মুযযাম্মিল হক উমায়ের।। বাদশা যুদ্ধে গেলেন। দেশ জয় করবেন। দেশের সীমা বাড়াবেন। তখন তিনি বাদশা না। তিনি সৈনিক। বলছিলাম, দিল্লির সম্রাট হুমায়ুনের কথা।
শুরু করলেন যুদ্ধ। একসময় যুদ্ধের মাঠ থেকে ঝাঁপ দিলেন নদিতে। নদি ছিলো অনেক গভির। তিনি সেখানে পড়ে মরার উপক্রম হয়েছিলেন। গভিরতার কারণে বাঁচার কোনোই উপায় ছিল না। তখন বাদশার এমন অসহায় অবস্থা এক ছাগল রাখালের নজরে পড়ে। রাখাল তাকে বাঁচাতে জীবন বাজি রেখে তিনি নদিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বাদশাকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
হুমায়ুন তখনো বাদশাহী পাননি। হুমায়ুন রাখালের কৃতজ্ঞায় বলেছিলেন, রাখাল ভাই! যদি আমি দিল্লীর সিংহাসন পাই, তুমি আমার সাথে দেখা করবে। তুমি আমার কাছে যা চাইবে সেটিই উপহার হিসাবে আমি তোমাকে প্রদান করবো।
কিছুদিন পর তিনি বাদশা হলেন। এখন হুমায়ুন দিল্লির বাদশাহ। জেনে গেলেন সেই রাখালও। ঠিক করলেন আসবেন একদিন বাদশার কাছে। ওয়াদার কথা মনে আছে কি না পরীক্ষা করার জন্য। ছেড়া জামা পরে বাদশার দরবারে একদিন উপস্থিত হলেন সেই রাখাল। রাজ দরবারের গেটে এসে প্রহরীকে বললেন, আমি বাদশার কাছে যেতে চাই।
গেটের প্রহরী রাখালকে গুপ্তচর বা পাগল ভেবে শাহী মহলে প্রবেশ করাতে থেকে আটকে দেয়। বাদশাকে জানানো হলো এমন এমন লোক আপনার সাথে দেখা করতে চায়। হুমায়ুন শুনেই হুকুম করলেন সম্মানের সাথে আমার কাছে নিয়ে আসো। তাঁর মনে হয়ে গেলো সেই অসহায় দিনের কথা। মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখার দিনের কথা। রাখালের উপকারের কথা।
রাখাল অদ্ভুত বেশে হুমায়ুনের রুমে প্রবেশ করলেন। বাদশা হুমায়ুন রাখালকে দেখেই দাঁড়িয়ে পড়েন। ছুটে গিয়ে রাখালকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। বললেন, আমি ওই দিনের অনুগ্রহের গোলাম। তোমাকে দেওয়া সেই দিনের ওয়াদার কথা আমার এখনো মনে আছে। এবার বলো! তুমি কী চাও। আমি নির্দ্বিধায় তোমার চাওয়া পূর্ণ করবো। রাখাল বললেন, আমার বেশি কিছু চাওয়া-পাওয়া নেই। টাকা-পয়সা, সম্পদ-সম্পত্তি পাওয়ার আমার কোনো খায়েশ নেই। তবে আমার একটি চাওয়া আছে। সেটি হলো, ‘আমি চাই তোমাকে সরিয়ে আমি সিংহাসনে বসবো’।
বাদশা হুমায়ুন রাখালের এই কথা শোনার সাথে সাথেই নিজ মাথা থেকে শাহী মুকুট খুলে রাখালের মাথায় পরিয়ে দেন। এবং এই সংবাদটি সবাইকে জানিয়ে দিলেন। রাষ্ট্রীয় আইনের বিপরীত এমন কাজ করার কারণে বাদশা হুমায়ুন নানাভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন হলেন। এমন অদ্ভুদ কাজ করার কারণ কী সকলেই জানতে চান।
উত্তরে বাদশা হুমায়ুন বললেন, ওয়াদা খেলাফী করা কুরআন-সুন্নাহ এর বিপরীত কাজ। আমি এমন অদ্ভুদ রাষ্ট্রীয় আইনের বিপরীত কাজ করেছি তাকে দেওয়া আমার ওয়াদা রক্ষা করতে। তখন তিনি ওইদিনে ঘটে যাওয়া পুরো কাহিনী তাদেরকে শোনালেন। এবং সেইদিন তাকে দেওয়া ওয়াদার কথাও জানালেন। সেইদিনের ওয়াদা আজ রক্ষা পূর্ণ করলাম। ওয়াদা রক্ষা করা সুন্নত নিজ কাজ দ্বারা এটিও তিনি প্রমাণ করলেন।
বাদশা হুমায়ুন রাখালের নিয়োগ পরীক্ষায় পাস করলেন। রাখাল একদিন একরাত দিল্লির বাদশাহী করলেন। তারপর রাখাল হুমায়ূনকে জড়িয়ে ধরে নিজ মাথা থেকে শাহী মুকুট খুলে বাদশা হুমায়ুনের মাথায় পরিয়ে দিলেন। এবং বিদায় নেওয়ার আগে বাদশা হুমায়ুনের জন্য অনেক দোয়া দিলেন। চলে যেতে যাবেন এমন সময় বলে গেলেন, ‘আমি বড় পুরস্কার পেয়েছি। সেই পুরস্কার হলো আপনার মানবতার চরিত্রের দৃঢ়তা। ওয়াদা রক্ষা করার গুণ। কারণ, সাধারণত মানুষ উপরের স্তরে পৌঁছে যাওয়ার পর দেওয়া ওয়াদার কথা মনে রাখে না। আপনি সত্যিই মহান। উত্তম চরিত্রের অধিকারী। চেপে রাখা ইতিহাস: পৃ. ৯২
-এটি