মুযযাম্মিল হক উমায়ের নাম— আহমাদ। পিতার নাম— আব্দুল্লাহ বিন মায়মুন। ইমাম ছিলেন। হাফিজুল হাদিস ছিলেন। সিরিয়াবাসীদের সর্বজন শ্রদ্ধেয় মুরব্বী ছিলেন। মূলত তিনি কুফার অধিবাসী ছিলেন। তিনি নিজেই মৃত্যু সন বলেছেন ১৬৪ হিজরীতে। হজরত সুফিয়ান বিন উয়ায়না, হজরত ওকী রাহিমাহুমাল্লাহু তায়ালাসহ আরো বড় বড় মুহাদ্দিস থেকে ইলম হাসিল করেছেন।
তাঁর ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের নাম হলো, হজরত আবু জুরআ রাজি, আবু হাতিম রাজি, ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম ইবনে মাজাহ, রাহিমাহুমুল্লাহু তায়ালা।
দামেশকের শায়খ হজরত আবু সুলাইমান দারানী রাহিমাহুল্লাহু তায়ালার সংশ্রবে দীর্ঘ সময় ছিলেন। তাঁর কাছ থেকে ইলমে মারেফত হাসিল করেছেন। তিনি একই সাথে বড় হাদিস বিশারদ ও আল্লাহওয়ালা উঁচুমাপের বুজুর্গ ছিলেন। তাঁর সম্পর্কে হজরত জুনায়েদ বাগদাদী রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা বলেছেন, তিনি হলেন ‘শাম দেশের সুগন্ধি ফুল’। তিনি ২৪৬ হিজরীতে ইন্তিকাল করেন।
তিনি বলেন, ১. যে ব্যক্তি দুনিয়া পাওয়ার জন্য দুনিয়ার দিকে নজর দিবে আল্লাহ তায়ালা তার অন্তর থেকে ইয়াকীনের নূর ও দুনিয়াবিমুখতার গুণ বের করে দিবেন।
২. উদাসীনতা ও শক্ত হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মসিবত বান্দার উপর আর কোনো কিছু হতে পারে না।
৩. তিনি একনাগারে ৩০ বছর ইলম হাসিল করেছেন। যখন তিনি গন্তব্যে পৌঁছে যান, তখন তিনি তাঁর সংগ্রহে থাকা সমস্ত কিতাবকে পানিতে ডুবিয়ে দেন। পানিতে ডুবিয়ে দেওয়ার কারণও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমি এই কাজ ইলমের সাথে বেয়াদবী করে করিনি। ইলমে হেয়—প্রতিপন্ন করার জন্য করিনি। তবে এইজন্য করেছি যে, আমি ইলম হাসিল করা শুরু করেছিলাম হিদায়াত হাসিলের জন্য। আমি সেই কাঙ্খিত হিদায়াত হাসিল করতে পেরেছি। সুতরাং এখন আমি শুধুই হিদায়াত নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। আর কোনো কিছুতে নিজেকে জড়াতে চাইনি— তাই কিতাবগুলি আমার কাছ থেকে সরিয়ে দিয়েছি।
সূত্র: তবাকাতুল আওলিয়া: পৃ. ৩২
৪. প্রবৃত্তির চাহিদাকে মিটিয়ে দেওয়া ব্যক্তি হলো, আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্টকারী। সেও আল্লাহ তায়ালার উপর সন্তুষ্ট। আল্লাহ তায়ালার সৃষ্ট মাখলুকের উপর দয়া করা মানুষকে নবীগণের মর্যাদার স্তরে পেঁৗছে দেয়। সূত্র: হিলয়াতুল আওলিয়া: খ. ১০, পৃ. ৫
৫. আল্লাহ তায়ালাকে মহব্বত করার প্রমাণ হলো, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য করা। ৬. যে ব্যক্তি দুনিয়াকে পরিপূর্ণভাবে চিনতে পেরেছে, সে দুনিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে।
৭. যে ব্যক্তি পরকালকে পরিপূর্ণভাবে চিনতে পেরেছ, সে পরকালের দিকে নিজেকে ঝুকিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। ৮. যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালাকে যথাযথ চিনতে পেরেছে, সে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টিকে সকল কিছুর উপর প্রাধান্য দিতে সক্ষম হয়েছে।
৯. যে ব্যক্তি নিজেকে চিনতে পারেনি, সে মূলত তার দীন বুঝতে ধেঁাকা খেয়েছে। ১০. তোমার কাছে দুনিয়া না থাকা অবস্থায় যদি তোমার নফস তোমাকে দুনিয়া ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে, তাহলে তোমার বুঝতে হবে এটি মূলত নফসের ধেঁাকাবাজি।
আর তোমার কাছে দুনিয়া পর্যাপ্ত বিদ্যমান থাকা অবস্থায় যদি তোমার নফস তোমাকে দুনিয়া ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে, তাহলে তোমার বুঝতে হবে— এটিই কাম্য। নফস তোমাকে যথাযথই পরামর্শ দিয়েছে। এই পরামর্শ গ্রহণ করা কামিয়াবীর আলামত। সূত্র: হিলয়াতুল আওলিয়া: খ. ১০, পৃ. ৭
-এটি