সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


আকিকা সংক্রান্ত জরুরি পাঁচটি মাসআলা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাফেজ মাওলানা আব্দুল মাজীদ মামুন রাহমানী

১.আকিকা কী? উত্তরঃ- সন্তান জন্মের পর আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায়ের লক্ষ্যে জন্মের সপ্তম দিনে পশু জবাই করাকে আকিকা বলে। হাদিস শরিফে এর প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামকে আকিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন যে ব্যক্তি সন্তানের আকিকা করার ইচ্ছা করে সে যেন তা পালন করে। ছেলের জন্য সমমানের দুটি ছাগল আর মেয়ের জন্য একটি। মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক হাদিস নং-৭৯৬১

অন্য এক হাদিসে আছে রাসুল সাঃ এরশাদ করেন, সন্তানের সাথে আকিকার বিধান রয়েছে। তোমরা তার পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহিত কর (অর্থাৎ পশু জবাই কর এবং সন্তানের শরীর থেকে কষ্টদায়ক বস্তু (চুল) দূর করে দাও। বুখারি শরিফ হাদিস নং-৫৪৭২

২.আকিকা আদায়ের সময় নির্দিষ্ট আছে কিনা?
উত্তরঃ- আকিকা আদায়ের সময়:- সন্তান জন্মের সপ্তম দিন আকিকা করা উত্তম। তিরমিযি শরিফে সপ্তম দিনে আকিকা করার ব্যাপারে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হাদীস নং-১৫২২

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দৌহিত্রদয় হাসান ও হুসাইন রা.এর আকিকা সপ্তম দিনে করেছেন। আবু দাউদ শরিফ, হাদিস নং-২৮৩৪

তাই সম্ভব হলে সপ্তম দিনে আকিকা করা উত্তম। সপ্তম দিনে সম্ভব না হলে ১৪ তম দিনে বা ২১ তম দিনে করা ভালো। কেননা হযরত আয়েশা রা. বলেন আকিকা সপ্তম দিনে হওয়া উচিত। তা সম্ভব না হলে ১৪ তম দিনে এবং তাও সম্ভব না হলে ২১ তম দিনে। (অবশ্য ২১ দিনের মধ্যে করা না হলে পরবর্তীতে ও তা আদায় করা যাবে) মুস্তাকরাকে হাকেম হাদিস নং-৭৬৬৯

৩.নিজের আকিকা কি নিজে আদায় করতে পারবে?

উত্তরঃ- সন্তানের আকিকা করার দায়িত্ব তার পিতার। যদি তার পিতা আকিকা না দিয়ে থাকে তাহলে নিজেও নিজের আকিকা আদায় করতে পারবে। কেননা হযরত আনাস রা. বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়ত প্রাপ্তির পর নিজের আকিকা নিজে করেছেন। ফাতহুল বারী, ৯/৩৭০; মাজমাউয যাওয়ায়েদ , হাদিস নং-৬২০৩

হযরত হাসান বসরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন তোমার যদি আকিকা না করা হয়ে থাকে তাহলে তুমি নিজের আকিকা করে নাও। যদিও তুমি ইতিমধ্যেই প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেছ। আলমুহাল্লা‌,৬/২৪০

৪. আকিকার হুকুম কি? কি দিয়ে আকিকা করতে হবে এবং এর বন্টন বিধি কি? আকিকার গোশত কে কে খেতে পারবে? আকিকা কি কুরবানির সাথে দেওয়া যাবে? যদি যায় তাহলে কিভাবে?

উত্তরঃ- আকিকা করা মুস্তাহাব। পুত্র সন্তানের জন্য দুটি ছাগল আর কন্যার জন্য একটি ছাগল।
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছেলের পক্ষ থেকে দুটি ছাগল আর মেয়ের পক্ষ থেকে একটি ছাগল দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিরমিযি শরিফ, হাদিস নং-১৫১৩

ছাগল ছাড়াও উট, গরু, মহিষ, ভেড়া এবং দুম্বা দিয়েও আকিকা দেওয়া জায়েজ আছে। আলমুজামুল আউসাত হাদিস নং-৩৭১; আবু দাউদ শরিফ, ২/৩৯২

আর কুরবানির পশুতে আকিকার নিয়তে শরিক হওয়া জায়েয। তবে এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন আকিকা ও কুরবানির কোন অংশ পশুর এক সপ্তমাংশের কম না হয়।

আকিকার গোশত সন্তানের মা-বাবা ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন এবং ধনি-গরিব সকলেই খেতে পারবে। আকিকার গোশতের বন্টন ও ব্যাবহার কুরবানির গোশতের মতই । অর্থাৎ কিছু গোস্ত নিজেদের জন্য রাখা, কিছু আত্মীয়-স্বজনকে দেওয়া এবং কিছু গোশত গরিবদেরকে সদকা করা।
মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস নং-৭৬৬৯ ইলাউস সুনান,১৭/১১৮ ফাতাওয়া হিন্দিয়া,৫/৩০৪

৫. আকিকা বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার সপ্তম দিনে করা উত্তম। এখন প্রশ্ন হলো দিবস কখন থেকে শুরু হবে?যেদিন সে ভূমিষ্ঠ হল সেদিনও কি হিসাবে ধরা হবে; না সেদিন বাদ দিয়ে?

উত্তরঃ- বাচ্চা যদি রাত্রে ভূমিষ্ঠ হয় তাহলে পরের দিন থেকে সাত দিন গণনা করবে। আর যদি দিনে (অর্থাৎ ফজরের পর) ভূমিষ্ঠ হয় সেক্ষেত্রে ফিকাহবিদদের দুটি মত রয়েছে। তবে বাহ্যিকভাবে হাদিস শরিফ থেকে বোঝা যায় যে ওই দিনটিকে হিসাবে ধরতে হবে। অতএব সেই দিনসহ সাত দিন গণনা করে আকিকা করবে। যেমন কোন শিশু বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে শুক্রবার মাগরিবের পূর্ব পর্যন্ত কোনো সময়ে জন্মগ্রহণ করলে তার আকিকা করতে হবে পরবর্তী বৃহস্পতিবার সূর্যাস্তের পূর্বে। উল্লেখ্য সপ্তম দিনে আকিকা করা মুস্তাহাব। এই দিনে সম্ভব না হলে ১৪ বা ২১ তম দিনে করবে। ইলাউস সুনান,১৭/১১৯;মুখতাছারুল খলীল,৪/৩৮৯

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