|| সাঈয়েদা হাবিবা ||
বাংলাদেশ ওলি-আওলিয়াদের দেশ। ইসলামের পূণ্যভূমি। আজানের ধ্বনিতে শুরু হয় এদেশের মানুষের সকাল। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় রয়েছে অন্তত একটি করে মসজিদ। এছাড়া আলেম সমাজের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে দেশের আনাচে-কানাচে অসংখ্য মাদরাসা। সেখানে লেখাপড়া করছে লাখ লাখ শিক্ষার্থী।
মানুষের মাঝে নিলরসভাবে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছেন আলেম সমাজ। অনেকে কাজ করছেন তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে। অনেকে আবার কাজ করছেন পীর-মুরীদির মাধ্যমে। এছাড়াও অনেকে রাজনীতির মাঠেও কাজ করে যাচ্ছেন। তবুও গত কয়েক বছর ধরে বাড়ছে মদ বিক্রি।
২০২১-২০২২ অর্থ বছরে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড ইতিহাসের সর্বোচ্চ টাকার মদ বিক্রি করেছে। কোম্পানিটি এ বছরই প্রথম বিভিন্ন ইউনিট থেকে মোট ৪০০ কোটি টাকা আয় করেছে। প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ।
কোম্পানিটির দেওয়া তথ্যমতে, চলতি বছর শুধু মদ বিক্রি হয়েছে ৩৬৭ কোটি টাকার। এই প্রথম মদ বা ডিস্টিলারি ইউনিট থেকে ১০০ কোটি টাকারও বেশি মুনাফা করেছে। এদিকে প্রতি বছরের মতো এবারও চিনি ইউনিটে ৫০ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে চিনি ইউনিটে লোকসান সমন্বয়ের পরও কোম্পানির নীট মুনাফা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। যা গত ২০২০-২১ অর্থ বছরে ছিল ১৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
কোম্পানিটি প্রতি মাসে গড়ে ১২ থেকে ১৩ হাজার কেস মদ বিক্রি করে থাকে। উৎপাদনও সে অনুযায়ী করা হয়। কেরু অ্যান্ড কোং ১৭৫ মিলিলিটার, ৩৭৫ মিলিলিটার ও ৭৫০ মিলিলিটারের বোতলে মদ বাজারজাত করে থাকে। একটি কেসে ৭৫০ মিলিলিটারের ১২টি, ৩৭৫ মিলিলিটারের ২৪টি ও ১৭৫ মিলিলিটারের ৪৮টি মদের বোতল থাকে। কেরুতে রয়েছে মদের মোট ৯টি ব্র্যান্ড। ব্র্যান্ডগুলো হচ্ছে- ইয়েলো লেবেল মল্টেড হুইস্কি, গোল্ড রিবন জিন, ফাইন ব্র্যান্ডি, চেরি ব্র্যান্ডি, ইম্পেরিয়াল হুইস্কি, অরেঞ্জ কুরাকাও, জারিনা ভদকা, রোসা রাম ও ওল্ড রাম ইত্যাদি।
বাংলাদেশে প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলিম। তারপরও কেন হঠাৎ করে মদ বিক্রি বেড়ে গেছে। আলেম সমাজের করণীয় কী? এ বিষয়ে জামিয়া ইকরার রইস আরিফ উদ্দিন মারুফ বলেন, আলেম সমাজের হাতে একটি বড় মিডিয়া রয়েছে। তারা প্রত্যেক সপ্তাহে অন্তত একবার করে হলেও জুমার নামাজের সময় মানুষের সামনে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারে। এ সুযোগ অন্য কারো নেই। সুতরাং এ সুযোগকে খুব ভালোভাবে কাজে লাগাতে হবে।
আরিফ উদ্দিন মারুফ আরো বলেন, আলেম সমাজ যখন আলোচনা করেন তখন বেশিরভাগ সময় শুধু কোরআন-হাদিসে মদ পান করা নিষেধ করা হয়েছে সেকথা বলেন। এটা তো তারা অবশ্যই বলবেন। এটাই তো তাদের দায়িত্ব। তবে কোরআন-হাদিসের সাথে সাথে মদ পান করলে শারীরিক ও সামাজিক কি কি ক্ষতি হয়। যুব-সমাজের চরিত্র কিভাবে ধ্বংস হয়ে যায় সেই বিষয়গুলোও মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। এ ছাড়াও বিশ্বের যেসব দেশের মানুষ বেশি মাদক গ্রহণ করছে তারা কোন ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন সে বিষয়গুলোও তুলে ধরতে হবে।
ইসলামি স্কলার আরো বলেন, আলেম সমাজ এদেশের মানুষের মাঝে দাওয়াতের কাজ করছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে দাওয়াতের কাজের মাঝে নতুন নতুন কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। নতুনত্ব আনতে হবে। মানুষ ইসলাম থেকে দূরে সরে গেলে অবশ্যই আলেম সমাজকে দায় নিতে হবে। দিন দিন সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এর অর্থ কিন্তু এটা না যে, মানুষ ছবি দেখা কমিয়ে দিচ্ছে। বরং মানুষ আগের চেয়ে আরো অনেক বেশি ছবি দেখছে। সুতরাং আলেম সমাজকে দাওয়াতের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা ও কৌশল নির্ধরণ করতে হবে।
কেএল/