আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাথে বৈঠক করছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল।
মঙ্গবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে হেফাজতের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন নেতারা।
দাবিগুলো হলো-
১. আগামী ঈদুল আজহার আগে হেফাজতের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় আটককৃত আলেম-ওলামা ও হেফাজত নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। এ সময় বন্দী আলেমদের অনেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হুইলচেয়ারে আদালতে আসার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও আলেম-ওলামাদের অনেকে গ্রেফতার থাকার কারণে তাদের পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের দুরাবস্থার বিষয়টিও মন্ত্রীকে জানানো হয়।
(দুই) গত কিছুদিন পূর্বে কথিত গণকমিশন নামে একটি ভুঁইফোড় সংগঠন দেশের ১১৬ আলেম ও ১০০০ হাজার মাদরাসার নামের লিস্ট তৈরি করেছে। তারা এটির নাম দিয়েছে ''শ্বেতপত্র''। ইতোমধ্যে তারা এই শ্বেতপত্র দুর্নীতি দমন কমিশনেও জমা দিয়েছে। আমরা স্পষ্ট বলতে চাই এটি দেশের আলেম-ওলামা ও মসজিদ মাদরাসার বিরুদ্ধে ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের অংশ। তারা কথিত শ্বেতপত্রে দেশের প্রায় সকল মাদরাসাকে জঙ্গিবাদের সাথে যুক্ত করেছে। আমরা দাবি জানাচ্ছি, অনতিবিলম্বে কথিত এই শ্বেতপত্র বাজেয়াপ্ত করতে হবে। এবং গণকমিশন নামের কথতি এই সংগঠনের লোকদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তারা শান্ত পরিস্থিতিকে অশান্ত করার চক্রান্ত্র করছে।
২. শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ:-এর সময় থেকে বারবার বলা হয়েছে হেফাজত নেতাকর্মীদের নামে দায়েরকৃত ২০১৩ ও ২০১৬ সালের মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে তার একটিও প্রত্যাহার করা হয়নি। বরং গত বছর যে সকল আলেম-ওলামাদের গ্রেফতার করা হয়, তাদের প্রায় সকলকেই ২০১৩ ও ২০১৬ সালের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০২১ সালে নতুন আরো অনেক মামলা দেয়া হয়েছে। পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সকল মামলা দ্রুত প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান নেতারা।
৪. সম্প্রতি ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির দুই নেতা মানবতার মুক্তির দূত হজরত মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা রা: সম্পর্কে চরম অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছে। এই ঘটনায় পুরো মুসলিম বিশ্ব প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে। বাংলাদেশের নবীপ্রেমীরাও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আমরা আপনার মাধ্যমে সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি, যেন এই ঘটনায় ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানানো হয়।
৫. আমরা জানতে পেরেছি শিক্ষা আইন-২০২২ -এর খসড়া চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে সরকার। এই শিক্ষা আইনে যেহেতু কওমি মাদরাসাসহ সকল ধরনের শিক্ষার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, তাই আমাদের দাবি হচ্ছে, খসড়া কমিটিতে কওমি মাদরাসার ওলামায়ে কেরামের প্রতিনিধিত্ব যেন থাকে।
এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আপনাদের কয়েকজন নেতা কারাগারে অসুস্থ হওয়ার বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে আলাপ করে আমি বিষয়টিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেবো।
গণকমিশনের শ্বেতপত্র বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এর কোনো কার্যকারিতা নেই এবং এটা আর অগ্রসর না হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
সম্প্রতি ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির দুই নেতা কর্তৃক মানবতার মহানবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা:-কে কটূক্তির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আপনারা প্রতিবাদ জানিয়েছেন, আমরাও এই ঘটনায় ব্যথিত হয়েছি। ওই সময়টায় আমি অসুস্থ ছিলাম। আপনাদের দাবি আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাবো।
শিক্ষা আইন-২০২২-এর খসড়া কমিটিতে আলেমদের অন্তর্ভুক্তির জন্য আল হাইয়াতুল উলইয়ার মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার পরামর্শ দেন। এ সময় আইন-শৃংখলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ মন্ত্রণালয়ের অনেক দায়িত্বশীল উপস্থিত ছিলেন।
হেফাজতের সিনিয়র নায়েবে আমির ও হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা মোহাম্মদ ইয়াহইয়া ও হেফাজত মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে আরো ছিলেন, নায়েবে আমির মাওলানা ফুরকানউল্লাহ্ খলিল, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদরীস, ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সোবহানী ও ঢাকা মহানগর সেক্রেটারি মুফতী কিফায়াতুল্লাহ আযহারী।
এনটি