হাফেজ মাওলানা আব্দুল মাজীদ মামুন রাহমানী
পূর্বেকার নবী-রাসূলগণ এবং তাদের উম্মতেরা Long Life বা দীর্ঘ হায়াত লাভ করত। ফলে তাঁরা মহান আল্লাহ তায়ালার Worship বা ইবাদত করার সময় বেশি পেত।
হাদীস শরীফে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনি ইসরাইলের এক ব্যক্তির ব্যাপারে বললেন যে, সে এক হাজার মাস আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে। তাফসির ইবনে কাসির,৮/৪৪২-৪৪৩; বাইহাকী শরীফ (কুবরা), হাদিস নং-৮৩০৫
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনী-ইসরাঈলের ৪ ব্যক্তির কথা আলোচনা করলেন। তিনি বললেন যে তাঁরা ৮০ বছর আল্লাহ তাআ'লার Worship বা ইবাদত- বন্দেগী করেছে। এক মুহূর্তের জন্যও তাঁর Disobedience বা অবাধ্যতা করেনি। এরপর তিনি হযরত আইয়ুব আলাইহিস সালাম, হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইউশা ইবনে নূন আলাইহিস সালামের কথা উল্লেখ করলেন। এতে সাহাবায়ে কেরাম Surprised বা বিস্মিত হলেন। তাদের মনে প্রশ্ন উদিত হলো, তাহলে আমরা আমাদের ৬০-৭০ বছরের জিন্দেগীতে কিভাবে ইবাদাত-বন্দেগীর দিক দিয়ে তাঁদের সমান হতে পারবো?
এমন সময় হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম এসে হাজির। তিনি আরজ করলেন হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এদের ৮০ বছরের ইবাদত ও এক মুহূর্তের জন্য Disobedience বা নাফরমানি না করার কথা শুনে আপনার উম্মত বিস্মিত হচ্ছে? আল্লাহ তা'আলা এর চেয়ে উত্তম বিষয় আপনাদেরকে দান করেছেন। এরপর তিনি সূরা আল-ক্বদর তেলাওয়াত করলেন। যার Summary বা সারসংক্ষেপ হচ্ছে, আপনার উম্মতের এক রাতের ইবাদত তাদের হাজার মাস ইবাদত করার চেয়েও উত্তম। এতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামগণ রাদিয়াল্লাহু আনহুম খুবই আনন্দিত হলেন। তাফসিরে ইবনে কাসীর,৮/৪৪৩; দুররে মানসুর,৮/৫৬৯
শুধু কদরের রাত্রির আমলই নয় বরং আরও অসংখ্য এমন আমল উম্মতে মুহাম্মদীকে দান করা হয়েছে, যেগুলো করতে হয়তো অল্প সময় লাগে। কিন্তু এর ফজিলত অনেক বেশি। অতএব আমাদের জন্য করণীয় হচ্ছে এই ছোট ছোট ফজিলত পূর্ণ আমল গুলো করে নিজেকে শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে আরশের মালিক এর সামনে পেশ করা।
পর্যায়ে আমরা এমনই কয়েকটি ফজিলতপূর্ণ আমলের কথা উল্লেখ করব।
১.কোন ব্যক্তি যদি বাজারে গিয়ে নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করে, তাহলে আল্লাহ তা'আলা তাঁকে এক লক্ষ নেকি দান করবেন এবং এক লক্ষ গুনাহ মাফ করে দিবেন, এক লক্ষ মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন, জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করে দিবেন।
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ حَيُّ لَا يَمُوتُ بيَدِه الخَيرُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيءٍ قَديرٌ.
