আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: আগামী রোববার বাংলাদেশ থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হচ্ছে। এদিন বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্সের দু’টি বিমান হজযাত্রীদের নিয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবে। এর আগে আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছরের হজযাত্রার কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।
রাজধানীর আশকোনা হজক্যাম্পে এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে অনলাইনে যুক্ত হবেন বলে জানা গেছে। আর আশকোনার হজক্যাম্পে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো: ফরিদুল হক খান এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো: মাহবুব আলী উপস্থিত থাকবেন।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৮ জুলাই (৯ জিলহজ) সৌদি আরবে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। করোনা মহামারীর কারণে গত দুই বছর বাংলাদেশ থেকে কেউ হজে অংশ নিতে পারেননি। এবার হজে সারা বিশ্বের ১০ লাখ মুসলমান অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। হজযাত্রীর এ সংখ্যা কোটা অনুযায়ী বিভিন্ন দেশের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় চার হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৩ হাজার ৫৮৫ জনসহ মোট ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন হজ পালনের জন্য সৌদি আরব যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। যদিও আগে প্রায় এক লাখ ২৭ হাজার মানুষ বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়ার সুযোগ পেতেন। তবে এবার ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের হজে অংশগ্রহণের সুযোগ দিচ্ছে না সৌদি সরকার।
হজের ব্যয় এবার বিগত বছরের চেয়ে অনেক বেশি। এ বছর সরকারিভাবে দু’টি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার সর্বনিম্ন প্যাকেজ পাঁচ লাখ ২১ হাজার ১৫০ টাকা এবং প্যাকেজ-১ এ হজে যেতে পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪০ টাকা খরচ হবে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের জন্য সাধারণ প্যাকেজ মূল্য পাঁচ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা নির্ধারণ করেছে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দাবি, সৌদি সরকার মোয়াল্লেম ফি বাড়ানোর কারণে এবার খরচ বেড়েছে। তবে হজের কোনো প্যাকেজেই কোরবানির খরচ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ জন্য প্রত্যেক হজযাত্রীকে আরো ১৯ হাজার ৬৮৩ টাকা ব্যয় করতে হবে।
হজ প্যাকেজের টাকার পার্থক্য হয় সুযোগ সুবিধার ভিত্তিতে। এ ছাড়া কাবা থেকে কাছাকাছি হোটেলের ভাড়া বেশি হওয়ায় হজ প্যাকেজের পার্থক্য হচ্ছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজ-১ এর হজযাত্রীরা পবিত্র মসজিদুল হারাম চত্বরের সীমানা থেকে সর্বোচ্চ ১০০০ মিটারের মধ্যের হোটেলে এবং প্যাকেজ-২ এর হজযাত্রীরা সর্বোচ্চ ১৫০০ মিটারের মধ্যে কোনো হোটেলে অবস্থান করবেন।
চলতি মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রী পরিবহনের জন্য ৩১ মে হজ ফ্লাইট শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু সৌদি আরবের ইমিগ্রেশন টিম ঢাকায় এসে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় তা পিছিয়ে ৫ জুন নির্ধারণ করা হয়। রুট টু মক্কা ইনিশিয়েটিভের আওতায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে শতভাগ হজযাত্রীর সৌদি আরবের ইমিগ্রেশন ঢাকায় সম্পন্ন হবে। এ জন্য সৌদি ইমিগ্রেশনের একটি দল ঢাকায় অবস্থান করছে।
এবার হজের ১২৮টি ফ্লাইট পরিচালিত হবে। এবার সৌদি এয়ারলাইন্স সাউদিয়া ছাড়াও ফ্লাইনাস নামে দেশটির আরেকটি এয়ারলাইন্স হজ যাত্রী পরিবহন করবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করবে। বিমান ৬৫টি, সাউদিয়া ৫১টি এবং ফ্লাইনাস ১২টি ফ্লাইটে যাত্রী নিয়ে যাবে। শেষ হজ ফ্লাইট ঢাকা থেকে ছেড়ে যাবে ৪ জুলাই।
এবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স নিজস্ব উড়োজাহাজ দিয়ে হজ ফ্লাইট পরিচালনা করবে। যাওয়া-আসা মিলিয়ে ৬৫টি করে ১৩০টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। বিমানের সবগুলোই ডেডিকেটেড ফ্লাইট হবে।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন, অন্যান্য বছর হজ যাত্রী পরিবহনের জন্য দুই থেকে আড়াই মাস পর্যন্ত সময় পাওয়া যেত। এবার এক মাসেরও কম সময়। প্রত্যেকবার হজের শুরুতে হজযাত্রী কত হবে সেটা অনিশ্চিত থাকে। এবারো তাই ছিল। এ কারণে দু’টি বিমান লিজ নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু এবারের যাত্রী সংখ্যা কম হওয়ায় আমাদের আর উড়োজাহাজ ভাড়া করতে হচ্ছে না।
হজের প্রস্তুতি বিষয়ে হজ অফিসের পরিচালক মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, হজযাত্রীদের সেবায় প্রস্তুত রয়েছে হজ ক্যাম্প। এখানে হজ যাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য পরীক্ষা, প্রশিক্ষণ, বাংলাদেশ অংশের ইমিগ্রেশন ও রিয়াল ভাঙাতে বিভিন্ন ব্যাংকের বুথ স্থাপন করা হয়েছে। তবে হজযাত্রীদের নিজেদের এলাকা থেকে করোনা টেস্ট করে ক্যাম্পে আসতে হবে। ক্যাম্পে করোনা টেস্টের কোনো ব্যবস্থা নেই।
স্টিকার ভিসা পায়নি বাংলাদেশ : বিগত সময়ে হজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা টিমগুলোর জন্য স্টিকার ভিসা দিয়ে থাকে সৌদি সরকার। প্রতি ১০০ হাজীর বিপরীতে একজনকে এ স্টিকার ভিসা দেয়া হয়। কিন্তু এবার কোনো স্টিকার ভিসা দেয়া হয়নি। আরবের মক্কায় অবস্থিত বাংলাদেশ হজ অফিসের কাউন্সেলর মো: জহিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, এবার বাংলাদেশের ৫৭৫টি স্টিকার ভিসা পাওয়ার কথা ছিল; কিন্তু সৌদি সরকার এবার কোনো স্টিকার ভিসা দিচ্ছে না। স্টিকার ভিসা দিলে সৌদিতে তাদের মোয়াল্লেম ফি দিতে হয় না। এতে খরচ অনেক কমে যায়। ফলে হজ টিমের সদস্য অর্থাৎ প্রশাসনিক দল, চিকিৎসক দল ইত্যাদি দলের জন্য এবার হজ মিশন সদস্য হিসেবে ভিসা নিতে হবে। এছাড়া সরকারি জিও নিয়ে যারা যাবেন তাদের এর বাইরে রাখতে হবে। অর্থাৎ তাদেরকে হজ প্যাকেজের সব খরচ দিতে হবে।
এনটি