রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


যে খুতবা দিয়ে দণ্ডিত হলেন মসজিদে হারামের ইমাম ‘শায়েখ সালেহ’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: মসজিদুল হারামের বিশিষ্ট ইমাম শায়খ সালেহ আল-তালিবকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন সৌদি আরবের একটি আপিল আদালত। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়ার বিশেষ ফৌজদারি আদালতের সিদ্ধান্তকে বাতিল করে এই রায় দেওয়া হয়েছে। একটি মানবাধিকার সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে।

৪৮ বছর বয়সী শায়খ সালেহ আল-তালিব ২০১৮ সালের আগস্টে মসজিদুল হারামের ইমাম থাকাবস্থায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কিন্তু সে সময়ও তার গ্রেপ্তারের জন্য আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তবে সেই সময় সৌদির ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের গ্রেপ্তারের ওপর নজরদারি করে- এমন একটি সংস্থা সোস্যাল মিডিয়া অ্যাডভোকেসি গ্রুপ প্রিজনারস অব কনসায়েন্স জানিয়েছিল, জনসমক্ষে মন্দের বিরুদ্ধে কথা বলা এবং প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা সংক্রান্ত খুতবা দেয়ার কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

শায়খ সালেহ তার প্রদত্ত খুতবায় প্রচন্ডরকমভাবে, অশ্লীলতা ও ইসলামী শরীয়তে নিষিদ্ধ বস্তুগুলো থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব বলেন এবং যারা বেহায়াপনার প্রচার করছে তাদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট করার আদেশ করেন, যদিও তিনি তার সব কথা অজ্ঞাত ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন কিন্তু যাদের বোঝার তারা বুঝে নিয়েছিলেন যে, তিনি মূলত এই কথাগুলো কাকে সম্বোধন করে বলেছেন।

মসজিদুল হারামের মিম্বর থেকে দেওয়া শায়খ সালেহ আল-তালিবের সেই খুতবার চুম্বাকাংশ তুলে ধরা হলো-

তিনি বলেন, মুনাফিকরা তাদের মঞ্চে বলে- তোমরা কুরআনের মজলিসকে বর্জন করো। আমরা আমাদের মসজিদের মিম্বর থেকে স্পষ্ট ভাষায় তাদেরকে বলছি, হে মুসলমানরা, তোমরা মুনাফিক ও বেঈমানদের অনুষ্ঠানকে বর্জন করো৷ তোমরা আল্লাহর নাফরমান এবং যারা এই সমাজের মধ্যে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনাকে চালু করছে তাদেরকে বয়কট করো।

আমরা ওই কথাই বলব যা আমাদের পূর্বসূরী বড় ওলামায়ে-কেরাম বলে গেছেন, তারা বলেছেন, তোমরা যে কোনো ধরনের গোনাহের অনুষ্ঠানকে বর্জন করো এবং ওই সমস্ত মানুষদের অনুষ্ঠানকে বর্জন করো যাদের কর্ম পদ্ধতি সন্দেহযুক্ত, এবং যারা নারীদেরকে রাস্তায় বের করে এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সের অনুমতি দেয়, যারা নারীদেরকে উলঙ্গপনার দিকে আহ্বান করে, যারা নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার দিকে উৎসাহিত করে বর্তমান সমাজে ফাসাদ শুরু করেছে, তাদেরকে বয়কট করো।

খুতবায় তিনি আরো বলেন, যারা নেশাযুক্ত পানীয়কে বৈধতা দান করে তাদেরকে বয়কট করো। পরিপূর্ণভাবে গান-বাজনা এবং কমেডি, কৌতুক ও সিনেমার অনুষ্ঠানকে বয়কট করো৷ যদিও যারা এই সিনেমা ও কমেডি চালু করেছে তারা এটাকে নিছক বিনোদন মনে করে অথচ, এটা কেবল বিনোদন নয় বরং এই সিনেমার অনুমোদন দ্বারা একমাত্র উদ্দেশ্য হলো- পশ্চিমা চিন্তা-চেতনাকে লালন করা এবং সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পশ্চিমা আদর্শ ও নীতিকে ঢুকিয়ে দেয়া। যে নাচ গানের এবং কমেডি নাটক সিনেমার অনুমোদন একেবারে ইসলামে নেই। ইসলামী নীতিতে এই কাজ হারাম, ইসলাম এর অনুমোদন দেয় না।

শায়খ সালেহ আল-তালিব খুতবায় বলেন, তারা অশ্লীলতাকে বিনোদন পোশাক পরিয়ে এবং বেহায়াপনাকে মুক্তচিন্তা-চেতনার চাদর পরিয়ে উপস্থাপন করছে। অথচ এই বিনোদন দ্বারা কেবল এটাই উদ্দেশ্য, যেন তারা যুবক-যুবতীদেরকে নাচ-গান, বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা ও ইখতিলাত অর্থাৎ অবাধ মেলামেশার দিকে মাজনুন তথা পাগলপারা বানিয়ে দিতে পারে।

হারাম শরিফের সাবেক এ ইমামের মতে- তাদের এই অসৎ উদ্যোগ পবিত্র এই ভূমির জন্য লজ্জাজনক বিষয় এবং এই পবিত্র ভূমিকে লাঞ্ছিত করার শামিল, তাদের এই অসৎ উদ্যোগ ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ সংকেত, এক সময় আসবে যখন এই বেহায়াপনায় ‘কুদওয়াতুন লি-শ্শাবাব’ তথা যুবকদের উত্তম মডেল হিসেবে স্থান পাবে।

তিনি বলেন, হে সীমাহীন চরমপন্থিরা! তোমরা জনগণের ধন-সম্পদকে অন্যায়ভাবে, অহেতুক পাপ কাজে খরচ করছো, এতে না আছে জনগণের কোনো রকম উপকারের ছিটেফোঁটা, না আছে জনগণের কল্যাণ৷ হে চরমপন্থিরা! যদি তোমরা জনগণের পয়সাকে পাপকাজে খরচ করা বন্ধ না করো, তাহলে একদিন আসবে যেদিন এই অপরাধ ও পাপ তোমাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে এবং তোমাদের জন্য বড়ই আফসোসের কারণ হবে, ফলে তোমরা পরাজয় বরণ করবে।

শায়খ তালিব বলেন, হ্যাঁ, অচিরেই তোমাদের শক্তি এবং আদর্শের পরাজয় হবে৷ তোমাদেরকে তারাই পরাজিত করবে যারা সর্বদা দ্বীনের ওপর অটল থাকে, তারাই একদিন তোমাদের বিনোদন নামক বেহায়পানা ও অশ্লীলতাকে ময়লা-আবর্জনার ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করবে, তাদের নিজেদের উত্তম আদর্শ এবং সঠিক নিয়ত ও ইসলামী আক্বীদার মাধ্যমে। অচিরেই তোমাদের অশ্লীলতার মঞ্চকে কুরআনের ধারকবাহকগণ আদর্শের যুদ্ধের মাধ্যমে পরাজিত করবে। অচিরেই তোমাদেরকে পরাজিত করবে ওই আল্লাহুআকবার ধ্বনির আওয়াজ যা দিবারাত্রি পাঁচ বার কানে ভেসে আসে এবং আমাদের অন্তরে এই পবিত্র আওয়াজের বাতাস প্রবাহিত হয় ও চক্ষু শীতল করে। সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর, জিও নিউজ ও অন্যান্য

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