আ.স.ম আল আমিন
কুরবানি কি? কুরবানি শব্দটি ‘কুরবুন’ মূল ধাতু থেকে নির্গত ।অর্থ হলো- নৈকট্য লাভ করা, প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করা।
শরিয়তের পরিভাষায়-নির্দিষ্ট জন্তুকে একমাত্র আল্লাহ পাকের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত নিয়মে মহান আল্লাহ পাকের নামে জবেহ করাই হলো কুরবানি।
কুরবানি ইসলামের অন্যতম এক নিদর্শন, তার হুকুমের ব্যাপারে ইমামদের মতবিরোধ রয়েছে। জমহুর উলামাদের নিকট সুন্নতে মুয়াক্কাদা, হানাফি মাযহাবের মতে ওয়াজিব।
এখন কথা হলো কুরবানি কারা করবে? যারা জিলহজ্জ মাসের দশ, এগারো, ও বারো তারিখে নিজেদের নিত্য প্রয়োজনীয় খরচ ব্যতিত অতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা এর সমমূল্যের মালিক হয়, তাহলে তাদের উপর কুরবানী করা আবশ্যক।
অর্থ্যাৎ যারা এই তিনদিনে ৫৮,১৭০ টাকার মালিক থাকবে।
কোরবানির ইতিহাসঃ-
(১) পৃথিবীর ইতিহাসে হযরত আদম আ. এর দুই পুত্রের কুরবানির মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর কুরবানি সূচনা হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর তুমি তাদের নিকট আদমের দুই পুত্রের সংবাদ যথাযথভাবে বর্ণনা কর, যখন তারা উভয়ে কুরবানী পেশ করল। অতঃপর তাদের একজন থেকে গ্রহণ করা হল, আর অপরজন থেকে গ্রহণ করা হল না।
সে বলল, ‘অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব’। অন্যজন বলল, ‘আল্লাহ কেবল মুত্তাকীদের থেকে গ্রহণ করেন’। (সূরা মায়েদা-২৭) যদি তুমি আমার প্রতি তোমার হাত প্রসারিত কর আমাকে হত্যা করার জন্য, আমি তোমাকে হত্যা করার জন্য আমার হাত তোমার প্রতি প্রসারিত করব না। নিশ্চয় আমি সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহকে ভয় করি’। (সূরা মায়েদা-২৮)
(২) মুসলিম উম্মাহর জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম আ. এর পুত্র হযরত ইসমাইল আ. কে কুরবানি করার মাধ্যমে দ্বিতীয় ইতিহাসের এক নতুন মাত্রা তৈরি হয়। তবে ইসলামে হযরত ইসমাইল আ.এর স্বরনে কুরবানি করা হয়।
কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিসে ইরশাদ করেছেন , কুরবানি হলো তোমাদের পিতা হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নাত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, অতঃপর যখন সে তার সাথে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছল, তখন সে বলল, ‘হে প্রিয় বৎস, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি, অতএব দেখ তোমার কী অভিমত’; সে বলল, ‘হে আমার পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তাই করুন।
আমাকে ইনশাআল্লাহ আপনি অবশ্যই ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন’।অতঃপর তারা উভয়ে যখন আত্মসমর্পণ করল এবং সে তাকে* কাত করে শুইয়ে দিল । ( সূরা আস- সাফফাতঃ- ১০২-৩)
কোরবানির গুরুত্ব-
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে।
নিশ্চয় আমি আপনাকে হাউজে কাউসার দান করেছি। অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ ও কুরবানি আদায় করুন।
আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেন- হে আমার হাবিব আপনি বলুন যে, অবশ্যই আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ, সব কিছুই মহান প্রতিপালকের জন্য। (সূরা আনআ’ম- ১৬২)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন- তারা কতক নির্দিষ্ট দিনে গৃহ পালিত চতুষ্পদ জন্তুর মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করে। (সুরা হজ্ব: আয়াত- ২৮)
আল্লাহর কাছে (কুরবানীর পশুর)) গোশত ও রক্ত পৌঁছে না বরং তোমাদের অন্তরের তাকওয়া পৌঁছে থাকে। (সূরা হজ্ব, আয়াত- ৩৭)
রাসুল সা. হাদিসে বলেন, হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, কুরবানির দিন পশু কুরবানির চাইতে আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় আর কোন আমল, নেই। কেয়ামতের দিন জবেহ করা পশুকে তার শিং ও খুরসহ হাজির করা হবে। কুরবানির জন্তুর রক্ত জমিনে পড়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা খোলা মনে এবং সন্তুষ্টি চিত্তে কুরবানি কর। (মেশকাত শরীফ)
কুরবানির ফজিলত
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে। হজরত জায়দ ইবনে আকরাম বলেন, সাহাবায়ে কেরাম নবী করিম (সা.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করেন, কুরবানি কী? নবী করিম (সা.) বলেন, ‘কুরবানি হলো তোমাদের পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) এর সুন্নত।’এতে আমাদের সওয়াব কী? নবী করিম (সা.) বলেন, ‘কুরবানির পশুর প্রত্যেকটি পশমের বদলায় একটি করে সওয়াব রয়েছে। ভেড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ভেড়ার প্রত্যেকটি পশমের বদলায়ও একটি করে সওয়াব রয়েছে।( মুসনাদে আহমাদ)
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর নিকট ওদের গোশত রক্ত পৌঁছায় না; বরং পৌঁছায় তাঁর কাছে তোমাদের তাকওয়া।’ (সুরা হজ্জ- ৩৭)
-এটি