হাফেজ মাওলানা আব্দুল মাজীদ মামুন রাহমানী
১. নিয়ত সহীহ হওয়া। অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দান করা; অন্য কোন উদ্দেশ্য না থাকা। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে...
وَ مَثَلُ الَّذِیْنَ یُنْفِقُوْنَ اَمْوَالَهُمُ ابْتِغَآءَ مَرْضَاتِ اللهِ وَ تَثْبِیْتًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ كَمَثَلِ
جَنَّةٍۭ بِرَبْوَةٍ اَصَابَهَا وَابِلٌ فَاٰتَتْ اُكُلَهَا ضِعْفَیْنِ فَاِنْ لَّمْ یُصِبْهَا وَابِلٌ فَطَلٌ وَ اللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِیْرٌ.
অর্থাৎ আর যারা নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ এবং নিজেদের মধ্যে পরিপক্বতা আনয়নের জন্য, তাদের দৃষ্টান্ত এ রকম- যেমন কোনও টিলার উপর একটি বাগান রয়েছে, তার উপর প্রবল বৃষ্টিপাত হল, ফলে তা দ্বিগুণ ফল জন্মাল। যদি তাতে প্রবল বৃষ্টি নাও পড়ে, তবে হালকা বৃষ্টিও (তার জন্য যথেষ্ট)। আর তোমরা যা কিছু কর, আল্লাহ তা অতি উত্তমরূপে দেখেন। সূরা বাকারা আঃ নং- ২৬৫
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى. নিশ্চয়ই সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তি তা-ই পাবে, যার নিয়ত সে করবে। বুখারি শরিফ, হাদিস নং- ১; মুসলিম শরিফ, হাদিস নং-১৯০৭
অন্য একটি দীর্ঘ হাদিসের শেষের দিকে নিয়ত সহিহ না করে দান করার ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন...
وَرَجُلٌ وَسَّعَ اللهُ عَلَيْهِ، وَأَعْطَاهُ مِنْ أَصْنَافِ المَالِ، فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ، فَعَرَفَهَا . قَالَ: فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا ؟ قَالَ: مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبيلٍ تُحِبُّ أَنْ يُنْفَقَ فِيهَا إِلاَّ أَنْفَقْتُ فِيهَا لَكَ. قَالَ: كَذَبْتَ، وَلَكِنَّكَ فَعَلْتَ لِيُقَالَ: جَوَادٌ ! فَقَدْ قِيلَ، ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ في النَّارِ»
অর্থাৎ এমন ব্যক্তি, যার রুযীকে আল্লাহ প্রশস্ত করেছিলেন এবং সকল প্রকার ধন-দৌলত যাকে প্রদান করেছিলেন। তাকে আল্লাহর দরবারে হাজির করা হবে। আল্লাহ তাকে তাঁর দেওয়া সমস্ত নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। সেও সব কিছু স্মরণ করবে। অতঃপর আল্লাহ প্রশ্ন করবেন, ‘তুমি ঐ সকল নেয়ামতের বিনিময়ে কি আমল ক’রে এসেছ?’ সে বলবে, ‘যে সকল রাস্তায় দান করলে তুমি খুশী হও সে সকল রাস্তার মধ্যে কোনটিতেও তোমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে খরচ করতে ছাড়িনি।’ তখন আল্লাহ বলবেন, ‘মিথ্যা বলছ তুমি। বরং তুমি এ জন্যই দান করেছিলে; যাতে লোকে তোমাকে দানবীর বলে। আর তা বলা হয়েছে।’ অতঃপর (ফেরেশতাবর্গকে) হুকুম করা হবে এবং তাকে উবুড় ক’রে টেনে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। মুসলিম শরিফ হাদিস নং- ১৯০৫; তিরমিযি শরিফ হাদিস নং- ২৩৮২; নাসায়ি শরিফ হাদিস নং- ৩১৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং- ৮০৮৭
২.হালাল সম্পদ থেকে দান করা। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اَنْفِقُوْا مِنْ طَیِّبٰتِ مَا كَسَبْتُمْ وَ مِمَّاۤ اَخْرَجْنَا لَكُمْ مِّنَ
الْاَرْضِ.
