মুফতি এনায়েত কবীর।।
রমজান আমলের প্রতিযোগিতার মাস। ইবাদতের পরিধি ও গুণগতমান বৃদ্ধি মাস। আল্লাহর সন্তুষ্টির শিশিরে সিক্ত হওয়ার সুবর্ণ সুযোগের মাস। মন্দ কাজে প্ররোচনা এবং নেক আমলে বাধাদানকারী শয়তানের বন্দিত্বের মাস।
কিন্তু নেকী অর্জনের এই সিজনে কোন আমলকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার? কোন আমলগুলো বেশি বেশি করা জরুরি? হাদিসে পাকের রয়েছে এর পরিষ্কার উত্তর। নবীজি ইরশাদ করেন, রমজান মাসে তোমরা চারটা আমল বেশি বেশি করতে থাকে। এর মধ্য থেকে দুটি আমল এমন যার দ্বারা মহান আল্লাহ তোমাদের উপর সন্তুষ্ট হবেন। আর দুটি আমল এমন, যা করা ছাড়া তোমাদের আর কোন উপায় নেই।
যে দুটি আমল দ্বারা আল্লাহকে রাজি-খুশি করা যাবে তা হলো, বেশি বেশি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করা এবং অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার করা।
আর যে দুটি আমল না করে কোনো উপায় নেই সেগুলো হলো, আল্লাহর কাছে জান্নাত চাওয়া এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া করা। সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদিস নং -১৮৮৭।
একজন মানুষ এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার আগে যে নসিহতগুলো করেন তা হলো তার সারা জীবনের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার সারনির্যাস। অতি মর্যাদাবান একজন নবী হযরত নূহ আলাইহিস সালাম। মৃত্যুশয্যা অবস্থায় তিনি তার ছেলেদেরকে এ কালেমা পাঠের আদেশ করেছিল।
কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ হলে একজন নবী তার সন্তানদেরকে বিদায় বেলায় এই কালিমা পাঠের আদেশ করতে পারেন তা সহজেই বুঝা যায়। এক হাদীসে নবিজি ইরশাদ করেন, হযরত নুহ আ মৃত্যুর সময় তাঁর দুই ছেলেকে অসিয়ত করে বলেন, আমি তোমাদেরকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ার আদেশ করছি। যদি সাত আসমান এবং সাত যমীনকে এক পাল্লায় রাখা হয় এবং লা ইলাহা ইল্লাল্লাহকে অপর পাল্লায় রাখা হয়, তাহলে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর পাল্লা বেশী ভারী হবে।
যদি সাত আসমান এবং সাত যমীন নিরেট গোলাকার বস্তু হয়, তাহলেও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তা চূৰ্ণবিচূর্ণ করে দেবে। মাজমাউয যাওয়াইদ- ৪/২১৯, মুসনাদে আহমদ- ৭১০১।
শত্রু কখনো মঙ্গল চায় না। সে চায় ধ্বংস এবং ক্ষতি। মুমিনের প্রকাশ্য এবং অভিশপ্ত শত্রু শয়তান। সেই শয়তানের হাত থেকে বাঁচার অন্যতম উপায় হল ইস্তেগফার এবং লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ।
হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা থেকে বর্ণিত। নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং ইস্তেগফার বেশি বেশি পড়ো। কারণ ইবলিশ বলে, আমি মানুষকে ধ্বংস করে দেই পাপের মাধ্যমে। আর মানুষ আমাকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং ইস্তেগফারের মাধ্যমে আমাকে ধ্বংস করে দেয়। মুসনাদে আবি ইয়ালা -১৩৬, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ লিল হাইসামী-২০৭
ইস্তেগফারের অনেক ফজিলত। আর এসব ফজিলত শুধু জীবিতরাই নয় বরং মৃতগণও লাভ করে থাকেন। হযরত আবু হুরায়রা রা থেকে বর্ণিত। নবিজি ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা‘আলা কোন কোন নেক বান্দার মর্যাদা তার আমলের তুলনায় অনেক বেশি দিবেন। তখন সে বান্দা অবাক হয়ে প্রশ্ন করবে, হে আল্লাহ, আমি কিভাবে এত মর্যাদা পেলাম? আমার আমল তো এই মর্যাদা পাওয়ার মত ছিল না।
তখন তাকে উত্তর দেয়া হবে, তোমার সন্তান সন্ততি তোমার জন্য ইস্তেগফার এবং দোয়া করেছে। এটা তারই ফল। মাজমাউয যাওয়াযেদ লিল হাইসামী-হাদিস নং-২১০ মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল, হাদিস নং- ১০৬১৮।
একজন মুমিনের মূল প্রত্যাশাই হলো জান্নাত এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি। নবীজি নিজেই সাহাবায়ে কেরামকে জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া শিখিয়েছেন সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে।
হযরত ইবনে আব্বাস রা বলেন, নবিজি আমাদেরকে যেভাবে কোরআনের শিক্ষা দিতেন ঠিক তেমন গুরুত্ব সহকারেই আমাদেরকে এই দোয়াও শিক্ষা দিতেন-
اللهم اني أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ،.... واعوذ بك من فتنة المحيا والممات وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْقَبْرِ
হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের শাস্তি থেকে তোমার আশ্রয় চাই। আমি কবরের আযাব থেকে তোমার আশ্রয় চাই। আমি জীবন ও মৃত্যুর বিপর্যয় থেকে তোমার আশ্রয় চাই।
আমি কবরের ভয়াবহ সংকট থেকে তোমার আশ্রয় চাই। আবু দাউদ-১৫৪২ সুনানে নাসায়ী- ৭৯৫৩
জান্নাত লাভের উৎসাহ দিতে গিয়ে নবীজি এক হাদীসে বলেন, যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে সকালে বা সন্ধ্যায় এই দোয়া পড়ল অতঃপর সেই দিন বা রাতে মারা গেল তাহলে সে জান্নাতি। সুনান নাসায়ী, হাদীস নং- ৫৫২২,
দোয়াটি হলো এই -
اَللّٰهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لا إِلَهَ إلا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي، فَاغْفِرْ لِي؛ فَإِنَّهُ لا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إلا أَنْتَ
-এটি