সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


হজরত ইবরাহিম ইবনে আদহাম রা. এর উপদেশ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুযযাম্মিল হক উমায়ের

তার উপানাম ছিলো আবু ইসহাক আল-বলখী। ১৬১ হিজরীতে মক্কায় জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর মা তাঁকে নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ঘুরে দোয়া চাইতেন। ছেলে যেনো সৎ হতে পারে।

লোকজনের দোয়া আল্লাহ তায়ালা তাঁর শানে যথাযথ কবুল করেছেন। সেই দোয়াও প্রতিফলনও তাঁর মধ্যে প্রকাশিত হয়েছিলো। তিনি আমীরের পদ পেয়েও ছেড়ে দিয়েছেন। এইসব পদ-পদবী থেকে তিনি সর্বদায় নিজেকে দূরে রেখেছেন।

তিনি জীবিকা উপার্জনের জন্য অনেক দেশ সফর করতেন। নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন। তিনি বাগান ও ফসলী জমিতে কাজ করতেন। এখান থেকে আশা উপার্জন তিনি সাথে থাকা খাদেমদের পিছনে খরচ করতেন। দিনের বেলায় কাজ করতেন আর রাতের বেলায়।

এক যুদ্ধে ১৯১ হিজরীতে তিনি শহীদী মৃত্যু বরণ করেন।

শিক্ষণীয় বাণীসমূহ

১. অভাব-অনটন হলো আসমানের ধনভান্ডার। যা আল্লাহ তায়ালার কাছে ওইলোকের জন্য সাক্ষীর কাজ দেবে। আল্লাহ তায়ালা যাকে পছন্দ করেন, তাঁকেই একমাত্র এই গুণে গুণান্বিত করেন।

২. অন্তরের তিনটি আবরণ আছে।
১. আনন্দ।
২. চিন্তা।
৩. খুশি।
যদি তুমি নগদ পাওয়া কোনো জিনিস পেয়ে আনন্দিত হও। তাহলে তুমি একজন লোভী মানুষ। আর الحريص محروم (লোভী মানুষ বঞ্চিত হয়) সুতরাং এই কাজ দ্বারা তুমিও বঞ্চিত হয়ে যাবে।

যদি তুমি হারানো কোনো বস্তুর জন্য ভারাক্রান্ত হও। চিন্তিত হও। তাহলে তুমি অসন্তুষ্ট ব্যক্তি। আর الساخط معذب (অসন্তুষ্ট ব্যক্তি শাস্তির উপযুক্ত) সুতরাং এই কাজ দ্বারা তুমিও শস্তির উপযুক্ত হয়ে যাবে।

আর যদি তুমি প্রশংসা শুনে খুশি হও। তাহলে তুমি অহংকারী মানুষ। আর العجب يحبط العمل (অহংকার আমলকে বিনষ্ট করে দেয়) সুতরাং এই কাজ দ্বারা তোমার আমলও নষ্ট হয়ে যাবে।

এই কথাগুলির প্রমাণ পবিত্র কুরআনুল কারীমের আয়াত দ্বারাও প্রমাণিত। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
‌لِّكَيۡلَا تَأۡسَوۡاْ عَلَىٰ مَا فَاتَكُمۡ وَلَا تَفۡرَحُواْ بِمَآ ءَاتَىٰكُمۡۗ وَٱللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخۡتَالٖ فَخُورٍ

অর্থ- এটা এইজন্যে বলা হয়, যাতেকরে তোমরা যা হারাও সেজন্যে দুঃখিত না হও এবং তোমাদেরকে যা দিয়েছেন এইজন্যে উল্লসিত না হও। আল্লাহ তায়ালা কোনো উদ্ধত অহংকারীকে পছন্দ করেন না।

৩. কম লোভ, কম আশা, সততা ও পরহেজগারী সৃষ্টি করে। আর অধিক লোভ, অধিক আশা, পেরেশানী এবং অস্থিরতা বৃদ্ধি করে।

৪. একদিন আমি শান্তি পেয়ে যাই। আল্লাহ তায়ালা আমার সাথে এই সুন্দর আচরণ করার কারণে অগত্যায় আমার অন্তর অনেক আনন্দিত হয়ে যায়। আমি মনে মনে বলতে শুরু করলাম, হে আল্লাহ! যদি আমার পূর্বে আপনার প্রিয় কাউকে অন্তর প্রশান্ত হয় এমন কোনো নিয়ামত দিয়ে থাকো। তাহলে সেই নিয়ামত আমাকেও দান করো। কারণ, এর কারণে আমার অন্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

এই দোয়া করার পর একদিন স্বপ্নে আল্লাহ তায়ালাকে দেখি। তিনি আমাকে তাঁর সামনে দাঁড় করালেন। তারপর বললেন, হে ইবরাহিম! আমাকে লজ্জা করো না? আমি তোমাকে আমার সাথে সাক্ষাতের পূর্বে এমন নিয়ামত দান করবো, যে নিয়ামত পেয়ে তোমার অন্তর প্রশান্ত হবে? আগ্রহী অন্তর কি কখনো প্রিয় বস্তুর সাক্ষাৎ ছাড়া প্রশান্ত হতে পারে? প্রকৃত আশেক ব্যক্তি কি তাঁর প্রিয় জিনিস পাওয়া ছাড়া শান্তি পেতে পারে? সূত্র: তবাকাতুল আওলিয়া: পৃ. 8

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