হে মুমিনগণ! তোমরা যা কিছু উপার্জন করেছ এবং আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যা কিছু উৎপন্ন করেছি, তার উৎকৃষ্ট জিনিসসমূহ থেকে একটি অংশ (আল্লাহর পথে) ব্যয় কর। সূরা বাকারা, আঃ নং- ২৬৭
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَنْ تَصَدَّقَ بِعَدْلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ، وَلاَ يَقْبَلُ اللهُ إِلاَّ الطَّيِّبَ، وَإِنَّ اللهَ يَتَقَبَّلُهَا بِيَمِينِهِ، ثُمَّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهِ، كَمَا يُرَبِّي أَحَدُكُمْ فَلُوّهُ، حَتّى تَكُونَ مِثْلَ الجَبَلِ.
যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ দান করে, "আর আল্লাহ তাআলা ‘হালাল’ ছাড়া গ্রহণ করেন না" আল্লাহ তা ডান হস্তে গ্রহণ করেন। অতঃপর তা লালন-পালন করে বড় করতে থাকেন। যেমন তোমরা ঘোড়ার বাচ্চা লালন-পালন কর। একপর্যায়ে এই ‘সামান্য দান’ পাহাড়সম হয়ে যায়। বুখারি শরিফ হাদিস নং- ১৪১০; মুসলিম শরিফ হাদিস নং- ১০১৪
৩. পছন্দনীয় বস্তু থেকে দান করা। আল্লাহ তাআলা বলেন لَنۡ تَنَالُوا الۡبِرَّ حَتّٰی تُنۡفِقُوۡا مِمَّا تُحِبُّوۡنَ ۬ؕ وَمَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ شَیۡءٍ فَاِنَّ اللّٰہَ بِہٖ عَلِیۡمٌ
অর্থাৎ তোমরা যা পছন্দ কর তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনও পুণ্য লাভ করবে না। তোমরা যা কিছু ব্যয় কর আল্লাহ্ অবশ্যই সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত। সূরা আলে ইমরান আঃ নং- ৯২
৪. সাধ্যানুযায়ী অল্প হলেও দান করা। হাদিস শরিফে এরশাদ হচ্ছে اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ. অর্থাৎ জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা করো, খেজুরের এক টুকরো (পরিমাণ সদকা করে) হলেও। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪১৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০১৬
৫. সৎ পথ ও ভালকাজে দান করা। মহান রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেন. وَتَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡبِرِّ وَالتَّقۡوٰی ۪ وَلَا تَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡاِثۡمِ وَالۡعُدۡوَانِ ۪ وَاتَّقُوا اللّٰہَ ؕ اِنَّ اللّٰہَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ
অর্থাৎ তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে একে অন্যকে সহযোগিতা করবে। গুনাহ ও জুলুমের কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করবে না। আল্লাহকে ভয় করে চলো। নিশ্চয়ই আল্লাহর শাস্তি অতি কঠিন। সূরা মায়িদাহ, আঃ নং-২
৬. ভারসাম্য রক্ষা করে দান করা। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে...وَ لَا تَجْعَلْ یَدَكَ مَغْلُوْلَةً اِلٰی عُنُقِكَ وَ لَا تَبْسُطْهَا كُلَّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُوْمًا مَّحْسُوْرًا.
অর্থাৎ (কৃপণতাবশত) নিজের হাত ঘাড়ের সাথে বেঁধে রেখ না এবং তা সম্পূর্ণরূপে খুলে রেখ না, যদ্দরুন তোমাকে নিন্দাযোগে ও নিঃস্ব হয়ে বসে পড়তে হবে। সূরা ইসরা, আঃ নং-২৯
অন্য আয়াতে এরশাদ হচ্ছে...
وَ الَّذِیْنَ اِذَاۤ اَنْفَقُوْا لَمْ یُسْرِفُوْا وَ لَم
یَقْتُرُوْا وَ كَانَ بَیْنَ ذٰلِكَ قَوَامًا.
