ইসমাঈল আযহার: বহুকাল ধরে উপমহাদেশে কওমি মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রাজনীতির করে আসছেন। তবে আমাদের দেশে হালের এক যুগ থেকে কওমি অঙ্গনের একটা বিশাল অংশ রাজনীতির ময়দানে ব্যাপকহারে প্রবেশ করেছে। দেশের চলমান রাজনৈতিক ইস্যুগুলোতে তাদের ভূমিকা চোখে পড়ার মতো।
তবে দীর্ঘকাল ধরে মারাসার ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও একাডেমিকভাবে বা শিক্ষা সিলেবাসে রাষ্ট্রবিজ্ঞান তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না।
ফলে রাজনীতির ময়দানে কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনায় আলেমদের যে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে তার যথাযথ বিকাশ হচ্ছে বলে মনে হয় না। অবশ্য অতীতে কেউ কেউ ভালো নেতৃত্ব দিয়ে থাকলেও সাধারণ পর্যায়ে ভালো কোনো লিডারশিপ গড়ে উঠতে দেখা যায়নি।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনীতিতে কওমি ধারার রাজনীতিবিদদের এই সংকট থেকে উত্তরোণের উপায় কী, সাংগঠনিকভাবে জড়িত থাকার সাথে সাথে একাডেমিক শিক্ষাগ্রহণ এই সংকটের সমাধান দিতে কতটা ভূমিকা রাখতে পারে, মাদরাসার শিক্ষার্থীরা কুরআন-হাদিস ও ফিকহের তাবাদীর,পাশাপাশি রাষ্ট্রবিজ্ঞান জানলে কি এখান থেকে উত্তরোণ সম্ভব?- এমনই কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।
এম ই এস ওমরগণী কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক বিভাগের অধ্যাপক, ড. মাওলানা আ ফ ম খালিদ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে ইতিহাস পড়াচ্ছেন।তার প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি কওমি মাদরাসায়। শুধু ছাত্র নয় তিনি কওমি মাদরাসার একজন নিয়মিত শিক্ষকও বটে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা ও বর্তমান মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ছাত্ররাজনীতির বেহাল দশা নিয়ে তার সাথে কথা হলে তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেন- ‘মাদরাসা সিলেবাসের একটা নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞান সিলেবাসের অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে। এখন মারদাসাগুলোতে আষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আছে।
সরকার যদি দশম শ্রেণি পর্যন্ত খোলার অনুমতি দেন তাহলে আমরা দশম শ্রেণিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কোন বই পড়াতে পারি।
ওপরের ক্লাসগুলোতে থেকে সুল্লাম, মাইবুজির মতো কিতাবগুলো আমরা উঠিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞানের দু’একটা ঘন্টা হলে ভালো হবে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, দাওরা হাদিসে অনেক বই (কিতাব) আছে যা সিলেবাসের অন্তর্ভূক্ত কিন্তু খারেজী ঘন্টা করানো হয়। যেমন ইবনে মাজাহ আছে, মুয়াত্তায়ে ইমাম মালেক আছে। রাষ্টবিজ্ঞানের ভাল মানের কোন একটা বই সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করলে ভাল হবে।
রাজনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। যদিও শুধু রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ বিষয়টার মূল কারণ না। পারিপার্শিক আরো কিছু কারণ আছে।
তিনি মনে করেন, মাদরাসা পড়ুয়াদের জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ওপর এক বছরের একটা কোর্স খোলা হতে পারে। যাতে গতানুগতিক শিক্ষা সমাপ্তির পরে তারা রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্পর্কে খুব ভাল করে জানতে পারে।
বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান কবি,বাংলাদেশ ন্যাশনাল মুভমেন্টের প্রেসিডেন্ট দেশ চিন্তক কবি মুহিব খান নিজে একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে শুধুমাত্র রাজনীতি করার হাতিয়ার মনে করেন না।
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান শুধু রাজনীতি করার জন্য নয়। এটা সমাজের সফলতা ও সুষ্ঠভাবে জীবনযাপনের জন্যও পড়া জরুরী।’
পাশাপাশি রাজনীতির পড়াশোনা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের যোগসূত্র নিয়েও তিনি বলেছেন। ‘বর্তমান রাজনীতির ময়দানে কওমি মাদরাসা শিক্ষিতরা সক্রিয় নেতৃত্বদানে সক্ষম নয় এর প্রধান কারণ প্রাতিষ্ঠান শিক্ষা না থাকা। যা কোন আন্দোলনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।’
তিনি বলেন, বর্তমান রাজনীতির ময়দানে সফলতা অর্জন করতে হলে প্রতিটা পদক্ষেপ সঠিকভাবে নিতে হবে। আর সঠিকভাবে পদক্ষেপ নিতে হলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান জানা থাকাটা খুবই জরুরী।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে মুহিব খান বলেন, ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে সমাজ ও রাজনীতি বিষয়ে আমাদের ধারণা পরিস্কার হবে। সমাজের নানাবিধ সমস্যা চিহিৃত করে সেগুলোর সমাধানে ভাল পদক্ষেপ নিতে পারবো আমরা’
ড. আ. ফ. ম. খালেদ হোসাইন ও মুহিব খান আশা ব্যক্ত করেন, যদি রাষ্ট্রবিজ্ঞান কওমি সিলেবাসের অন্তর্ভূক্ত করা হয় তাহলে পূর্বের থেকে সমন্য হলেও রাজনীতিতে আমাদের অবস্থান শক্তিশালী হবে।
-কেএল