আবদুল্লাহ তামিম।। পেরিয়েছে কাল মহাকাল। মানুষ ছুটছে অর্থবৈভব আর খ্যাতির পেছনে। তবে নশ্বর এ দুনিয়ায় ব্যতিক্রমও রয়েছেন অনেকে। জাগতিক মোহ ত্যাগ করে কিছু মানুষ বেছে নেন আর্তমানবতার সেবা। পরম সুখ খুঁজে পান সৃষ্টির সেবায়। নববী আদর্শ বিলিয়ে দেন পীড়িত আর বঞ্চিতদের মাঝে।
এভাবে বিষাদগ্রস্তদের মুখে হাসি ফুটিয়ে যারা হৃদয়ে যোগায় প্রভূপ্রেম তাদেরই একজন মুহাম্মদ রাজ। ‘জান্নাতের খোঁজে’ প্রজেক্টের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই তিনি হাজারো অসহায়ের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন।
বেওয়ারিশ লাশের কথা আমরা প্রায় সময়ই শুনে থাকি। বেওয়ারিশ রোগির কথা শুনেছি ক’জন? হাসপাতাল, ক্লিনিক, পথঘাট কিংবা বিভিন্ন জায়গায় দেখা মেলে বেওয়ারিশ রোগিদের। অর্থাৎ যাদের নেই কোনো আত্মীয়স্বজন, সন্তানসন্তুতি অথবা থেকেও নেই। এসব রোগী খুঁজে খুঁজে বের করেন মুহাম্মদ রাজ। তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন প্রাণ খুলে।
মুহাম্মদ রাজ বলেন, একসময় ছিলাম ভিন্নধর্মালম্বী। আল্লাহর অপার দয়ায় সুযোগ হয়েছে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নেবার। মানুষের জন্য কিছু করার। তাই ইচ্ছে করেছি ক্ষুদ্র এ জীবন জান্নাতের খোঁজে মানবসেবায় কাটিয়ে দিবো। বেওয়ারিশ রোগী নিয়ে কাজ করাই আমার নেশা।
২০২০ সালে শুরু হয় ‘জান্নাতের খোঁজে’র পথযাত্রা। সমাজের সত্যিকারের অসহায়, ভিক্ষুক ও ভাসমান পীড়িত মানুষ খুঁজে তাদের নিয়মিত ওষুধ কিনে দেয়া শুরু করেন মুহাম্মদ রাজ। বলা যায়, তার সংগঠন হাফেজ্জী চ্যারিটেবল সোসাইটি অব বাংলাদেশ’র ব্যতিক্রমী এক সফল উদ্যোগ এটি। এ প্রজেক্টের আওতায় গত এক বছরে অসহায় মানুষের চিকিৎসা বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় দশ লাখ টাকা। যার পুরোটাই রাজের একক প্রচেষ্টা ও কর্মতৎপরতায় গড়ে তোলা ফান্ড থেকে।
ঢাকার বাড্ডার ক্যান্সারের রোগি আব্দুল্লাহ’র চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার, মাদরাসা পড়ুয়া ছোট্ট তালহা’র হার্ট অপারেশন, সিলেটের জৈন্তাপুরের ক্যান্সারাক্রান্ত ৮ মাস বয়সী শিশুর ১৪ টি কেমো সম্পন্ন করণ ও পরবর্তী চিকিৎসা, মাদরাসা পড়ুয়া ফারিহার ফুসফুসের অপারেশন, একজন অসহায় দারোয়ানের স্ত্রীর চিকিৎসার পূর্ণাঙ্গ সহায়তা, এক আলেমা বোনের চিকিৎসা সহায়তা, টিবিসহ নানা জটিল রোগাক্রান্ত এক ছাত্রীর চিকিৎসা সহায়তা, চাকরীহারা এক ভাইয়ের স্ত্রীর গাইনি অপারেশন, এক অসহায় আলেমের হার্ট ফুটো হয়ে যাওয়া দুধের শিশুর সম্পূর্ণ চিকিৎসা খরচ প্রদানসহ ব্যয়বহুল কিছু কাজ করে ‘জান্নাতের খোঁজে’। এছাড়াও প্রতিবন্ধীদের মাঝে হুইল চেয়ার বিতরণসহ বেশকিছু জরুরি কাজও আঞ্জাম দিচ্ছে এ প্রজেক্ট।
সম্প্রতি কুষ্টিয়ার মালাসি’র টিউমার অপারেশনের দায়িত্ব নিয়েছেন মুহাম্মদ রাজ। একজন দিনমজুরের ৪ মাস বয়সী সন্তান মালাসি। মাথাসহ সারা শরীরে পানি জমে আছে। কোমরে বৃহৎ আকারের টিউমার। মুহাম্মদ রাজ শিশুটির অপারেশনসহ যাবতীয় চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। দুঃখী মা-বাবার মুখে আলো ফুটিয়েছেন। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি প্রশংসায় ভাসছেন।
‘জান্নাতের খোঁজে’ নওমুসলিম মুহাম্মদ রাজের সহযোগী হিসেবে আছেন, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম, সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের মিডিয়া উইং মুহাম্মদ আল-আমিন এবং সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডনের মহাসচিব আবেদ আলী।
মূলত আশপাশের পরিচিত মানুষজন, দ্বীনি ভাই-বোন ও সোস্যাল মিডিয়ায় জানান দেবার মাধ্যমে আসা সহযোগিতায়ই এ সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন মুহাম্মদ রাজ।
মহান প্রভূর সন্তুষ্টি অর্জনে, অনন্ত জীবনের শান্তির আধার জান্নাতের খোঁজে কাজ করে যাচ্ছেন এই নওমুসলিম। নিজ প্রচেষ্টায় সংগ্রহ করছেন ফান্ড। বিলিয়ে দিচ্ছেন অসহায়দের মাঝে। তবে সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ, উদার ও মহৎপ্রাণ আরোকিছু মানুষ যদি মহান এ কাজে তার সঙ্গী হতো। তাহলে হয়তো অবহেলিত ভাসমান ও পীড়িত জনগোষ্ঠীর সেবায় আরো বেশি সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে পারতেন তিনি।
ভালো থাকুক পীড়িতদের ভালো রাখা মানুষজন। জয় হোক মানবতার।
-এটি