অর্থাৎ আর ব্যয় করার সময় যারা না করে অপব্যয় এবং না করে কার্পণ্য; বরং তা হয় উভয়ের মাঝখানে ভারসাম্যপূর্ণ।
সূরা ফুরকান আঃ নং- ৫৭
৭. পূর্ণ সম্পদ দান না করা, সন্তানদের জন্য কিছু রেখে যাওয়া। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন...
إِنَّكَ أَنْ تَذَرَ وَرَثَتَكَ أَغْنِيَاءَ، خَيْرٌ مِنْ أَنْ تَذَرَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُونَ النَّاسَ، وَلَسْتَ تُنْفِقُ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللهِ إِلاَّ أُجِرْتَ بِهَا، حَتَّى اللُّقْمَةَ تَجْعَلُهَا فِي فِي امْرَأَتِكَ.
অর্থাৎ তুমি তোমার সন্তান-সন্ততিকে দরিদ্র অবস্থায় রেখে যাবে আর তারা মানুষের কাছে হাত পাতবে, এরচে’ অনেক উত্তম হচ্ছে তাদেরকে সচ্ছল অবস্থায় রেখে যাওয়া। আর তুমি যে খরচই কর না কেন, তা যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে তবে আল্লাহ তোমাকে সওয়াব দান করবেন। এমনকি একটি লোকমা, যা তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দাও। বুখারি শরিফ হাদিস নং- ৪৪০৯
৮. পরিস্থিতি বুঝে গোপনে বা প্রকাশ্যে দান করা। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে...
اِنۡ تُبۡدُوا الصَّدَقٰتِ فَنِعِمَّا ہِیَ ۚ وَاِنۡ تُخۡفُوۡہَا وَتُؤۡتُوۡہَا الۡفُقَرَآءَ فَہُوَ خَیۡرٌ لَّکُمۡ ؕ وَیُکَفِّرُ عَنۡکُمۡ مِّنۡ سَیِّاٰتِکُمۡ ؕ وَاللّٰہُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرٌ
অর্থাৎ যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-খয়রাত কর, তবে তা কতইনা উত্তম। আর যদি দান-খয়রাত গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও, তবে তা তোমাদের জন্যে আরও উত্তম। আর তিনি তোমাদের কিছু কিছু পাপ মোচন করবেন। বস্তুত আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ সম্পর্কে পূর্ণ অবগত। সূরা বাকারা আঃ নং-২৭১
অন্য এক আয়াতে এরশাদ হচ্ছে...
إنَّ الَّذِیۡنَ یَتۡلُوۡنَ کِتٰبَ اللّٰہِ وَاَقَامُوا الصَّلٰوۃَ وَاَنۡفَقُوۡا مِمَّا رَزَقۡنٰہُمۡ سِرًّا وَّعَلَانِیَۃً یَّرۡجُوۡنَ تِجَارَۃً لَّنۡ تَبُوۡرَ ۙ
অর্থাৎ যারা আল্লাহর কিতাব তেলাওয়াত করে, নামায কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা থেকে (সৎকাজে) ব্যয় করে গোপনে ও প্রকাশ্যে, তারা এমন ব্যবসায়ের আশাবাদী, যাতে কখনও লোকসান হয় না।
সূরা ফাত্বির আঃ নং- ২৯
৯. সচ্ছল ও অসচ্ছল সর্বাবস্থায় সাধ্যানুযায়ী দান করা। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা মুত্তাকিদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন-
الَّذِیْنَ یُنْفِقُوْنَ فِی السَّرَّآءِ وَ الضَّرَّآءِ. যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল (সর্বাবস্থায় আল্লাহর জন্য অর্থ) ব্যয় করে। সূরা আলে ইমরান, আঃ নং- ১৩৪
১০. সুস্থ-সবল অবস্থায় দান করা। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, এক লোক এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, কখন দান করা উত্তম? তিনি ইরশাদ করলেন...
أَنْ تَصَدَّقَ وَأَنْتَ شَحِيحٌ، أَوْ صَحِيحٌ، تَأْمُلُ الْعَيْشَ، وَتَخْشَى الْفَقْرَ، وَلَا تُمْهِلْ حَتَّى إِذَا كَانَتْ بِالْحُلْقُومِ، قُلْتَ: لِفُلَانٍ كَذَا، وَلِفُلَانٍ كَذَا، وَقَدْ كَانَ.
