মুফতি ইবরাহিম সুলতান।।
মুমিনদের জন্য রাসুলের প্রতি ভালোবাসা রাখা ঈমানের অনুষঙ্গ সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাঁর অনুসরণ অনুকরণ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একমাত্র অবলম্বন। রাসুলের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনে সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন সাহাবায়ে কিরাম। নবিপ্রেমের বহু দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন তাঁরা।
তাঁদের সেসব দৃষ্টান্ত থেকে পৃথিবীর সব যুগের সব মুমিনের জন্য রয়েছে অনুসরণীয় শিক্ষা।
এ লেখায় রাসুলের প্রতি সাহাবিদের অসংখ্য প্রেমময় ঘটনা থেকে একটি তুলে ধরা হলো—
আবু খায়সামা (রা.) নবীজির প্রিয় আনসারী ধনী সাহাবি। একাধিক যুদ্ধে তিনি নবীজির সঙ্গে সশরীরে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর হৃদয়জুড়ে ছিল নবিপ্রেমের স্ফুলিঙ্গ। যার প্রমাণ তাবুক যুদ্ধের ঘটনা।
হাদিসের ভাষায় ঘটনাটির বর্ণনা এরূপ, নবম হিজরির ঘটনা। রোমের বাদশাহ মদিনা আক্রমণের ষড়যন্ত্র করছিল। নবীজি সংবাদ পেয়ে তার আগমনের অপেক্ষা না করে আগে বেড়ে মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। এদিকে সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে জিহাদের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। সময়টা ছিল প্রচণ্ড গরম আর মদিনার প্রধান খাদ্য খেজুর পাকার মৌসুম। তা ছাড়া যুদ্ধের ময়দান ছিল মদিনা থেকে বেশ দূরত্বের। সব কিছু মিলিয়ে এই যুদ্ধটা ছিল অন্যান্য যুদ্ধ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এত কিছুর পরও ঈমানের উজ্জ্বলতায় কোনো কিছুই তাঁদের রুখতে পারেনি। সব বাধা-বিপত্তি, কষ্ট-ক্লেশ উপেক্ষা করে মুনাফিকরা ছাড়া সব মুমিনই এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তবে অল্পসংখ্যক মুমিন সাহাবিও বিভিন্ন কারণে মদিনায় রয়ে গিয়েছিলেন। যাঁদের মধ্যে আবু খায়সামা (রা.)-ও ছিলেন একজন।
তবে তিনি অংশগ্রহণ না করতে পারায় মনের মধ্যে ছিল যথেষ্ট অস্থিরতা। আর এই অস্থিরতা ও পেরেশানি নিয়ে একদিন তিনি নিজের বাগানে গেলেন। তখন প্রচণ্ড গরম পড়ছিল। গরমের উষ্ণতায় মনে হচ্ছিল আকাশ থেকে আগুন ঝরছে। এ অগ্নিপরিবেশে স্বামীকে শীতল পরশ দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছিল তাঁর দুই স্ত্রী। গাছের ছায়া, ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা, নরম-কোমল বিছানা, দস্তরখানের ওপর বাহারি রঙের খাবারের আয়োজন করে তাঁরা একটি মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু আবু খায়সামা (রা.)-এর মন শীতল ছায়া, ঠাণ্ডা পানি, বাহারি দস্তরখান আকর্ষণ করছিল ঠিকই; কিন্তু সেই সঙ্গে হৃদয়সাগরে এক তরঙ্গবিক্ষুব্ধ ঝড় শুরু হলো। একটি পবিত্র ভাবনার প্রচণ্ড ধাক্কা যেন সামনের বাহারি সব আয়োজন উল্টে দিল। মনের গহিনে জেগে উঠল প্রাণপ্রিয় নবী তো এই প্রচণ্ড গরমে আল্লাহর পথে সফর করে কত কষ্ট করছেন! আর আমি এখানে সুখের মঞ্চে বসে আনন্দ উপভোগ করছি!
এ ভাবনা মনে দোলা দিতেই তিনি উটে চড়ে তাবুকের পথে রওনা হয়ে গেলেন। এরই মধ্যে সাহাবায়ে কিরাম তাবুক পৌঁছে গিয়েছিলেন। নবীজি দূর থেকে দেখেই আগ্রহভরা কণ্ঠে বলেন, হয়তো আবু খায়সামা হবে। কাছে আসার পর নবীজির ধারণাই সত্য হলো। সালামের উত্তর দেওয়ার পর নবীজি বলেন, আবু খায়সামা, তোমাকে মোবারকবাদ। ধ্বংসের উপকণ্ঠ থেকে তুমি বের হয়ে এসেছ। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৭১৭৫)।
সূত্র : ইসলামী জীবন
এনটি