উচ্চারণঃ- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মুলকু, ওয়ালাহুল হামদু, ইহ্য়ী ওয়াইমীতু, ওয়াহুয়া হাইয়্যুন লা ইয়ামূতু, বিয়াদিহিল খাইরু। ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।
অর্থঃ- আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই, সকল ক্ষমতা তাঁরই, সমস্ত প্রশংসা তাঁর জন্য, তিনি প্রাণ দান করেন ও মৃত্যু দেন। তিনি চিরঞ্জীব, তিনি কখনো মৃত্যুবরণ করবেন না। তাঁর হাতেই মঙ্গল এবং তিনি সব সময় প্রত্যেক বস্তুর উপর ক্ষমতার অধিকারী।
(তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং-৩৪২৮; ইবনে মাজাহ শরীফ, হাদিস নং-২২৩৫; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-১৯৭৪; কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৯৩২৮;জামিউল উলূমি ওয়াল হিকাম,২/৩১৫)
২. কোন ব্যক্তি যদি খুব ভালো করে অজু করে কালিমায়ে শাহাদাত ও নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করে, তবে জান্নাতের সবগুলো দরজাই তাঁর জন্য খুলে দেওয়া হবে। যে দরজা দিয়ে সে ইচ্ছা করবে সে দরজা দিয়েই প্রবেশ করতে পারবে।
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ
উচ্চারণঃ- আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারীকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু। আল্লাহুম্মাজ্আলনী মিনাত্তাওয়াবীন, ওয়াজ্আলনী মিনাল মুতাত্বহ্হিরীন।
অর্থঃ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা এবং রাসূল। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে তওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের মধ্যে শামিল করুন।(মুসলিম শরীফ, হাদিস নং-২৩৪,৫৭৭; তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং-৫৫; বায়হাকী শরীফ(কুবরা), হাদিস নং-৩৭৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদিস নং-৩০৫১৭; মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস নং-৭৩১; তাবারানী(আউসাত), হাদিস নং-৪৮৯৫; কানযুল উম্মাল, হাদিস নং-২৬৮৩)
৩. জুমুআর দিন ৬ টি কাজ করলে, জুমুআর নামাজে যাওয়ার পথে প্রতি কদমে (পা ফেলায়) দীর্ঘ এক বছর ব্যাপী দিনের বেলায় রোজা রাখা ও রাতের বেলায় নফল নামাজ পড়ার সমান সওয়াব পাবে।
৬ টি কাজ হচ্ছে.....
১. জুমার নামাযের উদ্দেশ্যে ভালোভাবে গোসল করা।
২. ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে আজানের অপেক্ষা না করে মসজিদে যাওয়া।
৩ . পায়ে হেটে মসজিদে যাওয়া।
৪. ইমাম সাহেবের নিকট বসা। অর্থাৎ যতদূর সম্ভব সামনের কাতারে বসা।
৫. মনোযোগ সহকারে খুতবা শ্রবণ করা।
৬. খুতবার সময় কোন কথা না বলা ও কোন কাজ না করা।(আবু দাউদ শরীফ, হাদিস নং-৩৪৫; তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং-৪৯৬; নাসায়ী শরীফ, হাদিস নং-১৩৮১; ইবনে মাজাহ শরীফ, হাদিস নং-১০৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-১৫৭২৮; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং-১৭৫৮)
৪. খাবারপর নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করলে পূর্বাপর সমস্ত (সগীরা) গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।
الحَمدُ للهِ الَّذي أطعَمَني هذا الطَّعامَ ورزَقَنيه مِن غيرِ حولٍ منِّي ولا قوَّةٍ
উচ্চারণঃ-আলহামদুলিল্লাহিল্লাযী আত্আমানী হা-যাত্ত্বআমা ওয়া রাযাক্বানীহি মিন গাইরি হাওলীন মিন্নী ওয়ালা ক্বুওয়াতিন।
অর্থঃ- সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য, যিনি আমাকে এই খাদ্য খাওয়ালেন এবং আমার পক্ষ থেকে কোনো কৌশল ও ক্ষমতা প্রয়োগ ব্যতীতই রিজিক দান করলেন।(আবু দাউদ শরীফ, হাদিস নং-৪০২৩; তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং-৩৪৫৮; ইবনে মাজাহ শরীফ, হাদিস নং-৩২৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-১৫৬৭০; বাইহাকী শরীফ,(শুআবুল ঈমান, হাদিস নং-৬২৮৫)
৫. কোন ব্যক্তি যদি নিম্নোক্ত দরুদ শরীফটি জুমু'আর দিন আসরের নামাজের পর নিজ স্থানে বসে ৮০ বার পাঠ করে, তাহলে পাঠকারীর আমল নামায় ৮০ বছরের ইবাদত-বন্দেগীর সওয়াব লেখা হয় এবং ৮০ বছরের (সগীরা) গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।
’’أَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰی مُحَمَّدِ نِ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ وَ عَلٰی آلِهِ وَ سَلِّمْ تَسْلِیْماً উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি, ওয়ালা আলিহী ওয়াসাল্লিম তাসলিমা।
অর্থঃ- হে আল্লাহ! দরুদ ও শান্তি বর্ষণ করুন উম্মী নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর।(ত্ববরানী,৩/১২২; ইবনু বাশকুয়াল,আল ক্বাওলুল বাদী ফিস সালাতি ওয়া সালামি আলাল হাবীবিশ শাহী, পৃষ্ঠা নং-২৮৪)
-এটি