হাফেজ নাঈম উদ্দীন
আজ ইসলামের নবজাগরণের যুগে, বিশেষ করে পৃথিবীর নির্যাতিত মানবতা যখন মানবরচিত বস্তাপচা মতবাদের ব্যর্থতায় ইসলামকে তাদের একমাত্র ঠিকানা হিসেবে গ্রহণ করা শুরু করেছে। তখন দুনিয়াব্যাপী ইসলাম বিদ্বেষী একটি জনগোষ্ঠী নতুন প্রজন্মের সামনে ইসলামকে একটি সন্ত্রাসী ধর্ম হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
এখানে তারা সন্ত্রাসবাদের সাথে আরেকটি শব্দ নতুন মাত্রায় যোগ করেছে তা হল:-উগ্রতা বা উগ্রবাদ। তাদের প্রচারণার সময় দেখা যায় যে, তারা দাবি করে বসে ইসলামে সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে কোনরকম বক্তব্য নেই। অথচ ইসলাম হচ্ছে সর্বজনীন এবং শান্তির ধর্ম যেখানে সকল বিষয়ের সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা রয়েছে। ঠিক এমন প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসবাদ বিষয়টিকে কোরআন-সুন্নাহর নিরিখে বিশ্লেষণের দাবি রাখে।
তাহলে আসুন,জেনে নেওয়া যাক সন্ত্রাস কি? সন্ত্রাস শব্দটি ত্রাস থেকে উৎপত্তি অর্থাৎ ভয়ভীতি আতঙ্ক ও ভীতিকর অবস্থা। আল কুরআনে ব্যবহৃত [ফাসাদ] শব্দ থেকে এই অর্থ অনুধাবন করা যায়, আরবিতে [ফিতনা] শব্দটির ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। আল্লাহ তাআলা শিরক- কুফরকে ফিতনা বলেছেন। কুফরি ও শিরকি শয়তানি ধারণাই মানুষকে সন্ত্রাসে প্রলুব্ধ করেছে ও করছে।
তাই ফিতনা নির্মূলে তিনি লড়াই করার আদেশ ও দিয়েছেন। আধুনিক আরবিতে সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসবাদ বুঝাতে [ইরহাব ও ইরহাবিয়্যাহ]শব্দ ব্যবহার হয়।
সন্ত্রাসবাদ ইংরেজিতে টেরোরিজম নামে অভিহিত। [ফাসাদ] শব্দটি [আসসালামাহ] শব্দের বিপরীতে ব্যবহৃত হয়। বিদ্রোহ ,সীমালংঘন , ডাকাতি, ও ত্রাস সৃষ্টি যার শাস্তি হলো হত্যা। আর [ফিতনা ]শব্দটি শিরক, ফাসাদ।
আর হার্ব শব্দটির অর্থ ছিনিয়ে নেয়া। অতএব যুদ্ধ প্রক্রিয়ায় কাফেরদের সাথে আঁতাত করে মুসলমানদের ধোকা দেওয়া, মানুষ হত্যা ও তথ্য ফাঁস করে ঈমানের সঠিক রাস্তা থেকে বিরত রাখার নাম ফিতনা। [মাজহারী প্রথম খন্ড পৃষ্ঠা ২২]
সন্ত্রাস সূচনার উপমা আল কুরআন থেকে যদি নেয়া হয়। (সবচেয়ে প্রাচীন তথ্য সূত্র মতে) কোরআনই মানব সমাজে সর্বপ্রথম সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের তথ্য উন্মোচন করেছে।
তা হলো আদম সন্তান কাবিল কর্তৃক হাবিল এর হত্যাকাণ্ড। ঘটনাটি আল কুরআনে সূরা মায়েদার ২৭ নং আয়াত থেকে ৩১ নং আয়াত এর মধ্যে বর্ণিত হয়েছে।
মহাগ্রন্হ আল কোরআনে বর্ণিত প্রথম সংঘটিত এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত রিপোর্ট এই যে, কাবিল তখনকার সময়ে পরিবার ব্যবস্থায় বিয়ের ইসলামের রীতি মানতে অস্বীকার করেছে।
