সন্তান চাওয়া মাত্রই আমরা মোবাইল তাদের হাতে দিয়ে দেই। তারাও দেখছে ভিডিও। বিভিন্ন কার্টুনসহ নানান ভিডিও। কিন্তু এ ব্যাপারে অভিভাবকরা সচেতন কতটুকু। কি দেখছে বাচ্চা। খেয়াল রাখা সম্ভব কি? সম্ভব হলেও কতটুকু খেয়াল করছি। প্রযুক্তির ব্যবহারে সারাক্ষণ বসে থেকে পাহারা দেয়া সম্ভব নয়। আর তাই প্রয়োজন এমন কিছু পদক্ষেপ যা শিশু-কিশোরদের হাতে নিশ্চিন্তে মোবাইল এবং ডিজিটাল ডিভাইসগুলো দেয়া যায়। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছেন আতা হাসিন।
প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে তরুণ প্রজন্মরা ভাবনা শুরু করেছে এটা হলো সবচেয়ে বড় ব্যাপার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বাংলাদেশের কিছু তরুণ শিশু-কিশোরদের নিয়ে তৈরি করেছে ইউটিউবের মতো একটি অ্যাপ। যার নাম বেবিটিউব। চলুন এ প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারে তরুণ প্রজন্মের ভাবনা জেনে আসা যাক।
কখন বেবিটিউব করার ধারণা এলো জানতে চাইলে বেবিটিউবের প্রতিষ্ঠাতা শামীম আশরাফ বলেন, আমি যখন 'মেন্টর মশাই' নিয়ে কাজ করি তখন দেখলাম শিশু-কিশোররা ইন্টারনেট প্রচুর ব্যবহার করছে। ব্যবহারের মাত্রা দিনদিন বাড়ছে৷ আমার পরিবারেও একই অবস্থা।
আমরা সচেতনতামূলক কাজ শুরু করি কয়েকজনে মিলে মেন্টর মশাই সংগঠন নিয়ে৷ কিন্তু পরে মাথায় আসে তাদের যে শিশু-কিশোররা ভিডিও দেখে বেশি। সেখান থেকে ভাবনা আসে তাহলে বাচ্চাদের জন্য আলাদা একটি ভিডিও শেয়ারিং সাইট তৈরি করা যায় কিনা। যেখানে তারা নিরাপদে ভিডিও দেখতে পারবে।
আর তখন আমি এবং আমার টিম ২০২০ এর সেপ্টেম্বর মাসে কাজ শুরু করি। সাজ্জাদ পুরো সাইট এবং অ্যাপ সম্পূর্ণ করেন।
সহ-প্রতিষ্ঠাতা সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, যেকোনো বয়সের যে কেউ এই সাইটে ভিডিও আপলোড করতে পারবেন। তবে বেবিটিউবে শিশুদের বিকাশের পথে বাধা হয়, এমন কোনো ভিডিও দেয়া যাবে না। এর কারণ হচ্ছে, প্রতিটি শিশু নিরাপদে ইন্টারনেটের আওতায় থাকতে পারে এবং অভিভাবকরাও যেনো হতে পারেন নিশ্চিন্ত। সে কারনেই বেবিটিউবে শিশু-কিশোরদের জন্য ক্ষতিকারক ভিডিও থাকবে না।এ বিষয়ে সার্বক্ষনিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমের অনুমোদনের পরই স্বল্প সময়ের মধ্যে অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের ভিডিওটি আপলোড করা হবে। শিশুদের উপযোগী সব ক্যাটাগরির ভিডিও আপলোড করা যাবে।
বেবিটিউবের সিওও রবিউল ইসলাম বলেন, আজকের শিশু-কিশোররা মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার বান্ধন। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রায় সব শিশু কিশোররা মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারে বেশ আগ্রহী। আর তাই অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা; তাদের সন্তান যেনো কোনোভাবেই খারাপ কিছুতে জড়িয়ে না যায়? তাদের দুশ্চিন্তার অবসান ঘটাতেই বেবিটিউবের উদ্যোগ। আমরা চাই প্রতিটি শিশু-কিশোর প্রযুক্তির দুনিয়ায় সুস্থ থাকুক। সে সুস্থতা নিশ্চিত হোক আমাদের মাধ্যমে। শিশু-কিশোরদের নিরাপদ রাখতে পারলে ভবিষ্যৎ সুন্দর হবে৷
