আবু সাঈদ।।
অতীতে ধনী বাবার ঘরে জন্ম নিলেও আলিমগণ একসময় অসচ্ছলই হয়ে যেতেন। ইলম অন্বেষণের পেছনে বাবার রেখে যাওয়া সমস্ত সম্পদ তাদের ব্যয় হয়ে যেত।
এজন্য দরিদ্রতা ছিল আলেমগণের নিত্যদিনের সঙ্গী। আলেমদের জন্য কিতাব কেনা ছিল কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তথাপি তারা পানাহার ও পরিচ্ছদের ওপর কিতাব সংগ্রহ করাকে প্রধান্য দিতেন। স্বেচ্ছায় দরিদ্র্যতা গ্রহণ করতেন।
ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাহাজিবুল আসমা ওয়াল লুগাত গ্রন্থে বলেন, ইমাম ইবনুল মাদীনী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন যে পরিমাণ হাদিস লিখেছেন অন্য কেউ সে পরিমাণ হাদিস লিখেছেন বলে আমার জানা নেই।
তার পিতা মাঈন মৃত্যুর সময় তার জন্য দেড় লক্ষ দিরহাম দেখে যান। (বর্তমানে তা ১.৩ মিলিয়ন ডলার হবে।) তিনি সম্পত্তির সবটুকু হাদিস অন্বেষণে ব্যয় করেন। শেষ পর্যন্ত তার অবস্থা এই হয়েছিল যে, পরার মতো তার কোন জুতা ছিল না।
ইমাম ইবনুল জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তার ছেলের কাছে লেখা এক পত্রে ইলম অন্বেষণে ব্যয় করা অর্থ সম্পর্কে বলেন, প্রিয় বৎস! আমার পিতা ধনাঢ্য ব্যক্তি ছিলেন।
মৃত্যুর সময় তিনি আমার জন্য রেখে যান অঢেল সম্পদ। কিন্তু আমি যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছি, আমার আত্মীয়-স্বজন আমাকে মাত্র বিশ দিনার ও দুটি ঘর দিয়েছে।
আর বলেছে, সর্বসাকুল্যে এ-ই তোমার পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তি। আমি এ বিশ দিনার দিয়ে কিতাব সংগ্রহ করে নিয়েছি। বাড়িদুটিও বিক্রি করে ইলম অন্বেষণে ব্যয় করেছি। অতঃপর সম্পদ বলতে আমার আর তেমন কিছু ছিল না। তবুও তোমার পিতা এই আমি লাঞ্চিত হইনি কখনো।
ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি যাইলু তাবাকাতিল হানাবিলা গ্রন্থে বর্ণনা করেন, ইমাম ইবনুল খাশশাব হাম্বলী রহমাতুল্লাহি আলাইহি যে মুহাদ্দিস প্রয়াত হতেন, তার কিতাবাদি কিনে রাখতেন। ফলে তার কাছে অনেক মাশায়েখের কিতাব জমা হয়েছিল। তিনি সবসময় জামার আস্তিনে কিতাব রাখতেন।
মৃত্যুর সময় তার সব কিতাব ওয়াকফ করার জন্য ওসিয়ত করে গিয়েছিলেন। তবে এক-দশমাংশ কিতাবই ওয়াকফ করা হয়েছিল। বাকিগুলো বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল।
ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাজকিরাতুল হুফফাজ গ্রন্থে বলেন, ইমাম আবুল আ’লা আল হামাযানী রহমতুল্লাহি আলাইহি হামাযানে এক বিশাল গ্রন্থাগার গড়ে তুলেছিলেন। নিজের সব কিতাব তাতে ওয়াকফ করেছিলেন। অনেক কিতাবের লেখকের স্বহস্তে লিখিত নুসখাও সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
বড় বড় বিভিন্ন কিতাব সুন্দর ও সুস্পষ্ট হস্তাক্ষরে লাভ করেছিলেন। অধিক পরিমাণে হাদিস সংগ্রহ ও বিভিন্ন কিতাবের মূল কপি সংগ্রহে সমকালীনদের মধ্যে তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ। তিনি যা লিখতেন নোকতা ও হরকত দিয়ে লিখতেন।
ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইম্বাউল উমর গ্রন্থে উল্লেখ করেন, মিশর ও শাম অঞ্চলের কাজী ইব্রাহিম রহমতুল্লাহি আলাইহি কিতাব সংগ্রহে ছিলেন খুবই সৌখিন। তিনি যে কিতাব কিনতেন, তার সর্বোত্তম নোসখা কিনতেন।
এরপর যদি লেখকের হাতে লিখিত কোন নোসখার সন্ধান পেতেন, তাও সংগ্রহ করে নিতেন। ফলে লেখকের স্বহস্তে লিখিত কিতাবের এক বিশাল সম্ভার তার মাকতাবায় গড়ে উঠেছিল। মৃত্যুর সময় তিনি এসব জামাল উদ্দিন মাহমুদ আসতাদারের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন। তিনি এসব কায়রোর জামিউল কারদারীতে ওয়াকফ করেন।
-এটি