বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


৯ মাসে ৪০৪ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ৪০৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। যার মধ্যে নারী শিক্ষার্থী রয়েছেন ২৪২ জন।

আজ শনিবার (৮ অক্টোবর) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের ‘মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর একাডেমিক চাপের প্রভাব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা’ শীর্ষক জরিপে এ তথ্য উঠে আসে।

সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও আঁচল ফাউন্ডেশনের গবেষক ড. এ ওহাব। এসময় আরও যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক (অব.) ড. মো. মাহমুদুর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহনেওয়াজ খান চন্দন এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৯ মাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক বেড়েছে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আত্মহত্যা করেছেন ৪০৪ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৭ শিক্ষার্থী, স্কুলের ২১৯, মাদরাসার ৪৪ জন এবং কলেজ পড়ুয়া ৮৪ জন। আত্মহননকারীদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ২৪২ জন এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ১৬২ জন।

শিক্ষার্থীদের ওপর একাডেমিক চাপ তাদের আত্মহত্যার পেছনে কতটুকু দায়ী এবং অন্যান্য কী কী কারণ জড়িত, তা জানার লক্ষ্যেই এ গবেষণা জরিপ পরিচালিত হয়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধরন বিবেচনায় জরিপে মোট অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের। এছাড়াও ২৩ দশমিক ৪১ শতাংশ শিক্ষার্থী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের, ২ দশমিক ২৬ শতাংশ মেডিকেল শিক্ষার্থী এবং বাকিরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, কারিগরি এবং মাদরাসার।

জরিপে অংশ নেয় ৩৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৪৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ মাদরাসা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মোট ১ হাজার ৬৪০ জন শিক্ষার্থী।

জরিপে দেখা গেছে, মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষাজীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জরিপে মানসিক সুস্থতা বিষয়ক বেশ কয়েকটি নিয়ামক নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাওয়া হলে উত্তরে উঠে আসে উদ্বেগজনক কিছু তথ্য। মোট অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৭ দশমিক ৯৯ শতাংশই জানিয়েছেন যে তাদের নিজস্ব শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অতিরিক্ত ভয় ও উদ্বেগ তাদের জীবনকে প্রভাবিত করেছে। এর পাশাপাশি দৈনন্দিন আচার-আচরণ ও ব্যবহারে পরিবর্তন, যেমন- মন খারাপ হওয়া, হঠাৎ ক্লান্তি আসা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে শিক্ষাজীবনে প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন ৮০ দশমিক ৭৯ শতাংশ শিক্ষার্থী।

করোনা পরবর্তী সময়ে ১ হাজার ৬৪০ জন শিক্ষার্থীন মধ্যে ৪০ জন বা ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তারা আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। আত্মহত্যার উপকরণ জোগাড় করেও শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে এসেছেন বলে জানিয়েছেন ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। করোনা পরবর্তী সময়ে আত্মহত্যা করার কথা মাথায় এসেছে ৩৪ দশমিক ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর।

শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির জন্য দায়ী যে সমস্যাগুলো জরিপে উঠেছে এসেছে, তা মোটামুটি চার ধরনের। সেগুলো হলো- একাডেমিক চাপ, আর্থিক সংকট ও ক্যারিয়ার দুশ্চিন্তা এবং শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ। আঁচল ফাউন্ডেশন সে বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সমস্যা সমাধানে কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরে।

সংস্থাটি তাদের প্রস্তাবনায় বলছে, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাভাবিক ও ইনফরমাল সম্পর্ক তৈরি করা, অতিরিক্ত সিলেবাস কমিয়ে যথাসময়ে পরীক্ষা সম্পন্ন করে সেশনজটমুক্ত করা, পড়াশোনাকে আনন্দময় ও বাস্তবমুখী করা, প্রথাগত সিলেবাসের পরিবর্তে চাকরি বাজারের উপযোগী সিলেবাস প্রণয়ন, শিক্ষাঋণ চালু করা, স্ব স্ব ক্যাম্পাসে খণ্ডকালীন চাকরির ব্যবস্থা করা, ক্যারিয়ার গঠনে পরামর্শ ও সহায়তা পেতে বিভাগের উদ্যোগে অ্যালামনাইদের সঙ্গে যোগাযোগ জোরদার করা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ এবং মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে বিভিন্ন সভা সেমিনার আয়োজন করা।

-এসআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