বেবিটিউবের সুবিধা পাওয়া সম্পর্কে হেড অব পিআর মাইনুল ইসলাম বলেন, বেবিটিউবে একসঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে খেলাধুলা, কার্টুন, পড়াশোনা, মুভি, নাটক, গেম, গান, গজল, ট্রাভেল, ব্লগ, টেকনোলজিসহ শিশু-কিশোরনির্ভর সকল ধরনের কনটেন্ট। দিন দিন বাড়ছে শিশু-কিশোরদের মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে বেশির ভাগ শিশু-কিশোরই এখন ইন্টারনেটে সময় কাটাতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে।
বিনোদনের মাধ্যম হিসেবেও ইউটিউবে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। তবে অনেক সময় দেখা যায়, আপত্তিকর অনেক ভিডিও তাদের সামনে চলে আসে। অভিভাবকরাও এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। তবে আর চিন্তার কারণ নেই বেবিটিউবে একসঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে শিশু-কিশোরদের জন্য নিরাপদ, মজাদার এবং শিক্ষণীয় ভিডিও।
হেড অব এইচআর আবির আহমেদ বলেন, বেবিটিউব একটি ভিডিও শেয়ারিং সাইট। এটি একটি অ্যাপ যেখানে ভিডিও কনটেন্ট তৈরী করে আপলোড করা যাবে। শর্ত শুধু একটাই কনটেন্ট গুলো হতে হবে শিশুকিশোর ভিত্তিক। বেবিটিউবে সহজ শর্তে মনিটাইজেশান সিস্টেম আছে কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য। যারা শিশুতোষ কন্টেন্ট আপলোড করবে তারা বেবিটিউব থেকে মনিটাইজেশানের মাধ্যমে আয় করার সুযোগ পাবে।
ফেসবুক, টুইটার, ইনস্ট্রাগ্রাম, লিংকড-ইন, বেবিটিউব ফেসবুক পেইজ, ওয়েবসাইট এবং অ্যাপস এ প্রায় দুই লাখ মানুষ যুক্ত রয়েছে। বেবিটিউব (BabyTube) অ্যাপ মানুষ ব্যবহার করছে গুগল প্লেস্টোর থেকে ডাউনলোড করে। বেবিটিউবের পিছনে কাজ করছে একদল উদ্যোমী তরুণ দল।
হেড অব প্রজেক্ট ওয়াশিমুল রাফিন জানান, আমরা যখন দেখেছি শিশু-কিশোররা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বাবা মায়ের কথা অমান্য করা। সামাজিক অবক্ষয়, কিশোর গ্যাংসহ নানান অপরাধে শিশু-কিশোরদের নাম। আমরা বিভিন্ন শিশু-কিশোর এবং অভিভাবকদের উপর জরিপ করি।
জরিপ করে ফেলাম শিশু-কিশোরদের অপরাধের অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে ঝুকিপূর্ণ ইন্টারনেট ব্যবহার। ইন্টারনেটে অনেক খারাপ কন্টেন্ট থাকে। যা শিশু-কিশোরদের জন্য নিরাপদ নয়। এসব কন্টেন্ট দেখে শিশু-কিশোররা অনুকরণ করে। উৎসাহীত হয়। এবং বাজে কাজে জড়িয়ে পরে।
এইচআর ম্যানেজার সজিবুর রহমান বলেন, বেবিটিউবে শিশু-কিশোরদের জন্য নিরাপদ, মজাদার এবং শিক্ষণীয় ভিডিও শেয়ার করার সুযোগ রয়েছে। অ্যাপের পাশাপাশি সেবা পাওয়া যাবে বেবিটিউবের প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইটেও। বয়সভেদে যে কেউ এই সাইটে ভিডিও আপলোড করতে পারবেন। তবে বেবিটিউবে শিশুদের মানসিক বিকাশের পথে বাধা হয়, এমন কোনো কন্টেন্ট আপলোড করা যাবেনা। এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করেছে বেবিটিউবের টেকনিক্যাল টিম।
নতুন প্রজন্ম নিরাপদ না থাকলে দেশ নিরাপদ থাকবে না ভবিষ্যত ও নিরাপদ ও হবেনা। তাই আসুন আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে নিরাপদ রাখতে তাদের সুন্দর সুস্থ নিরাপদ,শিক্ষণীয় ও বিনোদন মূলক একটা প্লাটফর্মে যুক্ত করি।
-এটি