মুযযাম্মিল হক উমায়ের।।
প্রিয় ভাইয়েরা! মুখের ভিতর চলে যাওয়া লুকমা আল্লাহ তায়ালার কাছে বলে, হে আল্লাহ! আমি কি তার জন্য মৃত্যুর কারণ হবো না জীবিত থাকার কারণ হবো? অথচ, দেখুন! এই খাবার কিন্তু আমিই কামাই করেছিলাম।
আমিই নিজ হাতে খেয়েছিলাম। যে খাবার মহিলা পাক করেছে সেই খাবার মুখে যাওয়ার পর আল্লাহ তায়ালাকে বলে, হে আল্লাহ! আমি কি তার জন্য সুস্থ্যতার কারণ হবো না অসুস্থতার কারণ হবো? আপনি যা আদেশ করবেন আমি তাই করবো। আমাদের পেটের ভিতর শ্বাস ও খাবারের নালি একসাথে মিলিত। মধ্যখানে শুধু একটি ছোট্ট পর্দার আড়াল।
যখন মানুষ খাবার খায় তখন মনে হয় ওই পর্দাটি শ্বাস নালিকে বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ, খাবার পাকস্থলীর নালি দ্বারা পেটের ভিতর চলে যায়। এটি আল্লাহ তায়ালার নেজাম।
তিনি মুখের সামনে একজন ফিরিস্তা নিয়োজিত করে দিয়েছেন। মানুষ যখন খাবার মুখে নেয় তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে আমার অবুঝ বান্দা! নাফরমান বান্দা!
যখন তুমি খাবার মুখের ভিতর প্রবেশ করাও তখন আমার নিয়োজিত ফিরিস্ত শ্বাস নালিকে বন্ধ করে দেয়। এবং পাকস্থলীর নালিকে খুলে দেয়। খাবার সেই নালি দিয়ে পেটের ভিতর প্রবেশ করে। যদি ফিরিস্তা আমার হুকুমে সেখান থেকে সরে যায়, তখন তো তোমার উপার্জনকৃত খাবারই তোমার ধ্বংসের কারণ হয়ে যাবে। খাবার সোজ শ্বাস নালি দিয়ে প্রবেশ করে তোমার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে। তখন তো তোমার হাতের দ্বারা কামাইকৃত খাবার নিজ হাত দ্বারা মুখের ভিতর দিয়ে নিজের মৃত্যুকে টেনে নিয়ে আসবে।
প্রিয় ভাইয়েরা! আমাদের উপর যেহেতু আল্লাহ তায়ালার অজস্র—মায়া ও অনুগ্রহ রয়েছে তাই আমাদের উচিত হলো তাঁর কথা মতো জীবন পরিচালনা করা। তাঁকে মেনে চলা।
এটি হলো মানবতার কথা। কারণ, যিনি আমাদের উপর এতো বেশি পরিমান ইহসান করেছেন মানবতা আর ভদ্রতার দাবি হলো তাঁকে মেনে চলা। মা সন্তানের উপর বেশি কষ্ট উঠানোর কারণেই সন্তানকে বলতে পারেন, হে ছেলে! তুমি আমার কথা মেনে চলো। আমার অবাধ্যতা করো না। সন্তানের উপর মায়ের এমন দয়া—মায়া আর ইহসান থাকার কারণেই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে সন্তানের উপর মায়ের অধিকার পালন করা অপরিহার্য করে দিয়ে তিনি ইরশাদ করেছেন, فَلَا تَقُل لَّهُمَآ أُفّٖ وَلَا تَنۡهَرۡهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوۡلٗا كَرِيمٗا সুতরাং তোমরা তাঁদেরকে উফ বলো না। এবং তাঁদেরকে ধমক দিয়ো না। বরং তুমি তাঁদের সাথে সুন্দর কথা বলো। সুরা ইসরা: আয়াত— ২৩
অর্থাৎ, তোমরা মা—বাবার সামনে এমন কথা বলো না যে কথার কারণে তাঁরা উফ বলতে বাধ্য হয়। বরং তোমরা তাঁদের সাথে নম্র ব্যবহার করো। সুন্দর কথা বলো। তাঁদের সামনে নিজেকে মিটিয়ে দাও। কারন, তাঁরা তোমাকে ছোট থেকে বড় করার প্রকাশ্য মাধ্যম হয়েছেন। যা তোমার উপর পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইহসান।
মা—বাবার সামান্য অবদানের কারণে যদি আমাদের উপর এতো বেশি মানবতার অধিকার থাকতে পারে, তাহলে যিনি তোমার উপর সবচেয়ে বড় দয়াশীল। যিনি মায়ের অজান্তেও তোমাকে মায়ের পেটে খাবার খাইয়েছেন। খাবার পৌঁছিয়েছেন। শুধু খাবারই নয়; খাবারকে তোমার শরীরের উপযোগী বানিয়ে তোমার মায়ের পেটে পৌঁছিয়েছেন।
তাহলে যিনি তোমার উপর এতো বেশি ইহসান করেছেন। তোমার মায়ের পেট থেকে কবরের পেটে যাওয়ার পর্যন্ত যিনি তোমার উপর ইহসান আর ইহসানই করে চলছেন, তিনি তোমার থেকে কী পরিমান মানবতার মান্যতা পাওয়ার উপযুক্ত! তোমার উপর তাঁর কী পরিমান হক রয়েছে!! তাঁকে তোমার কী পরিমান মেনে চলা দরকার!!!
প্রিয় ভাইয়েরা! এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের ভাবা দরকার। নিজেদের হিসাব কষা দরকার। আমরা যে পথে চলছি সেই পথ সঠিক না হলে নিজের চলার পথ পরিবর্তন করে সঠিক পথ অবলম্বন করা আমাদের উপর অপরিহার্য। অত্যন্ত জরুরি। কারণ, আমাদের সময় কম। পৃথিবীতে আসা ও যাওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে।
কিন্তু নির্দিষ্ট সময়টি আমাদের অজানা। আমাদের হাতের নাগালের বাইরে। তাই আমাদের প্রতিটি মুহূর্তকে জীবনের শেষ সময় ভেবে নিজেকে সংশোধন করে নিতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমলের তাওফিক দান করুন। আমীন।
সূত্র: মাওলানা তারিক জামিলের বয়ানের অনুবাদ
-এটি