মুযযাম্মিল হক উমায়ের।।
নাম— রাবেয়া। উপনাম— উম্মে আমর। অনেকে আবার উম্মে খায়েরও বলেছের। পিতার নাম— ইসমাইল আল—আতাকিয়্যা। তিনি লাল আতিক নামে একজনের আযাদকৃত বাদি ছিলেন। তিনি বসরার অধিবাসী। এই জন্য তাঁকে রাবেয়া বসরি নিসবতেই সকলের কাছে প্রসিদ্ধ। ইবাদত, বন্দেগি, তাকওয়া—পরহেজগারিতে তাঁর অনন্য মাকাম ছিলো।
উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। আল্লাহ তায়ালার সাথে মহব্বতের সম্পর্ক ছিলো। তিনি মুজতাবুদ্দাওয়াহ (যার দোয়া বিফলে যায় না) ছিলেন। হজরত সুফিয়ান ছাওরি রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা তাঁর সংশ্রবে যেতেন। বিভিন্ন দীনি বিষয়ে জানতে চাইতেন। তিনি তাঁর মতামতকে সাদরে গ্রহণ করতেন। তাঁর কথার উপর আস্থা ভরসা রাখতেন।
তিনি এবং তাঁর সমবয়সীরা তাঁর কাছ থেকে আদব শিক্ষাগ্রহণ করতেন। ১৮০ হিজরীতে ৮০ বছর বয়সে তিনি বসরা শহরে ইন্তিকাল করেন। বসরা শহরে তাঁর কবর রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তাঁর কবরকে জান্নাতের বাগান বানিয়ে দিন। আমাদের উপর তাঁর রুহানী ফয়েজ ও বরকত জারি রাখুন। আমীন।
১. হজরত জাফর বিন সুলাইমান রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা বলেন, হজরত সুফিয়ান ছাওরি রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা আমার হাত ধরে বলেন, আমাকে একজন ইবাদতগুজার বিনয়ী মহিলার কাছে নিয়ে যান, যার কাছ থেকে চলে আসলে আমি আর প্রশান্তি পাই না। যখন আমরা হজরত রাবেয়া বসরি রাহিমাহুল্লাহু তায়ালার কাছে যাই তখন হজরত সুফিয়ান বসরি রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা দুই হাত উঠিয়ে মুনাজাত শুরু করেন। মুনাজাতে তিনি বলতে থাকেন, اللَّهُمَّ إِنِّي أَسأَلك السَّلامَة (হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রশান্তি কামনা করি)
এই মুনাজাত শুনে হজরত রাবেয়া বসরি রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা কান্না শুরু করে দেন। হজরত সুফিয়ান ছাওরি রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা কান্নার কারণ জানতে চান। উত্তরে হজরত রাবেয়া বসরি রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা বলেন, আপনিই তো আমাকে কান্নার জন্য উদ্বোদ্ধ করেছেন। হজরত সুফিয়ান ছাওরি রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা বলেন, আমি কীভাবে উদ্বোদ্ধ করেছি? উত্তরে তিনি বলেন, আপনি কী জানেন না أَن السَّلامَة من الدُّنْيَا ترك مَا فِيهَا فَكيف وَأَنت متلطخ بهَا (দুনিয়াতে প্রশান্তি হলো দুনিয়া ত্যাগ করার মাধ্যমে অথচ আপনি দুনিয়ার সাথে জড়িয়ে পড়েছেন) তাহলে আপনি কীভাবে দুনিয়ায় প্রশান্তি পাবেন?
২. হজরত বাবেয়া বসরি রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা বলেনম, প্রতিটি জিনেসের একটি শেষ ফলাফল আছে। আল্লাহ তায়ালার মারেফতের শেষ ফলাফল হলো, আল্লাহ তায়ালার দিকে অভিমূখী হওয়া।
৩. হজরত রাবেয়া বসরি রাহিমাহুল্লাহু তায়ালার কাছে রাসূলের প্রতি তাঁর মহব্বতের পরিমান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে উত্তরে তিনি বলেন, আমি হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মহব্বত করি। তবে আমার সৃষ্টিকর্তার মহব্বত সৃষ্টির মহব্বত থেকে আমাকে দূরে রাখে।
৪. হজরত সুফিয়ান ছাওরি রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা হজরত রাবেয়া বসরি রাহিমাহুল্লাহু তায়ালার কাছে কোন্ জিনিস বান্দাকে আল্লাহ তায়ালার নিকটবর্তী করে দেয় জানতে চান। উত্তরে তিনি বলেন, দুনিয়া এবং পরকালে আল্লাহ তায়ালাকে ছাড়া অন্য কোনো কিছুকে মহব্বত না করা।
৫. হজরত সুফিয়ান ছাওরি রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা তাঁর কাছে এসে পরকাল বিষয়ে অনেক আফসোস ব্যক্ত করলেন। হজরত রাবেয়া বসরি এটি দেখে বললেন, তুমি মিথ্যা বলছো। বরং পরকাল বিষয়ে তোমার আফসোস কম এটি বলো। কারণ, প্রকৃতঅর্থেই যদি পরকাল বিষয়ে তোমার এমন আফসোস থাকতো তাহলে তুমি দুনিয়ায় এতো আয়েশী জীবন—যাপন করতে পারতে না। সুখ—স্বাচ্ছন্দ তোমাকে স্বাগত জানাতে পারতো না।
৬. তিনি একদিন বসরা শহরে পথ চলছেন। বেহায়াপনা কথার অপরাধে একজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছিলো। তিনি এই দৃশ্য দেখে বলেন, এটি কেমন জিহ্বা? যে জিহ্বা কালিমা বলার পরও বেহায়পনা কথা বলে?
৭. হজরত সালিহ আল—মুররি রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা একদিন তাঁর সামনে বলতে শুরু করেন, যে ব্যক্তি বারবার দরজায় করাঘাত করে একসময় তার জন্য দরজা খুলে দেওয়া হয়। এই কথা শুনে তিনি বলেন, ‘দরজা তো খোলাই আছে। তবে দরজা দিয়ে যারা প্রবেশ করতে চায় তাদের কাজ কেমন হবে এটিই দেখার বিষয়’। সূত্র: আত—তবাকাতুস সুফিয়্যা: পৃ. ৩৮৮—৩৮৯
৮. লোকজনের অন্তর দুনিয়ার ভালোবাসা নিয়ে ব্যস্ত। যদি লোকজন দুনিয়ার ভালোবাসা পরিহার করতে পারতো তাহলে তারা ফিরিস্তার মাকামে পৌঁছে যেতো। এবং তাদের অন্তরও প্রশান্ত হয়ে তাদের কাছে ফিরে আসতো। সূত্র: ইতিলালুল কুলুব: খ. ১, পৃ. ২৭
৯. হজরত রাবেয়া বসরি রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা বলেন, হে আল্লাহ! দুনিয়ায় আমার চিন্তা হলো একমাত্র তোমাকে নিয়েই। আর পরকালে আমার ফিকির হলো, তোমাকে দেখার জন্য। তারপর আমাকে যা করার তুমি করিও। সূত্র: আল—ফাতওয়া লি আবি আব্দুর রহমান আস—সুলামি: পৃ. ২৮
১০. আমাদের ইস্তিগফারের জন্য ইস্তিগফার করা প্রয়োজন। অর্থাৎ, আমাদের ইস্তিগফারও প্রকৃত ইস্তিসফার হয় না। সূত্র: ইহয়াউ উলুমিদ্দীন: খ. ৪, পৃ. ৪৯
-এটি