মুযযাম্মিল হক উমায়ের
নাম- ইবরাহিম বিন আহমাদ। উপনাম- আবু ইসহাক। তিনি ‘রায়’ এলাকার ‘সির’ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্ম তারিখ জানা যায়নি। তিনি সুফী সাধকদের একজন ছিলেন। হজরত জুনায়েদ বাগদাদী রাহিমাহুল্লাহু তায়াল ও ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহু তায়ালার সমবয়সী ছিলেন। আল্লাহ তায়ালার উপর বেনজির তাওয়াক্কুল রাখতেন। অধিক পরিমানে সফর করতেন। তাঁর লেখিত কিতাবের সংখ্যাও অনেক। ‘রায়’ নামক স্থানে ২৯১ হিজরীতে তিনি ইন্তিকাল করেন।
বলা হয়, তাঁর পায়ে অসুস্থতা ছিলো। দাঁড়াতে পারতেন না। ওজু, গোসলের প্রয়োজন হলে পানির কাছে যেতেই পানি চলে আসতো। তিনি ওজু, গোসল করে মসজিদে নামাজের জন্য চলে যেতেন। একবার পানি তাঁর কাছে আসার পর সেখানেই তাঁর রুহ বের হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে জান্নাতে সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন। আমীন।
১. তিনি সর্বদায় সাথে সুঁই-সুতা, লোটা ও কেঁচি রাখতেন। আর বলতেন, এসব প্রয়োজনীয় জিনিস সাথে রাখা তাওয়াক্কুলের পরিপন্থি নয়। কারণ, এগুলি নিজের ইজ্জত ও আব্রæর হেফাজতের কাজে ব্যবহার করা যায়। এই কথাও বলতেন, ‘যদি কোনো বুজুর্গের সাথে প্রয়োজনীয় এইসব জিনিস না থাকে, তাহলে তাঁর নামাজ সঠিক হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ আছে’।
২. কলবের রোগের ওষুধ হলো ৫ টি। ১. চিন্তা-ভাবনার সাথে পবিত্র কুরআনুল কারীম তিলাওয়াত করা। ২. পেটকে খালি রাখা। অর্থাৎ, কম খাওয়ার অভ্যাস করা। ৩. রাতে নামাজ পড়া। ৪. শেষ রাতে আল্লাহ তায়ালার কাছে অধিক পরিমানে রোনাজারি করা। ৫. নেককার লোকদের কাছে বেশি বেশি যাওয়া-আসা করা। তাঁদের সংশ্রবে বেশি থেকে বেশি থাকা।
৩. যে ব্যক্তি দুনিয়ায় কান্নাকাটি করবে না, সে পরকালে হাসতে পারবে না। অর্থাৎ, দুনিয়ায় থাকতে যে রোনাজারি করে পরকালকে সাজাবে না, পরকাল তার জন্য সুন্দর হবে না।
৪. অধিক বর্ণনার নাম ইলম নয়। আলেম বলা হয়, যে ব্যক্তি ইলম শিক্ষা করে এবং ইলমকে যথাযথ স্থানে কাজে ব্যবহার করে। সুন্নতের যথাযথ অনুসরণ করে। হোক না তাঁর মধ্যে ইলমের স্বল্পতা। সূত্র: তবাকাতুল আওলিয়া: পৃ. ১৭
৫. আরেফবিল্লাহকে কোনো বস্তু কলুষিত করতে পারে না। বরঞ্চ, তাঁর দ্বারা সমস্ত জিনিসের ময়লা পরিস্কার হয়। সূত্র: আল-বাসায়ির ওয়ায যাখায়ির: খ. ৬, পৃ. ৫২
৬. অহংকার নিজেকে চেনার পথে বড় ধরনের প্রতিবন্ধক। তাড়াহুড়া সত্য পথে পরিচালিত হওয়ার পথে প্রতিবন্ধক। ন¤্রতা ও কোমলতা অনুশোচনা না করার পথে প্রতিবন্ধক। সূত্র: আল-ফাতওয়া লি আবি আব্দুর রহমান আস-সুলামি: পৃ. ৫৭
৭. তিনি বলেন, আমি মক্কার পথে হাঁটছিলাম। পথিমধ্যে একজনের সাথে দেখা হয়। আমি তাকে চিনতে পারিনি। আমি বললাম, তুমি কী মানুুষ না জীন? সে উত্তরে বললো, জীন। আমি বললাম, মক্কায় আসছো অথচ তোমার সাথে কোনো পাথেয় নেই? উত্তরে সে বললো, আমাদের মধ্যে এমন আরো অনেক আছে যারা বাহ্যিক পাথেয় ছাড়া শুধু আল্লাহ তায়ালার উপর তাওয়াক্কুল করেই জীবন-যাপন করে থাকে। আমি তাকে বললাম, তাওয়াক্কুল জিনিসটা কী? উত্তরে সে বললো, আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে সবকিছু গ্রহণ করা। সূত্র: তাফসিরে ছালাবি: খ. ৯, পৃ. ৩৬৬
৮. সবর হলো, আল্লাহ তায়ালার কিতাব পবিত্র কুরআনুল কারীম ও হাদিস শরীফের উপর অটল ও অনঢ় থাকা। এই দুটি বিষয়ে যার মজবুতি যতো বেশি সে ততো বেশি ধৈর্যশীল। সূত্র: আত-তারগীব ওয়াত তারহীব: খ. ১, পৃ. ১৫৭
৯. তিনি বলেন, আমি অধিক পরিমানে কবরস্থানে আসা-যাওয়া করতাম। একদিন সেখানে ঘুমিয়ে পড়ি। স্বপ্নে দেখি একলোক আমাকে শিকল নেওয়ার জন্য বলতেছে। এবং একলোকের ভিতর প্রবেশ করিয়ে দিয়ে তাকে নিচ থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসতে বলেন। আমি তাই করলাম। যখন আল্লাহ তায়ালার সামনে তাকে ধরে তুললাম, সে বলতে লাগলো, ইয়া রব! আমি কি নামাজ পড়তাম না? আমি কি পবিত্র কুরআনুল কারীম তিলাওয়াত করতাম না? আমি কি হজ করতাম না?
উত্তরে একজন বললো, হ্যাঁ। তুমি এইসব কিছু করেছিলে। কিন্তু এতোসব করেও যখন তুমি নির্জনে থাকতে, তখন গুনাহ করার ক্ষেত্রে আমাকে ভয় করতে না। আমার সামনে দাঁড়াতে হবে এই বিষয় তোমার মধ্যে কাজ করতো না। তাই আজকে তোমার সব আমল বাতিল হয়ে গেছে।
সূত্র: আয-যাহরুল ফায়িহ: পৃ. ২৩
১০. আল্লাহওয়ালাদের বৈশিষ্ট্য হলো, আল্লাহ তায়ালার দেওয়া ওয়াদার উপর আস্থা রাখা। মানুষের কাছে যা আছে সেসব থেকে হাতকে গুটিয়ে নেওয়া। সূত্র: আল-মুহাজারাত ওয়াল মুহাওয়ারাত: পৃ. ৩৫৭
-এটি