এটাই ছিল ন্যাচারাল ল'। সে তা ভঙ্গ করে আপন ভাইকে হত্যা করেছে ।সন্ত্রাসী কাজটি সে করেছে ইসলাম মানে নি বলে, শেষ পর্যন্ত হত্যা ও করেছে।
হত্যা করেছে তাকে যিনি ইসলামের প্রতি আনুগত্যশীল ছিলেন। প্রমাণিত যে ,ইসলামের বিপরীতেই ছিল সন্ত্রাস। আফসোস! সেই ইসলাম ও সন্ত্রাসকে একাকার করে ফেলতে দ্বিধাবোধ করেছ না আজকের প্রগতিশীলরা।
এটাও প্রমাণিত ,সন্ত্রাস পৃথিবীর নতুন সমস্যা নয়; প্রাচীন সমস্যা। মুসলমানের সৃষ্ট সমস্যা নয়; বরং মুসলিম রীতি অস্বীকারকারীদের সৃষ্ট সমস্যা।
এই সন্ত্রাস প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা হলো:- প্রথমত আল্লাহর উলুহিয়্যাত মেনে নেওয়ার দাওয়াত। মানবজাতিকে তার সৃষ্টির অভীষ্ট লক্ষ্যে পরিচালিত করার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর ইবাদত করা অপরিহার্য করেছেন।আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামকে দিয়ে তার ইবাদতের দিকে আহবান করেছেন। মানব সৃষ্ট সমস্যা সন্ত্রাস মোকাবেলায় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর দাওয়াত উপস্থাপন করেছেন।
কোরআনে কারীমের বহু জায়গায় আমরা দেখি ,মাদায়েনবাসীর নিকট প্রেরিত নবী শুয়াইব আলাইহিস সালাম স্বজাতির মাঝে বিরাজমান সন্ত্রাসের মোকাবিলায় সর্বপ্রথম তাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে ডেকেছেন। সূরা আরাফের ৮৫ ও ৮৬ নং আয়াতে আমরা তার সেই ভাষ্য দেখতে পাই। বিরাজিত সমস্যার সমাধান এখানেই ।
কারণ ,আল্লাহ তায়ালা আনুগত্যকারী ব্যক্তি কখনোই( ফাসাদ) তথা সন্ত্রাস করতে পারে না। ফেরাউনের সৃষ্ট সন্ত্রাসের মোকাবিলায় মুসা আলাইহি সালাম তাকে রাব্বুল আলামিনের ইবাদতের দিকেই ডেকেছেন। সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও একই আহ্বান সর্বাগ্রে জানিয়েছেন ।
সন্ত্রাসবাদের শাস্তির বিধানস্বরুপ ইসলাম বলে:- যারা জমিনে আল্লাহর বিধান অমান্য করে বিশৃঙ্খলা করে , মহাগ্রন্হ আল কোরআনের রাখা হয়েছে তাদের জন্য ভয়াবহ আজাব। অন্যায় ভাবে হত্যার বদলে কিসাস এর বিধান জারি করা হয়েছে। যেমন কুরআনের সূরা বাকারার ১৮৭নং আয়াতে উল্লেখিত বিধান ।
এছাড়া অন্যত্র আল্লাহ তাআলার বলেন:- যারা আল্লাহ তা'আলা ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ,এবং আল্লাহর জমিনে বিপর্যয় সৃষ্টির অপচেষ্টা করে, তাদের শাস্তি হচ্ছে তাদের হত্যা করতে হবে কিংবা তাদের শূলবিদ্ব করা হবে ।
অথবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত পা কেটে ফেলা হবে। কিংবা দেশ থেকে তাদের নির্বাসিত করা হবে ।এই অপমানজনক শাস্তি হচ্ছে তাদের দুনিয়ার জীবনের জন্য পরকালে ও তাদের জন্য ভয়াবহ আজাব রয়েছে।( সূরা মায়েদা ৩৩)
সুতরাং মহান আল্লাহ তায়ালা সকল মুসলিমকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার তাওফীক দান করুক।
-এটি