সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

‘সমিতি’ পরিচালিত হোক শরীয়াহ সম্মত পন্থায়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবু সাঈদ
প্রতিবেদক

দেশে দিনদিন সমিতির সংখ্যা বাড়ছে। শহরের মোড়ে মোড়ে দেখা যায় নতুন নতুন নামের বিভিন্ন সমিতির কার্যালয়। কেউ কনভেনশনাল প্রক্রিয়ায় সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সুদের ভিত্তিতে ক্লাইন্টদের সাথে লেনদেন করছে। কাউকে আবার ‘শরিয়াহ অনুমোদিত’ লিখেও বিলবোর্ড সাঁটাতে দেখা যাচ্ছে। ক্লাইন্টদের অংশগ্রহণও অপ্রতুল নয়। ‘শরিয়াহ অনুমোদিত’ দেখেই অনেকে সদস্য হিসেবে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগও নিচ্ছে প্রয়োজনে। অনেকে সমিতিটি ‘কতটুকু শরিয়াহ অনুমোদিত’ জানার জন্য ইসলামি অর্থনীতিতে অভিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের দ্বারস্থও হচ্ছেন। তবে উলামায়ে কেরাম বরাবরই সমিতিগুলোর ব্যাপারে অনাস্থা প্রকাশ করে আসছেন।

মোহাম্মাদ কবির হোসেন রামপুরা একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরি করেন। তার আয়ের একটি অংশ স্থানীয় একটি সমিতিতে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছেন। তারা ‘শরিয়াহ অনুমোদিত’ দাবি করায় বিষয়টি নিয়ে তিনি মসজিদের ইমামের সাথে কথা বলেন। এ বিষয়ে তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেন, আমাদের মসজিদের ইমাম একজন বিজ্ঞ আলেম। সমিতির নাম নিয়ে বিনিয়োগ বিষয়ে পরামর্শ চাইলে তিনি আমাকে অনুৎসাহিত করেন। বলেন, তাদের কার্যক্রমে এখনো আস্থা রাখা যায় না।

বাংলাদেশে ইসলামি অর্থনীতির পথিকৃৎ প্রতিষ্ঠান আইএফএ কনসালটেন্সি লি. এর কনসালটেন্সি ডিপার্টমেন্টের প্রধান ও বাহরাইন ভিত্তিক ইসলামি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য শরিয়াহ স্ট্যান্ডার্ড প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান এ্যাওফি কর্তৃক সার্টিফাইট শরিয়াহ এডভাইজার এ্যান্ড অডিটর মুফতি যুবায়ের আবদুল্লাহর কাছে ‘শরিয়াহ অনুমোদিত’ সমিতিগুলোর বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমাদের মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা হলো, যারা ইসলামের নাম ব্যবহার করে সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করেন, তাদের অনেক কাজই শরিয়াহ সমর্থিত নয়। কোথাও শরিয়ার কোন মডিউলের নাম ব্যবহার করলেও তার অন্তর্নিহিত যেসব শর্তাবলী ও নীতিমালা রয়েছে, সেগুলো মানছে না। এজন্য সমিতিগুলোর কার্যক্রমে আমরা আস্থাশীল হতে পারছি না।’

‘সমিতির ধারণা কুরআন-সুন্নাহ সমর্থিত। সমমনা কিছু মানুষ একত্রিত হয়ে তাদের আয়ের ক্ষুদ্র অংশে ফান্ড তৈরি করা এবং পররর্তীতে বিনিয়োগের মাধ্যমে তা থেকে লাভবান হওয়া, এসবে মৌলিকভাবে কোন সমস্যা নেই।’ সমিতির ধারণা ইসলামে সমর্থিত কিনা জানতে চাইলে জামিয়া ইসলামিয়া দিলুরোডের এ ডেপুটি মুফতি এমন মন্তব্য করেন।

শরিয়াহ সম্মত উপায়ে সমিতি ব্যবস্থা কীভাবে চলতে পারে জানতে চাইলে বিজ্ঞ এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘সমিতির মৌলিক দুটি দিক রয়েছে। সদস্য সংগ্রহ বা ডিপোজিট সংগ্রহ করা এবং সংগৃহিত ডিপোজিট বিনিয়োগ করা। সমিতি কর্তৃপক্ষ তাদের ডিপোজিট সংগ্রহের জন্য ইসলামী অর্থনীতির আদর্শ বিনিয়োগ মডিউল মুদারাবা বা মুশারাকার পন্থা অবলম্বন করতে পারেন। এক্ষেত্রে ডিপজিটররা মুদারাবা বা মুশারাকার ভিত্তিতে সমিতি কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের ডিপেজিট বিনিয়োগ করবে। সমিতি কর্তৃপক্ষ তাদের ক্লাইন্টদের কাছে মুরাবাহা, মুশারাকা ও মুদারাবার মাধ্যমে তা বিনিয়োগ করতে পারবে। এভাবে সমিতি কর্তৃপক্ষের জন্য শরিয়াহ অনুমোদিত পন্থায় সমিতি পরিচালনা সম্ভব।’

