আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, একজন উদ্যোক্তা শুধু নিজের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেন না, অন্যদের জন্যও করেন। তিনি যুবসমাজকে চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেদের মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
সোমবার (২৭ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর পর্যটন ভবনে ‘আন্তর্জাতিক এমএসএমই দিবস-২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, এখনকার শিক্ষিত যুবক-যুবতীরা পড়াশোনা শেষ করেই চাকরির পেছনে ছোটে। অথচ সবার জন্য চাকরির ব্যবস্থা করা একেবারেই অসম্ভব। এর একমাত্র বিকল্প হচ্ছে শিক্ষিত বেকার যুবকদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা।
তিনি আরও বলেন, উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা দরকার, হয়তো সেসব ব্যবস্থা এখনো পুরোপুরি তৈরি হয়নি, বিশেষ করে ঋণপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে। তবে এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আইসিটি ডিভিশন পদক্ষেপ নিয়েছে। আশাকরি এসব পদক্ষেপ ও কর্মসূচির কারণে ভবিষ্যতে উদ্যোক্তা সৃজন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে অগ্রগতিসাধিত হবে। এক্ষেত্রে নতুন উদ্যোক্তা, নারীউদ্যোক্তা, স্টার্টআপরা যাতে সহজে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও ঋণ পান তা নিশ্চিত করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্প অর্থাৎ এমএসএমইর গুরুত্ব অপরিসীম। এমএসএমই খাতের উন্নয়ন ও বিকাশের মাধ্যমে শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্যবিমোচন ও সুষম উন্নয়ন সম্ভব। বর্তমান সরকারের শিল্পবান্ধব নীতি ও পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশে ইতোমধ্যে বেসরকারি খাতে শিল্পায়নে অভূতপূর্ব উন্নয়নসাধিত হয়েছে। বিগত ১৩-১৪ বছরে দেশে বৃহৎ ও ভারী শিল্পের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এতে দেশব্যাপী কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি সার্বিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে।
২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে দেশের জিডিপিতে শিল্পখাতের অবদান ১৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে এটি বেড়ে ৩৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ হয়েছে। করোনা মহামারির মধ্যেও ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ, বর্তমান অর্থবছরে যা ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। এ বছর আমাদের মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৮১৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। অর্থনীতির অন্যান্য সূচকেও দৃশ্যমান উন্নতি ও অগ্রগতিসাধিত হয়েছে। শিল্পখাতে নতুন বিনিয়োগ এসেছে এবং আসছে।
তিনি আরও বলেন, দুদিন আগে জাতির আত্মমর্যাদা ও গর্বের প্রতীক পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ পদক্ষেপ এবং যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলেই সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। এর ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বৃহৎশিল্পের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিতেও পদ্মা সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এসএমই ফাউন্ডেশন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং বিদ্যমান উদ্যোক্তাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, নারীউদ্যোক্তাদের উন্নয়নকে বিশেষ অগ্রাধিকারভুক্ত কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করা
হয়েছে।
তিনি বলেন, উদ্যোক্তাদের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো পুঁজির অভাব এবং ব্যাংক থেকে সহজে ঋণ না পাওয়া। নতুন উদ্যোক্তারা ব্যাংকের শর্ত পূরণ করতে পারেন না বিধায়, ব্যাংক তাদের ঋণ দিতে পারে না। ফলে একটা বিশাল অংশ ঋণের আওতাবহির্ভূত থেকে যায়, যাদের অধিকাংশ আঞ্চলিক উদ্যোক্তা। আমি জানতে পেরেছি এসএমই ফাউন্ডেশন এ ধরনের উদ্যোক্তাদের ঋণের আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। তাদের ‘ক্রেডিট হোলসেলিং’ কর্মসূচির মাধ্যমে ঋণপ্রাপ্তির উপযোগী ও প্রস্তুত করে সহজশর্তে স্বল্পসুদে জামানতবিহীন ঋণের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।
এসএমই ফাউন্ডেশন প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় খুব অল্পসময়ের মধ্যে সারাদেশের নারীউদ্যোক্তাসহ মাইক্রো ও ক্ষুদ্রউদ্যোক্তাদের মধ্যে তিন কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। এ ঋণের প্রায় ২৬ শতাংশ পেয়েছেন নারী উদ্যোক্তরা। আমি এসএমই ফাউন্ডেশনের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।
তিনি বলেন, আজকের ক্ষুদ্রউদ্যোক্তা আগামী দিনের বড় ব্যবসায়ী। দেশের অনেক শিল্পগোষ্ঠীর যাত্রা এরকম স্বল্পপুঁজি নিয়ে স্বল্প পরিসরে শুরু হয়েছিল। মেধা, একনিষ্ঠতা, অধ্যবসায় ও সততাকে পুঁজি করে তারা ক্রেতাদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন এবং তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে দৃঢ়ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। কেউ কেউ আছেন তারা ব্যবসা শুরু করেই রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। রোদ-বৃষ্টি, ঝড়-তুফান নানা অজুহাতে তারা পণ্যের মূল্য অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে দেয়। তারা ব্যবসার মুনাফাকে মানবিকতার চাইতেও বেশি গুরুত্ব দেয়। মানুষের অসহায়ত্বই হচ্ছে তাদের ব্যবসার মূল পুঁজি। একজন ব্যবসায়ী তার ব্যবসায় মুনাফার প্রত্যাশা করবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে মুনাফা যৌক্তিক পর্যায়ে রাখাটাই বাঞ্ছনীয়।
তিনি বলেন, আজ আপনি হয়তো বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে অধিক মুনাফায় পণ্য বিক্রি করলেন, তবে একটা সময় আসবে যখন ক্রেতারা আপনার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। তাই আপনাদের প্রতি আমার পরামর্শ, রাতারাতি বড়লোক হওয়ার মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। নিজের ব্যবসাকে স্থায়িত্ব দিতে হলে সততার সঙ্গে এবং ক্রেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। আর যারা সিন্ডিকেট করে, যারা জনভোগান্তি বাড়ায় তাদের আইনের আওতায় আনতে সরকারকে কঠোর হতে হবে।
-এএ