হাফেজ মাওলানা আব্দুল মাজীদ মামুন রাহমানী: আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এখলাসের সাথে পশু জবাই করার দ্বারা কুরবানীর ওয়াজিব আদায় হয়ে যায়। আর কোরবানী কারীর জন্য তার কুরবানীর গোশতের ক্ষেত্রে শরীয়তের নির্দেশনা হলো সে নিজ Family members বা পরিবার-পরিজনকে নিয়ে খাবে এবং Neighborhood বা পাড়া-প্রতিবেশী ও Relatives বা আত্মীয় স্বজন যারা কোরবানির সামর্থ্য রাখে না তাদের দান করবে। তবে দানের ব্যাপারে কোরবানীকারীর
উপর শরীয়ত কোনো বাধ্যবাধকতা আরোপ করেনি বরং প্রত্যেককে তার অবস্থা অনুপাতে দান করতে বলা হয়েছে। কুরবানীর গোশতের পুরোটার মালিক কুরবানীদাতা। সে ইচ্ছা করলে তা খেতে পারে, দান করতে পারে এবং ভবিষ্যতের জন্য ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারে।
অবশ্য তার জন্য মুস্তাহাব হলো কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করে এক ভাগ পরিবার-পরিজনকে দিবে আরেক ভাগ গরিব প্রতিবেশীদের দিবে এবং একভাগ ভিক্ষুক ও অসহায়দের দান করবে। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এমনটি করতেন। আল-মুগনী,১৩/৩৭৯
আরেকটি বিষয় হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ এক পরিস্থিতির কারণে একবার কুরবানীর গোশত সংরক্ষণ করা থেকে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী বছর থেকে এর অনুমতি প্রদান করেন। যা অসংখ্য বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
১. নবী কারীম (সাঃ) বলেনঃ- তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কুরবানী করে, সে যেন তৃতীয় দিনের পর এমন অবস্থায় ভোরে উপনীত না হয় যে, তার ঘরে কুরবানীর গোশতের কিছু অংশ অবশিষ্ট আছে। পরবর্তী বছর আসলে লোকেরা বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা গত বছর যেরূপ করেছিলাম, এ বছরও কি তদ্রুপ করবো? তিনি উত্তরে বললেনঃ- كُلُوا ، وَادَّخِرُوا فَإِنَّ ذَلِكَ الْعَامَ كَانُوا فِي جَهْدٍ فَأَرَدْتُ أَنْ تُعِينُوا» অর্থাৎ তুমরা নিজেরা(কুরবানীর গোশত) খাও, অন্যকে খেতে দাও এবং জমা করে রাখো। (যেহেতু) ঐ বছর মানুষ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছিল, তাই আমি চেয়েছিলাম যে, এই অবস্থায় তোমরা তাদের সাহায্য করো। (বুখারী শরীফ, হাদিস নং-৫৫৬৯ মুসলিম শরীফ হাদীস নং-৪৯৯৮)
২.অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে- «إِنِّي كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ أَنْ تَأْكُلُوا لُحُومَ الْأَضَاحِيِّ إِلَّا ثَلَاثًا، فَكُلُوا وَأَطْعِمُوا وَادَّخِرُوا مَا بَدَا لَكُمْ، অর্থাৎ আমি তোমাদের কুরবানীর গোশত তিন দিনের অধিক সময় খেতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা যতদিন ইচ্ছা নিজেরা খাও অপরকে খাওয়াও এবং জমা করে রাখ। সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং- ২০৩৩
৩. আরেক হাদীসে ইরশাদ হচ্ছে-
عَمْرَةَ بِنْتِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ قَالَتْ سَمِعْتُ عَائِشَةَ، تَقُولُ دَفَّ نَاسٌ مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ حَضْرَةَ الأَضْحَى فِي زَمَانِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " ادَّخِرُوا الثُّلُثَ وَتَصَدَّقُوا بِمَا بَقِيَ " . قَالَتْ فَلَمَّا كَانَ بَعْدَ ذَلِكَ قِيلَ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَا رَسُولَ اللَّهِ لَقَدْ كَانَ النَّاسُ يَنْتَفِعُونَ مِنْ ضَحَايَاهُمْ وَيَجْمُلُونَ مِنْهَا الْوَدْكَ وَيَتَّخِذُونَ مِنْهَا الأَسْقِيَةَ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " وَمَا ذَاكَ " . أَوْ كَمَا قَالَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ نَهَيْتَ عَنْ إِمْسَاكِ لُحُومِ الضَّحَايَا بَعْدَ ثَلاَثٍ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّمَا نَهَيْتُكُمْ مِنْ أَجْلِ الدَّافَّةِ الَّتِي دَفَّتْ عَلَيْكُمْ فَكُلُوا وَتَصَدَّقُوا وَادَّخِرُوا " .
‘আমরাহ বিনতু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ: তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি : রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়ে Forest dweller বা জঙ্গলে বসবাসকারী কিছু লোক এসে ঈদুল আযহার জামা’আতে উপস্থিত হয়।
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন তোমরা তিন দিনের খাওয়ার পরিমাণ গোশ্ত রেখে বাকী গোশ্ত সদাক্বাহ করে দাও। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, কিছুদিন পর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! ইতিপূর্বে লোকেরা তো তাদের কুরবানী (গোশ্ত) দ্বারা (অনেকদিন) সুবিধা ভোগ করতো।
তারা চর্বি জমা করে রাখতো এবং চামড়া দিয়ে পানির মশক বানাতো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এরূপ বলার অর্থ কি? তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কুরবানীর গোশ্ত তিন দিনের অধিক জমা রাখতে নিষেধ করেছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে সময় তোমাদের নিকট কিছু গরীব লোক এসেছিল বিধায় আমি তোমাদেরকে এরূপ নিষেধ করেছিলাম। কাজেই এখন তোমরা তা খাও, সদাক্বাহ করো এবং জমা করে রাখো। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং- ২৮১২।
মোটকথা কুরবানী দাতা নিজের জন্য যে পরিমাণ ইচ্ছা, যতদিন ইচ্ছা কুরবানির গোশত ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রেখে ভক্ষণ করতে পারবে। তবে এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে ঈদের দিন হলো আল্লাহ তাআলার মেহমানদারীর দিন। এদিনে বিত্তবানদের কর্তব্য হল সমাজের দরিদ্র লোক ও ঐ সকল আত্মীয়স্বজনদের নিকট কুরবানির গোশত পৌঁছে দেওয়া যারা কুরবানী করতে সক্ষম হয়নি।
-এটি