সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


‘নিরপেক্ষ, স্বচ্চ গ্রহণযোগ্য ও সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে'

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর শায়খুল হাদীস আল্লামা ইসমাঈল নূরপুরী বলেছেন, আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ইবাদত ও খেলাফতের জন্য।

ইবাদত হলো নামাজ, রোজা, হজ্ব ও যাকাত ইত্যাদি। আর খেলাফত হলো রাষ্ট্রীয় আইন কানুন নিয়ম নীতি আল্লাহ তায়ালার বিধান ও রাসূল সা. এর সুন্নাহ অনুযায়ী পরিচালনা করা। আজকের সমাজে যে জুলুম শোষণ, অন্যায় অত্যাচার, সুদ ঘুষ ও দুর্নীতি, খুন ধর্ষণ সন্ত্রাস বিরাজমান তা একমাত্র খেলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থার অনুপুস্থিতির কারণেই। তাই সমাজে শান্তি নিরাপত্তা অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য খেলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি।

তিনি বলেন, ভারতে আমাদের প্রাণ প্রিয় রাসূল সা. ও আম্মাজান আয়েশা রা. কে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ সমালোচনা করে ক্ষমতাশীন বিজেপির মুখপাত্র ও মিডিয়া প্রধান মুসলমানদের কলিজায় আাঘাত দিয়েছে। তাদেরকে গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। ভারতের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এর নিন্দা জানানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান করেন।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা নেই। মানুষ নিরপেক্ষ স্বচ্চ ও সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনের পরিবেশ চায়। তাই সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, যুগ্মমহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, বি-বাড়ীয়া জেলা সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাওলানা মঈনুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এহসানুল হক সহ গ্রেফতারকৃত সকল ইসলামী নেতা কর্মীদের মুক্তি ও সকল মামলা প্রত্যাহার করার আহবান জানান।

তিনি আজ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সাধারণ পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ পরিষদের ৭ম অধিবেশনে উদ্বোধনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

সংগঠনের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ বলেছেন , ১১৬ জন আলেম ও ১০০০ মাদরাসার নামে যে মিথ্যা শ্বেতপত্র দুদকে জমা দেওয়া হয়েছে। তা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।

এই শ্বেতপত্র জমাদানকারীদেরকে গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। তিনি বলেন, জেল-জুলুম ও নির্যাতন করে খেলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে দমানে যাবে না। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে যে কোনো ত্যাগ তিতিক্ষার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।

ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, চাল, ডাল তেল সহ দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে। অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রন করছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যে নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট ভেঙ্গে, সরকারকে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি বলেন, দেশে আজ জুলুম নির্যাতন এবং দুর্নীতি, ব্যবিচার, খুন ধর্ষণ বেড়েই চলছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রম করলেও মানুষ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। অনেক ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের উপর হস্তক্ষেপে বিচার বিভাগ প্রশ্নবিদ্ধ। এ সকল অপকর্মের মূলৎপাটন করে একটি ইনসাফপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা পতিষ্ঠায় আমাদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন মজবুত সংগঠন ও যোগ্য নেতৃত্ব ও সুশৃঙ্খল কর্মী বাহিনী।

তিনি স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ. প্রতিষ্ঠাকালীন আমীর মোফাস্সিরে কুরআন মাওলানা আব্দুল গাফ্ফার রহ. সাবেক আমীরে মজলিস প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবীবুর রহমান রহ. অভিভাবক পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা ওবায়দুল হক রহ. সাবেক এমপি, অভিভাবক পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শায়খুল হাদীস আল্লামা আশরাফ আলী রহ., সাবেক মহাসচিব মাওলানা নিজাম উদ্দীন রহ. যিনি খেলাফত প্রতিষ্ঠার কথা বলতে বলতে ২০১৪ সালে ৫ম অধিবেশনের মঞ্চেই ইন্তেকাল করেন তাদেরসহ মরহুম নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের। যারা খেলাফত প্রতিষ্ঠার কাজ করতে গিয়ে শাহাদাত বরণ করেছেন ও নিজেদের উল্লেখযোগ্য সময় দিয়ে এ কাফেলাকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।

গুলিস্থান কাজী বশির মিলনায়তনে যুগ্মমহাসচিব মাওলানা কোরবান আলী কাসেমী, মাওলানা আব্দুল আজীজ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মুসা ও মাওলানা আবুল হাসান জালালীর যৌথ পরিচালনায় অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, প্রস্তাবনা পেশ করেন কেন্দ্রীয় অফিস ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল।

বক্তব্য রাখেন অভিভাবক পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা রফিকুর রহমান, সদস্য মাওলানা আবুল কালাম, সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, নায়েবে আমীর মাওলানা আফজালুর রহমান, মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, মাওলানা খুরশিদ আলম কাসেমী, মাওলানা আলী উসমান, মুফতি সাঈদ নূর, যুগ্মমহাসচিব মুফতি শরাফত হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ ফয়সাল, বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা নিয়ামাতুল্লাহ, সহ বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান, সহ প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা জহিরুল ইসলাম, প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা হারুনুর রশীদ ভূঁইয়া, নির্বাহী সদস্য মাওলানা জসিম উদ্দীন, মাওলানা সামিউর রহমান মুসা, মুফতি হাবীবুর রহমান কাসেমী, মাওলানা সাব্বির আহমদ উসমানী, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা আনোয়ার আলী, মাওলানা আব্দুন নূর, মাওলানা রেজাউল করীম, ঢাকা মহানগর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাওলানা নূর মোহাম্মদ আজিজী, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল মুমিন, যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় সদস্য মাওলানা ওলিউল্লাহ, ইসলামী ছাত্র মজলিসের সেক্রেটারী জেনারেল মুহাম্মদ খালেদ সাইফুল্লাহ প্রমূখ।

অধিবেশনে সারাদেশ থেকে আগত প্রায় ৫০জন ডেলিগেট বক্তব্য রাখেন।

কর্মসূচি: ১. ভারতে মহানবী সা. ও আম্মাজান আয়েশা রা. সম্পর্কে কুরুচি মন্তব্য করার প্রতিবাদ ও গ্রেফতারের দাবী ১৭ জুন শুক্রবার বাদ জুমআ দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।

২. কারাবন্দী সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক সহ সকল ইসলামী নেতা কর্মীদের মুক্তি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রন, নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা এবং ১১৬ জন আলেম,১০০০ মাদরাসার বিরুদ্ধে মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগকারীদের শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবীতে ২৯ জুন’২২ বুধবার প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। ৩. সংগঠনের কার্যক্রমকে সম্প্রসারণ ও গতিশীল করার লক্ষ্যে জেলায় জেলায় কর্মী সমাবেশ করা হবে।

অধিবেশনে ভারতে মহানবী সা. এর অবমননা কারীকে গ্রেফতার ও শাস্তি ,কারাবন্দী সংগঠনের মহাসচিবসহ আলেম-উলামাদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, আল্লাহ, রাসূল সা. ও ইসলামের বিরুদ্ধে কটুক্তিকারীদের শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান পাশ, কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা, ১১৬ জন আলেম ও ১০০০ মাদরাসার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগকারীদের শাস্তির ব্যবস্থা, নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ সুদবিহীন কৃষিঋণ, দেশে দেশে মুসলিম নির্যাতন বন্ধ, সীমান্ত হত্যা বন্ধ, ফিলিস্তিনকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র ঘোষণা, মসজিদুল আকসায় ইহুদীদের আগ্রাসন বন্ধ, খেলাফত প্রতিষ্ঠার আহবানসহ ১৩ দফা প্রস্তাব পাশ করা হয়।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