।। কাউসার লাবীব ।।
বর্তমানে মানুষ কোনো একটি বিপদে পড়লেই গলায় তাবিজ-কবজ ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে দেয়। এটিকেই সমাধান মনে করে । কিছু হলেই মাওলানা সাহেবের কাছে দৌড়ে এসে বলে, হুজুর আমাকে একটি তাবিজ দিন আমি খুব বিপদে আছি বা আমি মারাত্মক কোনো রোগে ভুগছি। অথচ ইসলাম তাবিজ-কবজের বিষয় ব্যবহারের উৎসাহিত করে না।উৎসাহিত করে বিপদাপদে আল্লাহর কাছে রুজু হওয়ার প্রতি, তার কাছে কায়মনোবাক্যে দোয়া করার প্রতি।যাতে রয়েছে মনের শীতলতা ও প্রশান্তির ছোঁয়া।
অথচ আমাদের সমাজে হয়েছে এর উল্টো। যে কোন কিছুর জন্যই তাবিজ খোঁজা হয়।হযরত থানভি রহিমাহুল্লাহ এ সম্পর্কে তার নিজের একটি ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, ‘একবার এক মহিলা এসে আমাকে বলল, হযরতজী! আমার সিঁথি সোজা হয় না। দয়া করে আমাকে একটি তাবিজ দিন যেন আমার সিঁথি সোজা হয়। আমি তাকে বললাম, আরে! এটাতো কোনো তাবিজের মাধ্যমে কিভাবে সোজা হবে না। তোমার নিজেকেই এটি সোজা করতে হবে। যেমনিভাবে অন্যরা করে। কিন্তু এটি মানতে নারাজ। সে বলতে লাগল, না হযরতজী! আপনি যদি একটা তাবিজ দেন তাহলে আমি এ জটিলতার সমাধান পাবো।’
তাবিজ-কবজে প্রতি মানুষের আসক্তি এ পর্যায়ে চলে গেছে যে, তারা আজকাল ধারণা করতে বসেছে যে, ওলামায়ে কেরাম এলেম অর্জন করে শুধু তাবিজ দেওয়ার জন্য। যে তাবিজ দিতে পারে সে অনেক বড় আলেম, অনেক বড় পীর। আর যে তাবিজ-কবজ দিতে পারেনা সে তেমন আলেম নয়।তেমন ভালো লেখাপড়া করেনি। সে বসে বসে তার জীবনকে নষ্ট করে দিয়েছে সেজন্য তাবিজ দিতে পারছে না
এটি আমাদের সমাজে অনেক বড় একটি ভুল প্রচলন। আল্লাহ পাক তো বলেছেন তার কাছে বিপদাপদে রুজু করার জন্য। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করার জন্য। দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে অনেক কিছু নেয়া যায়, পাওয়া যায় এবং সমাধান করা যায়। আর দোয়া তো এমন এক ইবাদত আপনি যদি দুনিয়াবী বিষয়েও আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, তাহলেও নেকি পাবেন। যেমন আপনি যদি বলেন, হে আল্লাহ! তুমি আমার সন্তান বাড়িয়ে দাও। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ভালো একজন স্ত্রী দান করো। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে অর্থ-সম্পদ দাও। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সুস্থ করে দাও। এসব দোয়ার ক্ষেত্রও আপনি নেকি পাবেন। অথচ তাবিজ-কবজ ব্যবহারের মধ্যে কোন নেকি নেই। তবে এটি ব্যবহার করা জায়েজ।
তাবিজ-কবজের মতো এ সাধারণ একটি বিষয় নিয়ে মানুষের কত তুলকালাম।কত আগ্রহ। হযরত গাঙ্গুহী রহিমাহুল্লাহর একটি ঘটনা আছে। একবার এক লোক তার কাছে এসে বলল, হযরতজী! আমি অনেক বড় একটি বিপদে আছি। আমাকে একটি তাবিজ দিন। তিনি বললেন, আরে ভাই! আমি তো তাবিজ দিতে পারি না। কিন্তু লোকটি তা মানতে নারাজ। বারবার সে পিড়াপিড়ি করতে লাগলো। আর হযরত গাঙ্গুহী রহিমাহুল্লাহ প্রত্যেকবারই বলতে লাগলেন, ভাই! আমিতো তাবিজ দিতে পারি না। আমি তোমার জন্য দোয়া করে দেব। আল্লাহ চাহে তো দোয়ার বরকতে তুমি তোমার বিপদ থেকে রক্ষা পাবে। কিন্তু লোকটি কিছুতেই না মানায় তিনি উর্দুতে একটি তাবিজ লিখে দিলেন। তাবিজে তিনি লিখলেন, ‘হে আল্লাহ আমি তাবিজ-কবজ লিখতে জানি না। আর এ লোকটি তা মানতে রাজি না। আপনি এই লোকটিকে বিপদ থেকে রক্ষা করুন।’
মূলত তাবিজ-কবজ এসেছে এভাবেই।কখনো কোন বুজুর্গ কাউকে কোন কিছু লিখে একটি তাবিজ দিলেন আর এর মাধ্যমে সে ভালো একটি সমাধান পেল। এর সঙ্গে কোরআন হাদিসের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি কোরআন হাদিস থেকে উদ্ভাবিত বিষয়ও নয়।এবং তাবিজের কোনো বিবরণও কোরআন হাদিসে নেই। তবে এটি জায়েজ। কিন্তু তাবিজের চেয়ে কোটি কোটি গুণ উত্তম হলো আল্লাহর কাছে সমূহ বিপদের জন্য দোয়া করা। তার কুদরতি পায়ে সেজদা করা।
মূলকথা হলো, মানুষ যখনই কোনো বিপদে আপদে পড়বে। তার উচিৎ সঙ্গে সঙ্গে নামাজে দাঁড়িয়ে যাওয়া এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করা। দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে এর সমাধান চাওয়া। যদি কেউ নামাজ ও দোয়া না করে এমন ধারণা করে যে, দোয়া তেমন কোন বড় বিষয় নয়।। তাবিজ-কবজ সবচেয়ে বড় সমাধান। তাহলে এটি অনেক বড় একটি ভুল এবং কোরআন হাদিস সাংঘর্ষিক বিষয়। এ ধারণা থেকে আমাদের ফিরে আসতে হবে, তাবিজ-কবজ নির্ভর জিন্দেগিকে পরিত্যাগ করতে হবে এবং দুআর প্রতি বেশি মনোযোগী হতে হবে।
-কেএল