আবু তালহা তোফায়েল ।।
গোটা সমাজ যখন ছিলো অন্ধকারে নিমজ্জিত, খুন-ধর্ষণ, চুরি-লুণ্ঠন, অন্যায় আর অপরাধ অনায়াসে ঘটে চলত, তুচ্ছ বিবাদের জের ধরে বছরের পর বছর লেগে থাকতো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। নিজ হাতে কন্যা সন্তানকে ওরা মাটিতে জীবন্ত পুতে রাখত, কন্যা সন্তানের চিৎকারে ওদের বুকে একটুও আঁচ কাটতো না। জালিমের অত্যাচারে মজলুমদের পাশে কেউ এসে দাঁড়াত না।
এমন অন্ধকার, বিশৃঙ্খল ও দিশেহারা যখন পুরো মানবসমাজ, ঠিক এমন এক বিপদ সংকুল সময়ে এক আলোকোজ্জ্বল সূর্য উদিত হলো, যার আলোয় গোটা জগৎ আলোকিত হলো, দূরীভূত হলো জাহিলি যুগের সকল অমানিশা, পথহারা মানুষ খুঁজে পেল পথের দিশা। আর নারী লাভ করলো মা, মেয়ে, বোন কিংবা জীবন সঙ্গিনীর মর্যাদা। পথভুলা মানুষগুলো যার সান্নিধ্য লাভে পেলো মহা সৌভাগ্যবান সাহাবাদের মর্যাদা।
হ্যাঁ, মুক্তির দিশারী সেই মহামানবের কথাই বলছি, যাকে উদ্দেশ্য করে মহান রাব্বুল আলামিন বলেছেন- وما ارسلناك الا رحمة للعالمين
(আমি আপনাকে বিশ্ব জাহানের জন্য কেবল রহমত স্বরূপই পাঠিয়েছি।)
তিনিই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তিনিই প্রশংসিত মহামানব, তিনিই সমগ্র জাহানের জন্য রহমত স্বরুপ, তিনিই চিরশান্তি জান্নাতের সুসংবাদদাতা, তিনিই সবচেয়ে ভয়াবহ ও কঠিন শাস্তির স্থান জাহান্নাম সম্পর্কে সতর্ককারী।
আল্লাহুমা সাল্লি ও সাল্লিম আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মদ। যার মর্যাদা স্বয়ং আল্লাহ সকল সৃষ্টির উপর বুলন্দ করেছেন। وَ رَفَعۡنَا لَکَ ذِکۡرَکَ
তিনিই আমাদের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যার আনুগত্যই হচ্ছে আল্লাহর রাব্বুল আলামিনের আনুগত্য।
مَنْ يُّطِعِ الرَّسُوْلَ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ
(যে ব্যক্তি রাসুলের আনুগত্য করেছে সে যেনো আল্লাহরই আনুগত্য করলো)।
তিনিই আমাদের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যার অনুসরণই হচ্ছে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি ভালোবাসার গভীর প্রকাশ।
قل ان كنتم تحبون الله فاتبعوني يحببكم الله ويغفر لكم ذنوبكم والله غفور رحيم
(হে নবী আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে তোমরা আমার অনুসরণ করো, তাহলে আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহগুলোকে ক্ষমা করে দিবেন। আর আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল ও অতিশয় দয়ালু।)
তিনিই আমাদের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যার ফায়সালা মানা ছাড়া কেউ ঈমানদার হতে পারে না।
فلا و ربك لا يؤمنون حتى يحكموك فيما شجر بينهم ثم لا يجدو في انفسهم حرج مما قضيته ويسلموا تسليما
(কিন্তু না, আপনার পালনকর্তার ক্বসম, তারা ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না তাদের মাঝে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে ন্যায় বিচারক মানবে। অতঃপর আপনার মীমাংসার ব্যাপারে নিজেদের মনে কোনোরকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং সন্তুষ্টচিত্তে তা মেনে নিবে।)
তিনিই আমাদের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যাকে সমস্ত সৃষ্টির মাঝে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসাই হচ্ছে ঈমানের দাবী। তিনি ইরশাদ করেছেন-
لا يؤمن احدكم حتى اكون احب اليه من والده وولده والناس اجمعين
(তোমাদের কেউ পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার সন্তান, পিতা-মাতা এবং সকল মানুষ থেকে প্রিয় হব।)
তিনিই আমাদের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যিনি কাল কিয়ামত দিবসে আল্লাহর কাছে তাঁর উম্মতের জন্য সুপারিশ করবেন।
عن ابي هريرة رض ـ قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم لكل نبي دعوة مستجابة فتعجل كل نبي دعوته واني اختبئات دعوتي شفاعة لامتي يوم القيامة....