বাংলাদেশের সমিতি ব্যবস্থার ত্রুটি-বিচ্যুতির মৌলিক দিকগুলো জানতে চাইলে বাহরাইন ভিত্তিক ইসলামি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য শরিয়াহ স্ট্যান্ডার্ড প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান এ্যাওফি কর্তৃক সার্টিফাইট এই শরিয়াহ এডভাইজার এ্যান্ড অডিটর বলেন, কনভেনশনাল সমিতি প্রতিষ্ঠানগুলোর মৌলিক সমস্যা হলো, তারা সুদি পন্থায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। যারা ডিপজিট জমা করে, তাদের সাথে চুক্তি হয়, নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে ডিপজিটরকে ডিপজিটের ৯% থেকে ১০% সুদ দেওয়া হবে। যারা এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সুদ গ্রহণ করে, তাদের সাথেও এরা সুদের লেনদেন করে। এসব সমিতি থেকে যারা কিস্তিতে ঋণ নেয়, কখনো কিস্তি পরিশোধে বিলম্ব করলে তাদের উপর আর্থিক জরিমানা আরোপ করে। এসব প্রক্রিয়া কোনটাই শরিয়াহ সমর্থিত নয়।

ইসলামের নাম ব্যবহারকারী সমিতি প্রতিষ্ঠানগুলোর ত্রুটি-বিচ্যুতি সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বিজ্ঞ এ অর্থনীতিবিদ বলেন, যারা নিজেদের কার্যক্রম শরিয়াহ অনুমোদিত বলে দাবি করে, তাদের কার্যক্রমেও অনেক সমস্যা আছে। যেমন, ডিপজিটরদের সাথে তাদের এক ধরনের চুক্তি হয়, তারা যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্রাহক থেকে ডিপজিট সংগ্রহ করে দিতে পারেন, তবে তাদেরকে মূল পুঁজি থেকে ১০% কমিশন দেওয়া হবে। এমন চুক্তি শরিয়াহর দৃষ্টিতে বিশুদ্ধ নয়। তাছাড়া তারা বিভিন্ন পর্যায়ে ক্লাইন্টদের উপর পেনাল্টি ফিও আরোপ করে। অথচ শরীয়তের দৃষ্টিতে ঋণ প্রদান করে কোন ধরনের পেনাল্টি গ্রহণ বৈধ নয়।

আইএফএ কনসালটেন্সি লিমিটেড এর এ প্রধান কনসালটেন্স বলেন, ‘কেউ যদি শরিয়াহ সম্মত পন্থায় সমিতি পরিচালনা করতে চায়, তবে তাদেরকে শরিয়াহ ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করে দিতে আইএফএ কনসালটেন্সি কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত রয়েছে। কোন সমিতি কর্তৃপক্ষ যদি তাদের ডকুমেন্টগুলো রিভিও করে নিতে চায়, তার জন্যও আইএফএসি প্রস্তুত রয়েছে। আইএফএসির শরিয়াহ কনসালটেন্সি টিম তাদের সমস্যা চিহ্নিত করে বিকল্পও বাতলে দিবে।’

দিন দিন দেশে যেভাবে সমিতি ব্যবস্থার প্রসার-প্রসার ঘটছে, সে হিসেবে সমিতির শরিয়াহ জানা এখন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। উলামায়ে কেরাম নানাভাবে উম্মাহকে শরিয়াহ সম্মত উপায়ে সমিতি পরিচালনার আহবান করছেন। সমিতি কর্তৃপক্ষদের উচিৎ, উলামায়ে কেরামের সাথে আলোচনা করে তাদের ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা, যেন ইসলামের নামে অনৈসলামিক কাজ না হয়। দেশে ইসলামি অর্থনীতির বিপুল চাহিদা তৈরি হয়েছে। সে হিসেবে কোন সমিতি কর্তৃপক্ষ নতুনভাবে তাদের কার্যক্রম শুরু করতে চায়, বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানেই তাদের ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা উচিৎ। এতে ক্লাইন্টদের আস্থা বাড়বে। তারা নিরাপদ বিনিয়োগের সুযোগ পাবে। যারা ইতিমধ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন, তারাও বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের পরামর্শে নিজেদের ত্রুটিগুলো শুধরে নিতে পারেন।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