যখন তুমি (অতি প্রয়োজন বা লোভের কারণে) মাত্রাতিরিক্ত মিতব্যয়ী বা হাড়কিপটে হও এবং সম্পদ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশংকা কর, অথবা যখন তুমি সুস্থাবস্থায় দীর্ঘায়ুর প্রত্যাশা কর তখন সদকা করা। এত দেরি করো না যে, মৃত্যু এসে যায় আর তখন তুমি (ওসিয়ত করে) বলছ- আমার সম্পদগুলো অমুকের জন্য, অমুকের জন্য! অথচ (তুমি না বললেও) তা তাদের জন্য হয়েই আছে। ইবনে মাজাহ শরিফ, হাদিস নং- ২৭০৬ মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং- ৯৭৬৮
১১. দান সদকা করে খোঁটা বা অন্য কোনোভাবে কষ্ট দিয়ে দান-অনুদান নষ্ট না করা। মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন
اَلَّذِیۡنَ یُنۡفِقُوۡنَ اَمۡوَالَہُمۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ثُمَّ لَا یُتۡبِعُوۡنَ مَاۤ اَنۡفَقُوۡا مَنًّا وَّلَاۤ اَذًی ۙ لَّہُمۡ اَجۡرُہُمۡ عِنۡدَ رَبِّہِمۡ ۚ وَلَا خَوۡفٌ عَلَیۡہِمۡ وَلَا ہُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ
অর্থাৎ যারা নিজ সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, আর ব্যয় করার পর খোঁটা দেয় না এবং কোনরূপ কষ্টও দেয় না, তারা নিজ প্রতিপালকের কাছে তাদের সওয়াব পাবে। তাদের কোনও ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না।
সূরা বাকারা আঃ নং-২৬২
অন্য এক আয়াতে এরশাদ হচ্ছে... قَوۡلٌ مَّعۡرُوۡفٌ وَّمَغۡفِرَۃٌ خَیۡرٌ مِّنۡ صَدَقَۃٍ یَّتۡبَعُہَاۤ اَذًی ؕ وَاللّٰہُ غَنِیٌّ حَلِیۡمٌ অর্থাৎ নম্র কথা বলে দেয়া এবং ক্ষমা প্রদর্শন করা ঐ দান খয়রাত অপেক্ষা উত্তম, যার পরে কষ্ট দেয়া হয়। আল্লাহ তা’আলা সম্পদশালী, সহিঞ্চু।
সূরা বাকারা আঃ নং-২৬৩
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تُبۡطِلُوۡا صَدَقٰتِکُمۡ بِالۡمَنِّ وَالۡاَذٰی ۙ کَالَّذِیۡ یُنۡفِقُ مَالَہٗ رِئَآءَ النَّاسِ وَلَا یُؤۡمِنُ بِاللّٰہِ وَالۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ ؕ فَمَثَلُہٗ کَمَثَلِ صَفۡوَانٍ عَلَیۡہِ تُرَابٌ فَاَصَابَہٗ وَابِلٌ فَتَرَکَہٗ صَلۡدًا ؕ لَا یَقۡدِرُوۡنَ عَلٰی شَیۡءٍ مِّمَّا کَسَبُوۡا ؕ وَاللّٰہُ لَا یَہۡدِی الۡقَوۡمَ الۡکٰفِرِیۡنَ
অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান খয়রাত বরবাদ করো না সে ব্যক্তির মত যে নিজের ধন-সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। অতএব, এ ব্যাক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ পাথরের মত যার উপর কিছু মাটি পড়েছিল। অতঃপর এর উপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হলো, অনন্তর তাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে দিল। তারা ঐ বস্তুর কোন সওয়াব পায় না, যা তারা উপার্জন করেছে। আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না। সূরা বাকারা আঃ নং-২৬৪
১২.দান করতে হয় নিজের প্রয়োজনে নিজ দায়িত্বে ইসলামের দৃষ্টিতে দান করতে হয় নিজের প্রয়োজনে। দানের মাধ্যমে গ্রহীতার প্রতি অনুগ্রহ করা হচ্ছে- এমনটি নয় কখনো; বরং তার প্রাপ্য ও অধিকারটাই তাকে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন...
