়ের তুলনায় এবারের নির্বাচনে অধিক আলোচনায় থাকবে ইসলামি দলগুলোর অংশগ্রহণ।
সাম্প্রতিক সময়ে অধিকাংশ ইসলামি দল নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদসহ নানা ইস্যুতে রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে।
সাংগঠনিকভাবে নিজেদের শক্তিশালী করতে নীরবে ঘর গোছানোর কাজও শেষ করে এনেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। চলতি মাসেই কর্মসূচি দেয়ার কথা রয়েছে।
ইসলামি ও সমমনা ৯ দল নিয়ে জোট গঠনে তৎপর চরমোনাই পিরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
সূত্রমতে, নয়টি ইসলামি ও সমমনা দল নিয়ে জোট করার চেষ্টা করছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে দলটি বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, এবি পার্টি, এনডিপি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (মনসুরুল-ইকরাম) ও এনডিএফ-এর সঙ্গে বৈঠক করেছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবির বিষয়ে মোটামুটি সব দলই একমত। এখন দলগুলোর সঙ্গে জোট করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। আবার তাদের সঙ্গে নির্বাচনি সমঝোতাও হতে পারে।
নির্বাচনি কর্মসূচির ব্যাপারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে জানান আমরা ইসলামি ও সমমনা দলের সঙ্গে জোট করার চেষ্টা করছি।বেশ কয়েক বার বৈঠকও হয়েছে। আবারও এক টেবিলে বসার চিন্তাভাবনা করছি।
মূলত দেশে সুন্দর ও স্বচ্ছ একটি নির্বাচন চাই। এজন্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিকল্প পথ নেই। কারণ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে সম্পূর্ণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তা ইতোমধ্যে প্রমাণিত। সুতরাং এ দাবিসহ দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতি, বর্তমান শিক্ষানীতির মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষা ঐচ্ছিক রাখার প্রতিবাদসহ নানা দাবিতে আমরা রাজপথে আছি, ভবিষ্যতে থাকব।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ নানা ইস্যুতে কয়েকদিনের মধ্যে কর্মসূচি দেওয়া হবে। আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যতীত বাংলাদেশে কোনো নির্বাচনই গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ হয় না।
এই সরকার ১৪ বছর ধরে তা তাদের আচরণে প্রমাণ করেছে। কাজেই মধ্যরাতের নির্বাচন আর বিনা ভোটের নির্বাচন-এগুলোর হাত থেকে জাতিকে উদ্ধার করতে হবে। এজন্য কেয়ারটেকারের মাধ্যমে নির্বাচন দিতে হবে।
বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৩৯টি। এর মধ্যে ইসলামি বা ইসলামপন্থি দল ১০টি। নিবন্ধনের বাইরে ইসলামি দল বা সংগঠন কতগুলো, এর কোনো পরিসংখ্যান নেই।
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ইসলামি দলগুলো হচ্ছে-ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, জাকের পার্টি ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের সঙ্গে রয়েছে খেলাফত মজলিস ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (একাংশ)। আর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটে রয়েছে তরিকত ফেডারেশন। ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস একসময় বিএনপির জোটে ছিল।
বর্তমানে তারা স্বতন্ত্র অবস্থানে। যদিও এখনো খণ্ডিত একটি অংশ ২০ দলে রয়েছে। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও জাকের পার্টিও স্বতন্ত্রভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
বর্তমানে ইসলামি দলগুলোর মধ্যে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী চরমোনাই পিরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সংগঠন শক্তিশালীকরণে জোর দিচ্ছেন দলের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিম। দলীয় সরকারের অধীনে হওয়ায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি দলটি। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ আসনে প্রার্থী দেয়। অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচনের দিন ভোট বর্জন করে। বর্তমানে ইসলামী আন্দোলন বিভিন্ন ইস্যুতে মাঠে সরব।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতে ইসলামী। শীর্ষ থেকে তৃণমূলের প্রায় সব নেতাকর্মী মামলায় জর্জরিত। দলের সেক্রেটারিসহ শীর্ষ বেশ কয়েকজন নেতা এখনো কারাগারে রয়েছেন। সূত্র জানায়, দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা কমবেশি সবাই বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের আড়ালে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় রয়েছে জামায়াত।
আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরেও নানা প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। ঢাকা মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নানা ইস্যুতে রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করছে। এছাড়াও দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান নিজে নেতাকর্মীদের নিয়ে সিলেটে বন্যাদুর্গত এলাকায় সহযোগিতা, পঞ্চগড়ে নৌকাডুবির ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে অর্থ সহায়তা করেছেন। তিনি সাংগঠনিক কাজে বিভিন্ন জেলা সফরও করছেন। যদিও বিনা বাধায় এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে দলের মধ্যে নানা গুঞ্জনও রয়েছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির ঢাকা মহানগরীর এক নেতা বলেন, সরকার তাদের মাঠে নামতে দিচ্ছে না, নানাভাবে বাধা দিচ্ছে। তারপরও কৌশলে নানা ইস্যুতে কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমেদ আব্দুল কাদের বলেন, আমাদের দাবি নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এটা জনগণও চায়। আমরা জনগণের পক্ষে। এই দাবিতে আমরা আলাপ-আলোচনা করে আগামী দিনে কর্মসূচি দেব।
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছি। নির্বাচনি প্রস্তুতির অংশ হিসাবে সারা দেশে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম ইতোমধ্যে গতিশীল করা হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনিব্যবস্থার আমূল সংস্কার দরকার।
শুধু সাময়িক অথবা ক্ষণিকের যে ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, এটা দ্বারা দেশের মধ্যে স্থায়ী শান্তি অথবা স্থায়ী সমৃদ্ধির বিষয়টি বাস্তবায়ন করা যায় না।
ইসলামি দলগুলোর নেতারা আরও জানান, বর্তমানে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো স্বাধীন ও স্বাভাবিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিকূলতা আরও বেশি। তবে তাদের মতে, বর্তমানে ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো জনসম্পৃক্ততা তৈরি করা। জনগণকে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে বেশি বেশি সম্পৃক্ত করা।
-এটি