মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল্লাহর আদেশ-নিষেধ থেকে বিরত না থাকা মূলত গুনাহ। কিয়ামতের দিন মানুষের প্রতিটি পাপ -পূণ্যের হিসাব হবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ “অতপর কেউ অনু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে। এবং কেউ অনু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে” (সূরা যিলযাল, আয়াত ৭-৮)
শাস্তি দু প্রকার ।১.দুনিয়ার শাস্তি ২.আখেরাতের শাস্তি। আখেরাতের শাস্তি আল্লাহ নির্ধারণ করবেন। তবে দুনিয়াতে পাপী বান্দা মৌলিক দশটি শাস্তি বা ক্ষতির মুখোমুখি হবে।
এক. ইলম থেকে বঞ্চিত । ইলম আল্লাহ প্রদত্ত নূর ।আর গুনাহ,অন্ধকার। হাফেজ ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, গুনাহের কিছু মন্দ প্রভাব আছে। তন্মধ্যে একটি হলো ইলম থেকে বঞ্চিত হওয়া। কেননা ইলম হলো আলো বিশেষ যা অন্তরে সঞ্চারিত হয় এবং গুনাহ সেই আলোকে নিভিয়ে দেয়। (ফয়জুল কাদীর ১/১১৯)
দুই. রিজিক তথা জীবনোপকরণ থেকে বঞ্চিত। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ যে আমার বিধান থেকে বিমুখ হবে, নিশ্চয় তার জন্য রয়েছে জীবনযাপনের সংকীর্ণতা। (সূরা ত্বহা-১২৪) হযরত ছাওবান রা. থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ নিশ্চয় মানুষ স্বীয় গুনাহের কারণে রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়। (ইবনে মাজাহ-৪০২২)
তিন. নিঃসংজ্ঞতা । আল্লাহর সঙ্গে যখন কোনো ব্যক্তির সম্পর্কের দূরত্ব তৈরি হয় তখন সে একাকীত্বে ভোগে, শূন্যতা অনুভব করে। হযরত ফুযাইল ইবনে ইয়ায রহিমাহুল্লাহ বলেছেনঃ আমি আল্লাহর অবাধ্য হলে তার প্রতিক্রিয়া আমার গাধা ও খাদেমের আচরণের মধ্যে দেখতে পাই। (হিলইয়াতুল আউলিয়া, আবু নাঈম ৮/১০৯)
চার. যাবতীয় কার্যাবলী কঠিন হয়ে যাওয়া। গুনাহগার ব্যক্তি যখনই কোনো কাজের সম্মুখীন হয় সেই কাজ তার উপর কঠিন হয়ে যায়। কুরআনের বাণি “যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার যাবতীয় কার্যাবলী সহজ করে দেন (সূরা তালাক- ৪) এর বিপরীত যে আল্লাহকে ভয় করে না।গুনাহের মাধ্যমে অবাধ্য হয়, আল্লাহ তার কাজ কঠিন করে দেন।
পাঁচ. অন্তরে অন্ধকার অনুভূত হওয়া। মানুষ রাতে যেমন অন্ধকার অনুভব করে, গুনাহগার ব্যক্তিও নিজ অন্তরে অনুরূপ অন্ধকার অনুভব করে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেনঃ নিশ্চয় নেক আমলের দরুণ চেহারায় উজ্জ্বলতা সৃষ্টি হয়, অন্তরে নূর সঞ্চারিত হয়, রিজিকে প্রশস্ততা আসে, শরীরে শক্তি বৃদ্ধি হয় এবং আমলকারীর জন্য সৃষ্টিজীবের অন্তরে ভালোবাসা জন্মায়। অপরদিকে গুনাহের কারণে চেহারা কালো হয়ে যায়, অন্তরে অন্ধকার তৈরি হয়, শরীরে ক্লান্তি আসে, রিজিক সংকীর্ণ হয়ে যায় এবং গুনাহগারের জন্য সৃষ্টিজীবের মনে বিদ্বেষ জন্ম নেয়। (আল জাওয়াবুল কাফী, ইবনুল কায়্যিম)
ছয়. নেক আমলের প্রতি অনিহা জন্মায়। মানুষ যখন অনবরত পাপে লিপ্ত থাকে তখন নেক আমলের স্বাদ আস্বাদন করতে পারেনা। আমলে তৃপ্তি হারিয়ে ফেলে। ফলে তৃপ্তিহীন হয়ে এক পর্যায়ে আমল ছেড়ে দেয় ।অসুস্থ ব্যক্তি যেমন খাবারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে তদ্রুপ গুনাহের কারণে মানুষের অন্তরও অসুস্থ হয়ে যায়, সেও ইবাদতের প্রতি হয়ে যায় অনাগ্রহী।
সাত. একটি গুনাহের কারণে আরেকটি গুনাহ সংঘটিত হওয়া। একটি গুনাহ অন্য আরো একটি গুনাহর জন্ম দেয়।উদাহরণত বলা যায় ধর্ষণ।ধর্ষক ধর্ষণের গুনাহ করে। তারপর আইনের হাত থেকে বাঁচার তাগিদে প্রমাণ বিলুপ্তির নিমিত্তে কখনো ধর্ষিতাকে হত্যা করে । এজন্য মনীষীগণ বলে থাকেন একটি গুনাহ আরেকটি গুনাহকে টেনে আনে।
আট. নেক আমল থেকে বঞ্চিত হওয়া। গুনাহগার ব্যক্তি নেক আলম থেকে বঞ্ছিত থাকে।
নয়. তাওবার সুযোগ না হওয়া। অনবরত গুনাহে নিমজ্জিত ব্যক্তির অন্তর শক্ত হয়ে যায়। ফলে তাওবার প্রয়োজনীয়তা তার অনুভব হয়না।
দশ. অন্তরে মরিচা পড়ে যাওয়া। আল্লাহ তায়ালা গুনাহগারের অন্তরে মোহর মেরে দেন ফলে তার কাছে গুনাহকে আর গুনাহ মনে হয়না। সে গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, যখন বান্দা কোনো পাপ করে, তখন তার অন্তরে একটি কালো বিন্দু পড়ে যায়। যদি সে পাপ থেকে তাওবা করে, তাহলে সেই কালো বিন্দু পরিস্কার হয়ে যায়। আর তাওবার পরিবর্তে যদি অনবরত পাপ করেই যায়, তাহলে সেই কালো বিন্দুটি আরো বৃহৎ আকার ধারণ করে। এমনকি তার গোটা অন্তরে ছেয়ে যায়। এটাই হলো সেই “রাইন” যার কথা কুরআনে এসেছে। (মুসনাদে আহমাদ ২/২৯৪)
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে পাপ বর্জন করে ক্ষতি থেকে বাঁচার তাওফীক দান করুন। আমিন।
শিক্ষক: নিজামিয়া মাদ্রাসা, কুতুবপুর, দামুড়হুদা, চুয়াডাঙ্গা।
-এটি