وَ الَّذِیْنَ فِیْۤ اَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَّعْلُوْمٌ لِّلسَّآىِٕلِ وَ الْمَحْرُوْمِ. অর্থাৎ আর যাদের সম্পদে নির্ধারিত ‘হক’ (অধিকার) রয়েছে যাঞ্চাকারী ও বঞ্চিতদের। -সূরা মাআরিজ (৭০) : ২৪-২৫
অর্থাৎ কুরআনে কারীমে একে তাদের ‘হক’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সুতরাং দানকারীর মানসিকতা থাকবে, দান করছি নিজের প্রয়োজনে। গ্রহীতা ‘দান’টা গ্রহণ করে কেমন যেন আমার প্রতিই এক ধরনের করুণা করল!
১৩. দানের বদলা একমাত্র আল্লাহ তাআলাই দিবেন এই প্রত্যাশায় দান করা।
পবিত্র কুরআনের এরশাদ হচ্ছে. وَمَآ أَنفَقۡتُم مِّن شَيۡءٖ فَهُوَ يُخۡلِفُهُۥۖ وَهُوَ خَيۡرُ ٱلرَّٰزِقِينَ অর্থাৎ আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিয্কদাতা। সূরা সাবা:৩৯
১৪. মৃত্যুর পরও দানের উপকারিতা জারি থাকবে এই প্রত্যাশায় দান করা। হাদিস শরিফে এরশাদ হচ্ছে...
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةٍ: مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، وَعِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، وَوَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ "
অর্থাৎ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ-
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, যখন কোন লোক মারা যায়, তখন তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিন প্রকার আমল (জারি থাকে)। (প্রথম) সাদাকা জারিয়া (চলমান সাদাকা); (দ্বিতীয়) ঐ ইলম, যা দ্বারা অন্য লোক উপকৃত হয়; (তৃতীয়) নেক সন্তান, যে তার জন্য দুআ করে। মুসলিম শরিফ হাদিস নং- ১৬৩১, তিরমিযি শরিফ হাদিস নং-১৩৭৬, নাসায়ি শরিফ হাদিস নং- ৩৬৫১,
আবূ দাউদ শরিফ, হাদিস নং- ২৮৮০,৩৫৪০, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং- ৮৬২৭
১৫. মৃত্যুর পূর্বেই দান করতে হবে মৃত্যুর পর দান করার কোন সুযোগ নেই। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে...
وَاَنۡفِقُوۡا مِنۡ مَّا رَزَقۡنٰکُمۡ مِّنۡ قَبۡلِ اَنۡ یَّاۡتِیَ اَحَدَکُمُ الۡمَوۡتُ فَیَقُوۡلَ رَبِّ لَوۡلَاۤ اَخَّرۡتَنِیۡۤ اِلٰۤی اَجَلٍ قَرِیۡبٍ ۙ فَاَصَّدَّقَ وَاَکُنۡ مِّنَ الصّٰلِحِیۡنَ
অর্থাৎ আমি তোমাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা থেকে (আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী) ব্যয় কর, এর আগে যে, তোমাদের কারও মৃত্যু এসে যাবে আর তখন বলবে, হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে কিছু কালের জন্য সুযোগ দিলে না কেন, তাহলে আমি দান-সদকা করতাম এবং নেক লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম। সূরা মুনাফিকূন আঃ নং- ১০
ولَنۡ یُّؤَخِّرَ اللّٰہُ نَفۡسًا اِذَا جَآءَ اَجَلُہَا ؕ وَاللّٰہُ خَبِیۡرٌۢ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ যখন কারও নির্ধারিত কাল এসে যাবে তখন আল্লাহ তাকে কিছুতেই অবকাশ দিবেন না। আর তোমরা যা-কিছু কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবহিত। আল মুনাফিকূন-১১
-gcdt