সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


ইতিকাফের প্রয়োজনীয় মাসাআলা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি তানভীর সিরাজ।।

১। রমজান মাসের শেষ দশকের ইতিকাফ অবস্থায় সাধারণ গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েয নেই। বের হলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।

সুতরাং কোনো ব্যক্তি সাধারণ গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়ার কারণে তার সুন্নত ইতিকাফ নষ্ট হয়ে গেছে। যেদিন গোসলের জন্য বের হয়েছে ঐ দিনের ইতিকাফ কাযা করে নেওয়া জরুরি। আর এই ইতিকাফটি নফল ইতিকাফ হিসাবে গন্য হবে। (মারাকিল ফালাহ ৩৮৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১২)

২। রমজানের শেষ দশদিনের ইতিকাফে রোজা থাকে, তাই তাতে আর রোজা রাখার প্রয়োজন নাই। অন্যথায় ওয়াজিব ইতিকাফে রোজা রাখা শর্ত।

৩। মুস্তাহাব ইতিকাফের মধ্যেও ইহ্তিয়াতান (সচেতনতামূলক) রোজা র্শত, তবে নির্ভরযোগ্য মত হলো শর্ত না। (মন্তব্য: ওয়াজিব ইতিকাফে রোজা শর্তই শর্ত, যাতে কোনো সন্ধেহ নেই। আর সুন্নত ইতিকাফেও রোজা শর্ত, যেহেতু র্পূণদিন পাওয়া যায় আর মুস্তাহাব ইতিকাফে যেহেতু একমিনিট আধা মিনিটও হতে পারে, আর রোজা তো একমিনিট, আধামিনিট হয় না, তাই মুস্তাহাব ইতিকাফে রোজা র্শত নয়।)

৪। ওয়াজিব এতেকাফে কমপক্ষে একদিনের নিয়ত করতে হবে। বেশিও হতে পারে। আর সুন্নত মুয়াক্কাদা ইতিকাফ রমজানের শেষ দশদিনে হয় আর মুস্তাহাব ইতিকাফের জন্য নিদৃষ্ট কোন সময় নাই। হতে পারে একমিনিট, বরং তার চেয়ে কম-বেশি সুতরাং যতক্ষণ মসজিদে অবস্থান করবে ততক্ষণের নিয়ত করতে পারে।

৫। এতেকাফের মধ্যে দু’প্রকার (কাজ-র্কম) হারাম। র্অথাৎ যেগুলো করলে ওয়াজিব আর সুন্নত ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যায়। যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে কাযা করা লাগবে।

আর কাজা থেকে উদ্দেশ্য হলো, যে সমস্ত দিন ইতিকাফ নষ্ট হয়ে গেছে, ঐসমস্ত দিনের কাযা দিবে। ওয়াজিব ইতিকাফের কাযা ওয়াজিব আর সুন্নতের কাযা সুন্নত। রমজানের ইতিকাফের কাযার জন্য রমজান হওয়া র্শত নয়, তবে রোজা হওয়া র্শত। যেহেতু রোজার সময়ের কাযা।

যদি মুস্তাহাব ইতিকাফ হয় তাহলে কোনো সমস্যা নেই আর মুস্তাহাব এতেকাফের জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় নাই বলে কোনো কাযাও নাই।

৬। ভুলেও নিজের ইতিকাফের মসজিদকে একমিনিট, কিংবা আরো কম সময়ের জন্য ছেড়ে দেয়া না-জায়েজ।

৭। ইতিকাফ থাকা অবস্থায় অপ্রয়োজনীয় দুনিয়াবী কোনো কাজে ব্যস্ত হওয়া মাকরূহে তাহরীমি। যেমন, অপ্রয়োজনীয় বেচা-কেনা আর ব্যবসার মধ্যে লিপ্ত হওয়া। তবে হাঁ, যা না করলেই নয়, এমন হলে ভিন্নকথা। যেমন, ঘরে খাবার নাই আর সে ছাড়া উপযুক্ত অন্যকেউ নাই, তাহলে ইতিকাফকারী বেচা-কেনা করতে পারে।

অপারগতার কারণে সে বেচা-কেনা করতে পারবে, তবে মসজিদে কোন জিনিস বা মালামাল উপস্থিৎ করা কোন অবস্থাতেই বৈধ নয়। এ র্শতে যে, মসজিদ যেন ময়লা-আর্বজনা যুক্ত না হয়। যদি ময়লা-আর্বজনা যুক্ত না হয় তাহলে অনেকের মতে জায়েজ আছে। (মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ.,বেহেশতী গৌহর,পৃ:১৩২-৩৫)

৮। বিনিময় নিয়ে ইতিকাফ করা বা করানো সম্পূর্ণ না-জায়েয। কারণ ইতিকাফ একটি ইবাদত। আর ইবাদতের বিনিময় দেওয়া-নেওয়া না-জায়েয। বিনিময়ের মাধ্যমে ইতিকাফ করলে সুন্নতে মুয়াক্কাদা (কেফায়া) আদায় হবে না। ফলে এলাকাবাসী সবাই সুন্নতে মুয়াক্কাফা কেফায়া আদায় না করার কারণে গোনাহগার হবে। (জামে তিরমিজি ১/৫১; তাবয়িনুল হাকায়েক ৬/১১৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৪; মাবসূত,সারাখসি ১৬/৩৭)

৯। ইতিকাফরত ব্যক্তি যদি অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণে বাড়িতে চলে আসতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তিকে একদিনের ইতিকাফ কাযা করতে হবে। আর তা পরের রমযানেও কাযা করা যাবে। এজন্য যেকোন একদিন সূর্যাস্তের পর থেকে পরের দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত মসজিদে ইতিকাফ করবে। অবশ্য রমযানের বাইরে ইতিকাফ কাযা করতে চাইলে দিনের বেলা নফল রোযাও রাখতে হবে। (রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৪-৪৪৫; আহকামে ইতিকাফ ৫০)

১০। ইতিকাফ অবস্থায় কোনো মহিলার মাসিক শুরু হয়ে যায়। এখন তার করণীয় হল, মাসিক শুরু হওয়ার কারণে তার ইতিকাফ ভেঙ্গে গেছে।

যে দিন মাসিক শুরু হয়েছে শুধু সেই একদিনের ইতিকাফ কাযা করে নেওয়া জরুরি। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৭; জামিউর রুমুয ১/৩৮৫; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৫; আলজাওহারা পৃ. ১৮৬; ফাতাওয়া রহীমিয়া ৭/২৮৬)

লেখক: সংকলক, সমাজকর্মী ও প্রাবন্ধিক

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