মুফতি সফিউল্লাহ।। কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আদম আ. থেকে সকল যুগে কুরবানি ছিল। তবে তা আদায়ের পন্থা এক ছিল না। শরিয়াতে মুহাম্মাদির কুরবানি মিল্লাতে ইবরাহিমির সুন্নত। সেখান থেকেই এসেছে এই কুরবানি।
এটি শাআইরে ইসলাম তথা ইসলামের প্রতীকি বিধানাবলির অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া গরীব-দুঃখী ও পাড়া-প্রতিবেশীর আপ্যায়নের ব্যবস্থা হয়। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শর্তহীন আনুগত্যের শিক্ষা রয়েছে কুরবানীতে। পাশাপাশি আল্লাহ তাআলার জন্য ত্যাগ ও বিসর্জনের ছবকও আছে এতে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-فصل لربك وانحر (তরজমা) অতএব আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কুরবানী আদায় করুন। (সূরা আনআম:২)
অন্য আয়াতে এসেছে-قل ان صلاتى ونسكى ومحياى ومماتى لله رب العالمين. (তরজমা) (হে রাসূল!) আপনি বলুন, আমার নামায, আমার কুরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ (অর্থাৎ আমার সবকিছু) আল্লাহ রাববুল আলামীনের জন্য উৎসর্গিত। (সূরা আনআম: ১৬২)
পশু জবাই করে কুরবানি করার মধ্যে এই হিকমত ও ছবক আছে যে, আল্লাহর মুহববতে নিজের সকল অবৈধ চাহিদা ও পশুত্বকে কুরবানি করা এবং ত্যাগ করা। সুতরাং কুরবানী থেকে কুপ্রবৃত্তির দমনের জযবা গ্রহণ করা উচিত। তাই কুরবানীর মধ্যে ইবাদতের মূল বিষয় তো আছেই, সেই সাথে তাকওয়ার অনুশীলনও রয়েছে।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-لن ينال الله لحومها ولا دمائها ولكن يناله التقوى منكم (তরজমা) (মনে রেখো, কুরবানির জন্তুর) গোশত অথবা রক্ত আল্লাহর কাছে কখনোই পৌঁছে না; বরং তাঁর কাছে কেবলমাত্র তোমাদের পরহেযগারিই পৌঁছে। (সূরা হজ্ব : ৩৭)
কোরবানির মূল শিক্ষা তাকওয়া অর্জন ও আত্মার সংশোধন। বাহ্যিকভাবে কোরবানিদাতার মনের এই অবস্থা অনুধাবন করা যায় না। এটি যার যার অন্তরের ব্যাপার। অন্তর যদি মানুষের বিশুদ্ধ হয় তাহলে গোটা দেহই বিশুদ্ধ হয়ে যায়।
আল্লাহ অন্তর দেখে বান্দার বিচার করবেন। কার অন্তর কতটা স্বচ্ছ ও সুন্দর আল্লাহর কাছে তা পরীক্ষা দেওয়ার উপযুক্ত সময় কোরবানি। কোরবানি আসে আবার চলে যায়; কিন্তু আমাদের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে এর ফলাফলটা কী। জীবনে বহুবার পশু জবেহ করার মাধ্যমে কোরবানির ঈদ পালন করেছি; কিন্তু আমার কোরবানি কবুল হয়েছে কি? কেন হয়নি তা কি ভেবে দেখেছি? এর থেকে কী শিক্ষা গ্রহণ করেছি?
কোরবানি ঈদের আরেকটি শিক্ষা হলো- একা একা ঈদ আনন্দ উপভোগ না করা। ঈদ মানে আনন্দ। নিজের আনন্দে গরিবদেরও শরিক করা। সাধ্যমতো তাদের মুখে একটু সুখের নির্মল হাসি ফোটাতে প্রাণান্তকর চেষ্টা করা।
আমাদের উচিত পশু কোরবানির সঙ্গে সঙ্গে নিজের পাশবিক চরিত্রকেও জবেহ করা এবং জীবন চলে গেলেও যেন আমরা কোরবানির শিক্ষা ভুলে না যাই সে অঙ্গীকার করা। পাশাপাশি কোরবানির শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে জীবনকে সুন্দর ও সুখময় করে গড়ে তোলা।
লেখক: শিক্ষক, শেখ জনূরুদ্দীন র. দারুল কুরআন, চৌধুরী পাড়া, ঢাকা
-এটি