মোস্তফা ওয়াদুদ: কেউ ভালোবেসে, কেউ পরিবারের সিদ্ধান্তে ঘর বাঁধেন। শুরু হয় একটি সুখী সংসারের ‘পরশ পাথরের’ গল্প। ধন নয়, মান নয়, এইটুকু বাসা, করেছিনু আশা। প্রথমদিকে দাম্পত্য জীবনে বোঝাপড়াটা হয়ে ওঠে ‘সোনার হাতে সোনার কাকন, কে কার অলংকারে’র মতোন ধাধানো। কিন্তু বুকভরা আশা আর রঙিন স্বপ্ন নিয়ে ঘর বাঁধলেও সর্বক্ষেত্রে ধরা দিচ্ছে না সুখপাখি। কখনো মেহেদীর রঙ মোছার আগেই ভেঙে যাচ্ছে অনেকের সংসার। আধুনিকতার ছোঁয়ায় সংসারের বন্ধন দুর্বল হচ্ছে ক্রমেই। যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে মানুষ। ভালো লাগা, ভালোবাসাও যাচ্ছে কমে। ফলে বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদ।
হুটহাট বিয়ে আবার হুটহাট বিচ্ছেদ-সমাজে কেনো ঘটছে এমন ঘটনা? এর থেকে উত্তরণের উপায় কী? এসব বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন দেশের তিন শীর্ষ আলেম।
শরীয়তের হুকুম না মানাই বিচ্ছেদের প্রধান কারণ
মাওলানা আতাউল্লাহ ইবনে হাফিজ্জী
বিয়ে হলো একটি ধর্মীয় বন্ধন। আল্লাহ তায়ালা বৈধভাবে মানব সভ্যতাকে পৃথিবীতে টিকিয়ে রাখার জন্য একজন নারী-পুরুষের মাঝে যে পদ্ধতি চালু রেখেছেন-সেটা হলো বিয়ে। সুতরাং বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে। শরীয়তের হুকুম মোতাবেক জীবন পরিচালনা করতে হবে।
তবেই বিয়ে বন্ধন স্থায়ী হবে। আর যদি দুনিয়ার সামান্য একটু আনন্দ উপভোগ করতে গিয়ে শরীয়তের হুকুমের লঙ্ঘন করে তাহলে সেটা কখনোই কাম্য নয়। বর্তমানে শরীয়তের হুকুম না মানাই বিয়ে-বিচ্ছেদের প্রধান কারণ হিসেবে মনে করছি। তাই শরীয়তের বিধান লঙ্ঘন হয়-এমন কোনো কাজ না করা।
বিশেষত বেপর্দাভাবে চলাফেরা, টেলিভিশন দেখা, মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল আসক্তি, মোবাইলে পর নারী-বা পরপুরুষের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক তৈরি-এসব বিষয় থেকে পরহেজ করতে হবে। তবেই একটি বৈধ সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হবে।
স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই পরস্পরের প্রতি পরস্পর সহানুভূতিশীল হতে হবে
আল্লামা সালাহউদ্দীন নানুপুরী
সমাজে বিয়ে-বিচ্ছেদগুলো কেনো সংগঠিত হয় সেটা আগে খুঁজে বের করতে হবে। এরপর সেটার সংশোধন করা যায় কিভাবে-সে পথ বের করতে হবে। একটি সুন্দর সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই পরস্পরের প্রতি পরস্পর সহানুভূতিশীল হতে হবে। একজনের ভেতর আরেকজনকে ছাড় দেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে পারিবারিক বন্ধন তৈরির পাশাপাশি টিকিয়ে রাখাও জরুরি। তাই সবক্ষেত্রে ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতে হবে।
সংসার টিকিয়ে রাখার অন্যতম প্রধান বিষয় হলো ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা। জীবনের সব ক্ষেত্রে সুন্নাতের প্রতি যত্মবান হওয়া। সুন্নাতের মাঝে রয়েছে বরকত। সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করতে পারলে কখনোই বিয়ে-বিচ্ছেদের মতো পরিবেশের সৃষ্টি হবে না-ইন শা আল্লাহ।
বিয়ে-বিচ্ছেদ ঠেকাতে সমাজের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে
আল্লামা সাজিদুর রহমান, বি.বাড়ীয়া
সামাজিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক পট পরিবতর্ন, ধর্মীয় অনুশাসন থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে অধিকাংশ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। এছাড়া পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়ে যাওয়াও বিয়ে-বিচ্ছেদের পেছনে একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে।
তবে সমাজের এ বিয়ে-বিচ্ছেদ ঠেকাতে সমাজের অভিভাবকদের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। কেননা সংসারে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কখনো কখনো বিবাদ হতেই পারে। কিন্তু সে বিবাদটি যেনো বিচ্ছেদ পর্যন্ত না গড়ায় সেজন্য সমাজের কর্তাব্যক্তিরা ভূমিকা রাখতে পারেন। অল্প বয়স্ক তরুণ-তরুণীদের মাঝেই বিয়ে-বিচ্ছেদের ঘটনা বেশি ঘটে। জীবনের অনেক বিষয়ই তারা বুঝে উঠতে না পারায় হুটহাট সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। কিন্তু সমাজের বয়োজিষ্ঠ মুরুব্বিগণ চাইলে তাদের মাঝে সুন্দর একটি সুরাহা করে বিয়ে-বিচ্ছেদ ঠেকাতে পারেন।
এছাড়া সরকারি এক গবেষণায় দেখো গেছে, সমাজে নারীদের তালাকের আবেদনের সংখ্যা বেশি। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা মনে করনে, তালাকের যে আইন আছে-তাতে যে কেউ কাজীর কাছে গিয়ে তালাক দিতে বা নিতে পারে। এক্ষেত্রে সামাজিক বন্ধনের ঘাটতি রয়েছে। বিয়ের সময় উকিল বাবাসহ অনেকেই উপস্থিত থাকেন। কিন্তু ডিভোর্সের সময় তাদের কাউকে লাগে না। এক্ষেত্রে আইনটা যদি এমন হতো যে, বিয়ের সময় যেমন দামি দামি সব লোক উপস্থিত থাকেন। তালাকের সময়ও তারা উপস্থিত থাকবে। তাহলে হয়তো এটা কিছুটা হলেও কমে আসতো।
-কেএল