আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের মানবাধিকার লঙ্ঘন ইস্যুতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে অর্থাৎ ইউএনএইচআরসিতে চীনের বিরুদ্ধে আনা একটি প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত গৃহীত হয়নি। পাকিস্তান-ইন্দোনেশিয়াসহ মুসলিম কয়েকটি দেশও ওই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে।
প্রস্তাবটি পাস হলে মার্চে পরবর্তী অধিবেশনে উইঘুর মুসলমানদের মানবাধিকার লঙ্ঘন ইস্যুতে আলোচনা হতো, কিন্তু ৪৭ সদস্যের কাউন্সিলে ১৭টি দেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় এবং ১৯টি দেশ এর বিপক্ষে ভোট দেয়।
যে ১৯টি দেশ এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়ে চীনকে সমর্থন করেছে, তাদের বেশিরভাগই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। অথচ জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোও এই প্রস্তাবের সমর্থনে এবং চীনের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল।
সম্প্রতি জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার মিশেল ব্যাশেলেত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। প্রতিবেদনে জিনজিয়াং নিয়ে বেইজিংয়ের নীতি মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়ে থাকতে পারে বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় তাঁর মেয়াদের একেবারে শেষ প্রান্তে গত ৩১ আগস্টে। এতে তুলে ধরা হয় জিনজিয়াংয়ে বসবাসকারী উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ নির্যাতন, ইচ্ছেমতো আটকে রাখা, ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘন এবং সন্তান জন্মদানের অধিকার লঙ্ঘনের কথা তুলে ধরা হয়।
বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করে আসছে। তবে বরাবরই জোর দিয়ে এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে বেইজিং। তারা বলেছে, ওই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় প্রশিক্ষণকেন্দ্র পরিচালনা করছে তারা।
মিশেল ব্যাশেলেতের প্রতিবেদন প্রকাশের পর তা নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ নেয় যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলো। কিন্তু ৪৭ সদস্যের জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে এ প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক জমে উঠলেও তা বাতিল হয়ে যায়। প্রস্তাবের পক্ষ ভোট পড়ে ১৭টি। বিরুদ্ধে ১৯ ভোট। এতে ভোটদানে বিরত ছিল ১১টি দেশ।
এই প্রস্তাব ভেস্তে যাওয়ার পর বিবৃতি জারি করেছে চীন। এতে তারা বলছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ‘পরিষ্কারভাবে সচেতন’ যে যুক্তরাষ্ট্র ও কিছু পশ্চিমা দেশ জিনজিয়াংয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগটিকে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করতে চায়।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য কিছু পশ্চিমা দেশ জিনজিয়াং সম্পর্কে মানুষের মধ্যে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিতে চায় যাতে চীনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এবং এর উন্নয়ন সীমিত করা যায়। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করা যাবে না।
যে ১৯টি দেশ চীনের বিরুদ্ধে আনা প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে, তার মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়া, আরব বিশ্বের কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো মুসলিম দেশ রয়েছে। একই সঙ্গে পাকিস্তান, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তানের মতো মুসলিম প্রধান দেশগুলোও চীনকে সমর্থন করেছে।
চীনের বিরুদ্ধে এই প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটির সময় মোট ১১টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল। এর মধ্যে রয়েছে ভারত, লিবিয়া, গাম্বিয়া, মালয়েশিয়া ও মেক্সিকোর মতো দেশ।
-এটি