আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, বর্তমান সরকারকে মুসলমানদের সরকার বলা যায় না; এটা মোদির আজ্ঞাবহ সরকার।
তিনি বলেন, অবিলম্বে মহানবী (সা.) কে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাশ করতে হবে। তিনি বলেন, ভারতে নবীপ্রেমিকদের বাড়ী ঘর বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এটা মানবতা বিরোধী অসভ্য সরকারের কাজ। ভারতে এখন মুসলমানদের উপর রাষ্্রটীয় সন্ত্রাস চলছে। তারা মুসলমানদের বাড়ী-ঘর নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে। বাংলাদেশে আমরা সকল ধর্মাবলম্বিদের নিয়ে সহাবস্থানে বসবাস করছি। মুসলমানরা অসভ্য জাতি নয়। তিনি ভারতের অন্যায়ের কারণে যেন বাংলাদেশে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটানো হয়, এ জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে ভারতে বিজেপি মুখপাত্র কর্তৃক রাসূল (সা.) এবং উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) সম্পর্কে অবমাননাকর বক্তব্যের প্রতিবাদে জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাশ, ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব ও নূপুর শর্মা ও নবীন কুমার জিন্দালকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে ভারতীয় হাইকমিশন অভিমুখে গণমিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান পূর্ব বিশাল জমায়েতে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বেলা ১২.১৫ মিনিটে দূতাবাসের উদ্দেশ্যে গণমিছিল দলের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই-এর নেতৃত্বে শুরু হয়। বায়তুল মোকাররম, পল্টন, বিজয়নগর, কাকরাইল মোড় হয়ে শান্তিনগরে পৌঁছলে পুলিশ গণমিছিলের গতিরোধ করতে কাঁটাতারের ব্যারিকেট দেয়।
এ সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে দলের আমীরের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। দলের আমীরের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ও দোয়ার মাধ্যমে গণমিছিল সমাপ্ত করে সেখান থেকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ মাদানীর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারি মহাসচিব মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ ও মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন।
গণমিছিল পূর্ব জমায়েতে বক্তব্য রাখেন, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আলহাজ সৈয়দ মুসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ ইউনুছ আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, সহকারি মহাসচিব মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ ও মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, যুবনেতা মাওলানা নেছার উদ্দিন, আলহাজ আব্দুর রহমান, অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম, অ্যাডভোকেট লুৎফর রহমান শেখ, ছাত্রনেতা নূরুল করিম আকরাম, মাওলানা আরিফুল ইসলাম, মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল মজুমদার, মাওলানা সুলতান মাহমুদ, মাওলানা কামাল উদ্দিন সিরাজ। দলের কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক মাওরানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, দফতর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী ও মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাকীর পরিচালনায় গণমিছিল পূর্ব জমায়েতে আরো উপস্থিত ছিলেন, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, আলহাজ আমিনুল ইসলাম।
চরমোনাই পীর বলেন, ভারত সরকারকে মহানবী (সা.) কে নিয়ে অবমাননাকারী কুলাঙ্গারদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। শতকোটি মানুষের প্রাণের স্পন্দন মহানবী (স.)-এর সম্মানহানী করা এবং প্রতিবাদী জনতার সম্পদ বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়ার যে হিংস্রতা বিজেপি শাসিত ভারত দেখাচ্ছে তা সভ্যতার এক কলঙ্ক জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিজেপির এই বর্বরতা ভারতের ভিত্তি-শর্ত ভঙ্গ করেছে। এর পরিণতিতে ভারতের অখন্ডতা হুমকিতে পড়বে, গোটা উপমহাদেশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়বে।
বিজেপির উগ্র সাম্প্রদায়িক আচরন অব্যহত থাকলে বাংলাদেশের শান্তিকামী জনতা সকল প্রকার ভারতীয় পণ্য-সেবাকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করে সর্বাত্মক বয়কট করবে।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, সভ্যতার এই উৎকর্ষের যুগে বিজেপি যা করেছে, তা রীতিমত প্রস্তর যুগীয় বর্বরতা। এই বর্বরতা অব্যাহত থাকলে বিশ্বব্যাপী শুভবুদ্ধির মানুষ সম্মিলিতভাবে এই বর্বরদের প্রতিহত করবে।
চরমোনাই পীর দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ৯২% মুসলমান ও শতভাগ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের সরকার বিজেপির বিভৎস সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কোন নিন্দা পর্যন্ত জানাতে পারেনি। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কিছু হতে পারে না। পীর সাহেব চরমোনাই সরকারকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, অবিলম্বে চলতি সংসদেই ভারতীয় আচরনের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনুন। অন্যথায় আপনাদেরকেও বিজেপির সহযোগী বলে ধরে নেয়া হবে। চরমোনাই পীর জাতিসংঘ, ওয়াইসিসহ বিশ্ব শক্তির প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভারতের বর্বরতা রোধে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিন। অন্যথায় বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়বে তিনি আরো বলেন, জাতিসংঘ মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। ভারত নিজেদেরকে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার দাবি করলেও হিন্দু ছাড়া অন্যান্য ধর্মাবলম্বিদের ধর্ম পালন করতে দিচ্ছে না। বিশ্ব মিডিয়ায় উঠে আসছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে সে দেশের মুসলমানরা।
মাওলানা মুসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ভারতের এই হিংস্র সাম্প্রদায়িকতার কোন প্রভাব বাংলাদেশের সম্প্রীতির মধ্যে পড়বে না, ইনশাআল্লাহ। তবে ভারতকে সেজন্য মূল্য দিতে হবে।
দলের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমেদ বলেন, ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। কিন্তু যে অবস্থা চলছে তাতে ভারত মানবতার শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ফলে বাংলাদেশের জনতাও ভারতকে অপশক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে রাখবে।
-এটি