নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, রাসূল সা.-এর আদর্শ অনুসরণের মাঝেই মানবজাতির কল্যাণ ও মুক্তি নিহিত রয়েছে। তিনি বলেন, ইসলামী শরিয়ত ও সৃষ্টির সেরা নবী মুহাম্মদ সা.-এর মাধ্যমে অন্যান্য শরিয়ত ও আম্বিয়ায়ে কেরামের ধারাকে সমাপ্ত করা হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হজরত মুহাম্মদ সা.-কে বিশ্ববাসীর জন্য আদর্শ, অনুকরণীয় ও রহমতস্বরূপ শেষনবী ও সব নবী রাসূলের ইমাম হিসেবে প্রেরণ করেছেন। তিনি হচ্ছেন ন্যায়বিচারক, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশক্রমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দিকে আহ্বানকারী ও উজ্জ্বল প্রদীপস্বরূপ। সুতরাং দুনিয়ার তথাকথিত ও প্রচলিত তন্ত্রমন্ত্র কখনোই মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। মানবজাতির কল্যাণ ও মুক্তি একমাত্র রাসূল সা.-এর আদর্শ অনুসরণের মাঝেই নিহিত।
আজ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ শুক্রবার, বিকেলে রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে জাতীয় সীরাতুন্নাবী সা. সম্মেলন ২০২২ উপলক্ষে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত এক আলোচনা সভা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সীরাত গবেষক ও জাতীয় ইকরা বাংলাদেশ-এর মহাপরিচালক আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, ভারতের বিশিষ্ট সীরাত গবেষক আল্লামা ফয়সাল আহমাদ ভাটকলী নদভী, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, শায়খ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মুফতী মিজানুর রহমান সাঈদ, বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ডের মহাসচিব আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা মুহিব্বুল্লাহিল বাকী আন-নদভী, দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, নন্দিত লেখক মাওলানা যাইনুল আবিদীন, সীরাত গবেষক মাওলানা নাসীম আরাফাত, সীরাত গবেষক মাওলানা আহমদ বদরুদ্দিন খান, বিশিষ্ট গবেষক মাওলানা ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মুসা, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মাওলানা মুসা আল হাফিজসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, বর্তমান বিশ্বে একটি শ্রেণি আধুনিকতার নামে বিশ্বকে অশান্ত করে রেখেছে। একটি দেশের সাথে আরেকটি দেশের যুদ্ধ লাগিয়ে দিচ্ছে। যার কারণে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠির মাঝে সংঘাত-হানাহানি, গৃহহারাদের হাহাকার এবং নির্যাতিত অসহায়দের আত্মচিৎকারে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠছে। এ আধুনিক বিশ্বের আচরণ যেন সাড়ে চৌদ্দশত বছর আগের ‘বর্বরতার’ যুগকেও হার মানায়। তিনি বলেন, সাড়ে চৌদ্দশত বছর আগের অজ্ঞ ও বর্বর জাতিকে রাহমাতুল লিল আলামীন মুহাম্মদ সা. আল-কুরআনের বিধানের মাধ্যমে সু-সভ্য জাতিতে পরিণত করেছিলেন। কেননা ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন-বিধান। এ বিধানে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গন পরিচালনার জন্য সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আর রাসূল সা. তার নবুওয়াতি জীবনে এ সকল বিধানের বাস্তব প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন। রাসূল সা. হিজরতের পর ‘মদিনা রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং সে রাষ্ট্রের সাথে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন গোত্রের সাথে সন্ধিতে আবদ্ধ হন। তিনি আরও বলেন, মুহাম্মদ সা.-এর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়ন নীতির মাধ্যমে তিনি বর্বরতার যুগেও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়ন করে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার বিধান করেছিলেন। আর তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য মুহাম্মদ সা.-এর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়ন নীতি অনুসরণ করা প্রয়োজন।
ইডেন কলেজে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রেক্ষিতে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, তথাকথিত তন্ত্রমন্ত্রের রাজনীতির খপ্পরে পড়ে মেয়েদের অবস্থা আপনারা সবাই দেখেছেন। বাবা-মা পাঠিয়েছে লেখাপড়ার জন্য আর তারা কিইবা শিখছে। তাদের চরিত্রের অবস্থা সম্পর্কে কম বেশি সচেতন নাগরিক সবাই আজ শঙ্কিত। এই যদি হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর শিক্ষার্থীদের অবস্থা তাহলে এদের কাছ থেকে জাতি কী আশা করবে?
তিনি বলেন, বর্তমানে নারীবাদীরা হিজাব-বোরখার উপরে আপত্তি তোলে। কিন্তু ইডেন কলেজের আমাদের মেয়েদের ইজ্জত আব্রুর ব্যাপারে প্রকাশিত বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ বা আলোচনা নাই। সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে কারো কোন টু-শব্দ পর্যন্ত নাই। আসলে ওরা নারীদের অধিকার চায় না, ভোগের বস্তু বানাতে চায়। এসময় তিনি সকলকে ইসলামী আদর্শের সুশীতল ছায়ায় জীবন ধারণে আহ্বান জানান।
সীরাতুন্নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মাসব্যাপী কুইজ প্রতিযোগিতা ও সীরাত লিখন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এছাড়াও দেশবরেণ্য সীরাত লেখকদেরকে সীরাত সম্মাননা ২০২২ প্রদান করা হয়।
কেএল/