হাফেজ মাওলানা আব্দুল মাজীদ মামুন রাহমানী।। Dream বা স্বপ্ন একটি বাস্তব বিষয়। যার বাস্তবতাকে সকল Scholar বা শাস্ত্রবিদ ও দার্শনিকরা মেনে নিয়েছেন। আর ইসলাম দিয়েছে এ বিষয়ে extensive বা বিস্তর দিকনির্দেশনা। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে...
لَهُمُ الْبُشْرَىٰ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ ۚ অর্থাৎ তাঁদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতের সুসংবাদ। সূরা ইউনুস আয়াত নং-৬৪। এই আয়াতে বর্ণিত দুনিয়ার সুসংবাদটি কি? এ সম্পর্কে হযরত উবাদাহ ইবনে সামেত রাযিআল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন ‘Good Dream বা ভালো স্বপ্ন’ যা মুসলিম ব্যক্তি দেখে অথবা তাঁর সম্পর্কে অন্য কাউকে দেখানো হয়। (তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং-২২৭৫; মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং-২২১৭৯; সুনানে দারেমী, হাদিস নং-২১৩৬)
Dream বা স্বপ্ন ৩ প্রকার
১. আল্লাহর পক্ষ থেকে Good News বা সুসংবাদ।
২. বান্দার mindfulness বা মনের খেয়াল। অর্থাৎ যা ভাবে তাই স্বপ্নে দেখে।
৩. শয়তানের পক্ষ থেকে Intimidating বা ভীতিপ্রদর্শন মূলক কিছু। (বুখারী শরীফ, হাদিস নং-৭০১৭; মুসলিম শরীফ, হাদিস নং-২২৬৩; তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং-২২৯১; আবু দাউদ শরীফ, হাদিস নং-৫০১৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-৭৫৮৬; সুনানে দারেমী, হাদিস নং-২১৪৩)
প্রত্যেক প্রকারের একটি করে Example বা উদাহরণ প্রথম প্রকারঃ- আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে সুসংবাদ।
খারাশাহ ইবনুল হুর্র রা. থেকে বর্ণিতঃ- তিনি বলেন, আমি মদীনায় পৌঁছে মসজিদে নববীতে প্রবীনদের এক মজলিসে বসলাম। একজন প্রবীন লোক তাঁর লাঠিতে ভর দিয়ে আসলেন।
লোকেরা বললো, যে ব্যক্তি কোন জান্নাতী লোক দেখে আনন্দিত হতে চায়, সে যেন এই ব্যক্তির দিকে তাকায়। তিনি খুঁটির পেছনে দাঁড়িয়ে দু’ রাক’আত সালাত আদায় করলেন। আমি উঠে গিয়ে তাঁকে বললাম, লোকেরা এই এই বলছে। তিনি বলেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, জান্নাত আল্লাহর এবং তিনি যাকে ইচ্ছা তাতে প্রবেশ করাবেন।
আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগে একটি স্বপ্ন দেখেছিলাম। আমি দেখলাম এক ব্যক্তি যেন আমার নিকট এসে আমাকে বললো, চলুন। আমি তাঁর সাথে গেলাম। সে আমাকে একটি বিরাট প্রশস্ত রাস্তায় পৌছে দিলো। আমার বাঁ দিকে একটি পথ দেখানো হলো। আমি সেই পথ ধরে অগ্রসর হতে চাইলাম। সে বললো, তুমি এ পথের উপযুক্ত নও। অতঃপর আমার ডানে একটি রাস্তা দেখানো হলো। আমি সেই রাস্তা দিয়ে অগ্রসর হলাম।
আমি একটি পিচ্ছিল পাহাড়ে পৌঁছলে সে আমার হাত ধরে আমাকে ধাক্কা দিলো এবং আমি এর চূড়ায় পৌছে গেলাম। কিন্তু আমি সেখানে স্থির হয়ে থাকতে পরলাম না। আমি এর চূড়ায় লোহার একটি খুঁটি দেখতে পেলাম। এর চূড়ায় ছিলো একটি সোনার হাতল। সে (ফেরেশতা) আমার হাত ধরে ধাক্কা দিলে আমি সেই হাতল ধরে ফেললাম। সে বললো, তুমি দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরেছ? আমি বললাম, হাঁ।
সে তাঁর পা দ্বারা খুঁটিতে আঘাত করলে আমি হাতলটি দৃঢ়ভাবে ধরে ফেললাম। তিনি বললেন, আমি ঘটনাটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে অবহিত করলাম। তিনি বলেন, তুমি উত্তম স্বপ্ন দেখেছো। বিরাট প্রশস্ত রাস্তাটি হলো হাশরের ময়দান। তোমার বাঁ দিকে যে রাস্তাটি চলে গেছে তা হলো জাহান্নামীদের রাস্তা।
তুমি জাহান্নামী নও। তোমার ডান দিক দিয়ে যে রাস্তা চলে গেছে তা হলো জান্নাতীদের রাস্তা। পিচ্ছিল পাহাড়টি হলো শহীদদের মনযিল। যে হাতলটি তুমি আঁকড়ে ধরেছিলে, সেটি হলো ইসলামের হাতল। অতঃএব তুমি আমৃত্যু এটি আঁকড়ে ধরে রাখবে। আশা করি আমি জান্নাতবাসী হবো। স্বপ্নটি দেখেছিলেন আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ)। (বুখারী শরীফ, হাদিস নং ৩৮১৩, মুসলিম শরিফ, হাদিস নং-২৪৮৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৩২৭৫)
দ্বিতীয় প্রকারঃ- বান্দার মনের খেয়াল। অর্থাৎ যা ভাবে তাই স্বপ্নে দেখার উদাহরণ। এক ব্যক্তি বাদাম বিক্রি করে। সারাদিন বাদাম বিক্রি করে রাত্রে ঘুমের মধ্যেও, অতি কম দরে বাদাম ক্রয় করে চড়া দামে বিক্রি করার স্বপ্ন দেখে।
তৃতীয় প্রকারঃ- শয়তানের পক্ষ থেকে ভীতিপ্রদর্শন মূলক স্বপ্নের উদাহরণ...
হযরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ- তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ভাষণদানরত অবস্থায় এক ব্যক্তি এসে বললো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ঘুমন্ত ব্যক্তি স্বপ্নে যা দেখে, আমিও গত রাতে তদ্রূপ স্বপ্নে দেখলাম। আমার ঘাড়ে আঘাত করার ফলে আমার মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে গেল।
আমি সেটির অনুসরণ করে তা ধরে ফেললাম এবং পুনরায় ঘাড়ে স্থাপন করলাম। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ঘুমের মধ্যে তোমাদের কারো সাথে শয়তান খেলা করলে সে যেন তা লোকের কাছে না বলে। (মুসলিম শরিফ, হাদিস নং- ২২৬৮, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং- ১৩৯৭৪)
Disliked dreams বা অপছন্দনীয় স্বপ্ন দেখলে করণীয়। অপছন্দনীয় স্বপ্ন দেখলে চারটি কাজ করবে- ১. বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলবে।
২. আল্লাহ তাআ'লার কাছে অভিশপ্ত শয়তান থেকে তিনবার আশ্রয় প্রার্থনা করবে।
৩. যে দিকে কাৎ হয়ে শুয়েছিল, সেই দিক পরিবর্তন করে অন্য দিকে কাৎ হয়ে শুইবে। (বুখারী শরীফ, হাদিস নং-৩২৯২; মুসলিম শরীফ, হাদিস নং-২২৬১; আবু দাউদ শরীফ, হাদিস নং-৫০২১; তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং-২২৭৭; মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং-২২০১৯; মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদীস নং-১৭৮৪)
৪. অপছন্দনীয় স্বপ্নটি কারো কাছে না বলে, উঠে (নফল) নামাজ পড়বে। (বুখারী শরীফ, হাদিস নং-৭০১৭; মুসলিম শরীফ, হাদিস নং-২২৬৩; আবু দাউদ শরীফ, হাদিস নং-৫০১৯; মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং-৭৫৮৬)
Best wishes বা শুভাকাঙ্ক্ষী ব্যতীত স্বপ্নের কথা কারো কাছে বলবে না। কেননা স্বপ্নের Explanation বা ব্যাখ্যা করা হলে তা বাস্তবায়িত হয়। হাদিস শরীফে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন স্বপ্নের ব্যাখ্যা না করা পর্যন্ত তা Flying Bird's বা উড়ন্ত পাখির পায়ে ঝুলন্ত বস্তু সাদৃশ। ব্যাখ্যা করা হলে তা ছিটকে পড়ে যায়।
অর্থাৎ বাস্তবায়িত হয়। অতএব Depositor বা আমানতদার এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যা সম্পর্কে পারদর্শী ব্যক্তি ব্যতীত কারো কাছে তা ব্যক্ত করবেনা। ( তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং-২২৭৮; আবু দাউদ শরীফ,হাদিস নং-৫০২০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৫৭৪৯; সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২১৪৮)
অনর্থক বানিয়ে False Dreams বা মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করবে না। কেননা যে ব্যক্তি এরূপ করবে তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে কঠোর Warnings বা হুঁশিয়ার বাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে, যে ব্যক্তি মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করবে, তাকে জবের দুটি দানার মধ্যে গিট লাগাতে বাধ্য করা হবে এবং এজন্য তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। (তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং-২২৮৩; আবু দাউদ শরীফ, হাদীস নং-৫০২৪ মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২২১৪)
যে ব্যক্তি যে পর্যায়ের সত্যবাদী, তাঁর স্বপ্ন তেমনই হয়। হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, শেষ জামানায় মুমিন ব্যক্তির স্বপ্ন কদাচিৎ Unreal বা অবাস্তব হবে। তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অধিক সত্যবাদী তাঁর স্বপ্ন ও অধিক সত্য হবে (বুখারী শরীফ, হাদীস নং-৬৯৮৩; মুসলিম শরীফ, হাদিস নং-২২৬৩; তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং-২২৭০; আবু দাউদ শরীফ, হাদিস নং-৫০১৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-৭১২৮)
স্বপ্নে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দর্শন লাভ। প্রতিটি মুমিনের আকাঙ্ক্ষা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখা। বর্তমানে সরাসরি দেখা সম্ভব না হলেও স্বপ্নে দেখা সম্ভব।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখল সে আমাকেই দেখলো। কেননা শয়তান আমার সাদৃশ্য ধারণ করতে পারে না। বুখারী শরীফ, হাদিস নং-১১০; মুসলিম শরীফ ,হাদিস নং-২২৬৬; আবু দাউদ শরীফ, হাদিস নং-৫০২৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৭১২৮)
-এটি