আবদুল্লাহ তামিম::
নির্বাহী সম্পাদক>
ভিতির নামাজ তিন রাকাত না এক রাকাত এ বিষয়ে আহলে হক ও কথিত আহলে হাদিসদের মাঝে একটি মুনাজারা বা বাহাস অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাহাস শেষে তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক লুৎফুর রহমান ফরায়েজী বলেন, ভোলার বাহাস, প্রশংসা শুধুই রব্বে কারিমের।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ভোলার বাটামারা এলাকায় মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাটামারা পীরের তত্তাবধানে অনুষ্ঠিত হয় এ বাহাস। বাহাসে মুনাজির হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজী, জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়ার মুহাদ্দিস মাওলানা তাহমিদুল মাওলা। অতিথি হিসেবে ছিলেন বেফাকের সহ-সভাপতি ও ভোলা জেলা আঞ্চলিক কওমি মাদরাসার শিক্ষাবোর্ড ইত্তেহাদের সভাপতি মাওলানা আনাস। পরিচালনায় ছিলেন, জামিয়া হুসাইনিয়ার শাইখুল হাদিস বুরহানুদ্দিন মারকায মসজিদের খতিব মাওলানা জালাল আহমদ কাসেমি।
মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজী বাহাস শেষে বলেন, সর্বত্র যেভাবে উম্মতের মাঝে অহেতুক ফাটল ও বিভেদ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে, তারই ধারাবাহিকতায় ভোলা জেলার বুরহানুদ্দীনে মুসল্লিদের সহিহ আমলের নামে ফিতনবাজী শুরু করেছিল এক ইমাম।
সে ইমাম এক বৈঠকে তিন রাকাত বিতরের এক দলীলবিহীন আমল চালু করে ফিতনার সূচনা করেন।
দলীলবিহীন এ আমলকে বেশি সহিহ বলে দুই বৈঠকে তিন রাকাত বিতরের মজবুত দলীলযুক্ত আমলকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। ফিতনা নিরসনে এলাকাবাসী আয়োজন করে উভয় পক্ষের আলেমদের ইলমী মুবাহাসা।
তিনি আরো বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে তিনজন ও লা মাযহাবীদের পক্ষ থেকে তিনজন নিয়ে সুন্দর পরিবেশে আলোচনা শুরু হয়।
লা মাযহাবীদের পক্ষে নেতৃত্ব দেন শায়েখ উমর ফারূক আলমাদানী। আহলে হকের পক্ষে নেতৃত্ব দেন মাওলানা তাহমীদুল মাওলা। আলোচনার শুরুতে মুস্তাদরাকে হাকেমের একটি ভুল ও আলবানীর বলা এক শাজ রেওয়ায়েত দিয়ে দলীল পেশ করেন লা মাযহাবী ইমাম। সেই সাথে হাদিসের অর্ধাংশ পাঠ করে দলীল দেবার চেষ্টা করেন। যা তাদের মতটি মোটেও প্রমাণ করে না।
জবাবে মাওলানা তাহমীদুল মাওলা প্রাণবন্ত আলোচনায় এ দলিলের ভুলগুলো তুলে ধরেন। উপস্থিত সকলে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে মাওলানার ইলমী আলোচনা শ্রবণে তৃপ্তি লাভ করেন। সেই সাথে তার দেয়া দাবীর স্বপক্ষে এটি যে কোনভাবেই দলীলই নয় তা সকলের কাছে পরিস্কার হয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, এছাড়া শায়েখ উমর ফারূক আলমাদানী কৌশলের আশ্রয় নিয়ে বলেন হাদিস সহিহ হলে সেটা মানতে সমস্যা কোথায়? সুতরাং এক বৈঠকে তিন রাকাত বিতর আদায়ের সহিহ হাদিস মানলে হানাফী মাযহাবের অনুসারী হিসেবেই তা হবে। কারণ, হাদীস সহিহ হলেই সেটা আমার মাযহাব বলেছেন আবূ হানীফা রহঃ। তাই আমরা তাহকীক করে সহীহ হাদীস মানবো।
আমি বললাম আপনার তাহকীক সহীহটা গ্রহণ করবে সেটার নিশ্চয়তা কী? এই যে, একটু আগে ভুল হাদীসকে সহীহ মনে করে প্রমাণ পেশ করলেন একজন। অথচ এটা তার তাহকীকে সহীহ মনে হয়েছে। আচ্ছা! আপনার কাছে যদি এক বৈঠকে তিন রাকাত বিতর পড়া সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়, তাহলে একটা সহীহ সরীহ মারফূ বর্ণনা দেখান। আমাদের চ্যালেঞ্জ আপনারা তা দেখাতে পারবেন না। আল্লাহর রহমতে তারা তা পারেনি। অবশেষে আহলে হাদীস ইমাম সকলের সামনে নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চান এবং নিজেকে হানাফী মাযহাবের অনুসারী হিসেবে ঘোষণা দেন। এভাবেই মহান মালিক হকের বিজয় দান করেছেন। এ বিজয় নবীর সুন্নাতের। এ বিজয় কিয়ামত পর্যন্ত হক যিন্দা থাকার আল্লাহর ওয়াদা বাস্তবায়নের।
বাহাস প্রসঙ্গে ভোলা জেলা উলামা তলাবার সভাপতি মুফতি আবুল ফাতাহ কাসেমি আওয়ার ইসলামকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের ভোলায় কয়েকজন লা মাজহাবি সমস্যা সৃষ্টি করছিলো। আল্লাহর রহমতে ভোলার মানুষ এ ধরণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছে। তবে সামনেও আলেমদের এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান করছি।
-এটি