(প্রত্যেক নবীর জন্য একটি বিশেষ দোয়া ছিল, যা তারা নিজ নিজ উম্মতের জন্য করে গেছেন, আর আমার সে বিশেষ দোয়াটি আমার উম্মতের শাফায়াতের জন্য রেখে দিয়েছি।)
তিনিই আমাদের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যার সুমহান চরিত্রের ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেছেন-
وانك لعلى خلق عظيم
(আর নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের উপর রয়েছেন।)
তিনিই আমাদের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যিনি ছিলেন সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী, সর্বাধিক দানশীল, সবচেয়ে বেশি সাহসী, তিনি ছিলেন কুমারী নারীর চেয়ে বেশী লাজুক প্রকৃতির, তিনিই সর্বাপেক্ষা অধিক বিনয়ী৷
তিনি যখন কারও কথা শুনতেন পূর্ণ মনযোগের সাথে তা শ্রবণ করতেন, তিনি নিজ পরিবারের কাজে অন্যদের সাহায্য করতেন, নিজের কাজকর্ম নিজেই সম্পাদন করতেন, নিজ হাতে নিজের জুতো সেলাই করতেন, তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বেশী দুনিয়া বিমুখ।
তিনিই আমাদের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যিনি আপন প্রতিপালকের সর্বাধিক ইবাদাতকারী, তিনিই আল্লাহর সর্বাধিক অনুগত বান্দা, তিনি নিষ্পাপ হওয়া সত্বেও দৈনিক একশো বার তাওবা করতেন। স্বীয় পালনকর্তার ভয়ে চোখ বয়ে অশ্রু বেরিয়ে পড়তো, নামাজে দাঁড়াতে দাঁড়াতে পা মোবারক ফুলে যেত।
তিনিই পবিত্র কুরআনের সর্বাধিক বিশুদ্ধ ও সুন্দরতম তেলাওয়াতকারী, তিনিই যথাযথভাবে পবিত্র কুরআনের আহকাম পালনকারী।
তিনিই আমাদের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যিনি দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠায় নিজের রক্ত জড়িয়েছেন, জিহাদের ময়দানে শত্রুর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছেন, নিজের জীবদ্দশায় ২৭টি যুদ্ধে সশরীরে অংশগ্রহণ করেছেন, নিজে যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন। কালেমার পতাকা উড্ডীন রাখার লক্ষ্যে বহু সেনা অভিযান পরিচালনা করেছেন।
তিনিই আমাদের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আর আমরা তার গর্বিত উম্মাহ। তাঁর আদর্শই আমাদের জন্য সর্বোত্তম। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআন মাজিদে ইরশাদ করেছেন-
لقد كان لكم في رسول الله اسوه حسنه لمن كان يغزو الله واليوم الاخر وذكر الله كثيرا
(বস্তুত আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। এমন ব্যক্তির জন্য যে, আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে।)
হে প্রিয় উম্মাহ! আপনাদের প্রতি আকুল আবেদন ও সবিনয় অনুরোধ, আমরা যেনো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ অনুযায়ী নিজেদের জীবনকে সাজাতে পারি, আলোকিত সমাজ গড়তে পারি।
লেখক: সাংবাদিক।
-এটি